প্রিয় বন্ধুগণ, আমার এই লেখাটি মনযোগ দিয়ে পড়ুন।
তাহলে বুঝতে পারবেন কীভাবে চিকিৎসক ও ড্রাগ প্রমোটাররা ভালো মানুষকে রোগী বানিয়ে ছাড়ে।
বনিবনা না হওয়ার কারণে সাত বছর সংসার করার পর আমার বিদেশি বন্ধু আলেক্স ও তার স্ত্রীর মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেল। আলেক্স দুঃখ-কষ্ট ও হতাশায় ভেঙে পড়ল। কয়েকদিন যেতে না যেতেই আলেক্স মাতাল হয়ে বাড়ি ফিরতে শুরু করল। তার বাবা-মা চিন্তিত হলেন। তারা অবশেষে আলেক্সকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলেন। চিকিৎসক তাকে কড়া বিষাদগ্রস্ততার ওষুধ (Antidepressant) দিলেন। আলেক্সের সমস্যাটি পারিবারিক। চিকিৎসকের বদৌলতে তার পারিবারিক সমস্যা নিমিষে একটি বড় ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যায় পরিণত হয়ে গেল। এ ধরনের ঘটনা হরহামেশাই এত সহজ ও স্বাভাবিকভাবে ঘটে যায় যে তা কেউ লক্ষ করে না এবং শেষ পর্যন্ত এর পরিণতি কী হতে পারে তাও কেউ উপলব্ধি করতে পারে না। আলেক্সের পারিবারিক সমস্যাটি পারিবারিকভাবে সমাধান না করে ওষুধের ওপর নির্ভরশীল করে দিয়ে তাকে পুরোদস্তুর রোগী বানিয়ে ফেলা হলো। সে একজন নিয়মিত ওষুধ খরিদ্দারে পরিণত হলো।
.
বিশ্বায়নের যুগে পুঁজিবাদী ও ভোগবাদী সমাজব্যবস্থায় বাস করতে গেলে দৈনন্দিন জীবনে প্রতিনিয়তই আমাদের এ রকম হাজারও পারিবারিক ও সামাজিক সমস্যা মোকাবিলা করতে হয়; যা দৈনন্দিন জীবনে ঘটতে পারে বা ঘটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার অন্তর্গত, তার মোকাবিলায় আমাদের শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতি থাকা জীবনেরই একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। জীবনের এ ধরনের ঘটনাপ্রবাহে ওষুধ গ্রহণ বা প্রদান করা হলে আমাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। প্রথমত, অপরীক্ষিত অবস্থায় যদি একজনকে একটি ওষুধ প্রেসক্রাইব করা হয়, সেটা কাজ করবে কিনা তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। যে ওষুধ জটিল ক্লিনিক্যাল বিষাদগ্রস্ততার উপসর্গে ব্যবহার করা হয়, তা সাধারণত দুঃখ-কষ্ট ও হতাশা দূরীকরণে বা উপসমে কাজ করবে এমন নিশ্চয়তা চিকিৎসাবিজ্ঞান দেয় না। এ ধরনের একটি অপরীক্ষিত ওষুধের ব্যবহারকে অফ লেভেল ব্যবহার বা অননুমোদিত ব্যবহার হিসাবে গণ্য করা হয়। দ্বিতীয়ত, ওষুধ গ্রহণের আগে ওষুধের উপকারিতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ভারসাম্য নির্ণয় করতে হয়, যাকে আমরা রিস্ক-বেনেফিট রেশিও বলে থাকি। কার্যকর ও নিরাপদ ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যত কম হবে, রোগীর জন্য ততই মঙ্গল। ক্যানসার, এইডস বা হৃদরোগে ব্যবহৃত অনেক ওষুধের রিস্ক-বেনেফিট রেশিও মার্জিনাল হওয়া সত্ত্বেও জীবন রক্ষার জন্য এসব ওষুধ ব্যবহার করতে হয়। দৈনন্দিন জীবনের পারিবারিক ও সামাজিক সমস্যাকে স্বাস্থ্য সমস্যা হিসাবে আখ্যায়িত করে ওষুধ প্রদান করলে মূল সমস্যা ঢাকা পড়ে যায় এবং কোনোদিন এর সমাধান হয় ন
কানাডায় প্রেসক্রিপশন ওষুধের বিজ্ঞাপন প্রচার নিষিদ্ধ; কিন্তু পার্শ্ববর্তী দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তা বৈধ। সেখানে প্রেসক্রিপশন ড্রাগের বিজ্ঞাপন প্রচার হলে অসংখ্য টেলিভিশন চ্যানেল ও ম্যাগাজিনের মাধ্যমে কানাডার মানুষ তা অনায়াসে দেখতে পায়। ওষুধের বিজ্ঞাপন দেখলে বা ভাষা পড়লে স্বাভাবিক জীবন আর স্বাস্থ্য সমস্যার মধ্যে পার্থক্য দুর্বোধ্য হয়ে ওঠে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রয়াত সাংবাদিক লিন প্যায়ার ওষুধ কারবারিদের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছিলেন, এরা ওষুধ বিক্রির স্বার্থে ভালো মানুষকে অসুস্থ এবং কিঞ্চিৎ অসুস্থ মানুষকে পুরোদস্তুর অসুস্থ মানুষ হিসাবে প্রমাণ করতে সব রকম কারসাজির আশ্রয় নেয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা মানুষকে বোঝাতে সক্ষমও হয়। অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ওষুধের বিজ্ঞাপন প্রচার শুধু ওষুধ বিক্রির জন্যই করা হয় না, তারা মানুষকে এও বোঝাতে চেষ্টা করে যে, বিষাদগ্রস্ততা মস্তিষ্কের নার্ভকোষে প্রাকৃতিক রাসায়নিক যৌগের ভারসাম্যহীনতার জন্যই উদ্ভব হয় এবং ওষুধ এ ভারসাম্যহীনতা দূর করে মানুষকে সুস্থ করে তোলে। কিন্তু বিজ্ঞাপনের এ ধরনের জৈবিক বিশ্লেষণ কতটুকু যুক্তিযুক্ত? বিজ্ঞানী জেফরি লাকাস ও জনাথন লিও মস্তিষ্কের রসায়ন ও বিষাদগ্রস্ততার মধ্যে যোগসূত্র প্রমাণ পুনর্মূল্যায়নে সচেষ্ট হন। তারা এ তত্ত্বের সমর্থনে একটিও বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ বা তথ্য খুঁজে পাননি। তারা আরও বিস্তৃতভাবে বর্ণনা করেন, এমন একটিও বৈজ্ঞানিক তথ্য বা তত্ত্ব খুঁজে পাওয়া গেল না, যা সমর্থন করে যে, মস্তিষ্কে সেরোটনিনের ঘাটতির কারণেই মানসিক অসুস্থতার সৃষ্টি হয়। কিন্তু ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ওষুধ কোম্পানিগুলোকে বিজ্ঞাপন প্রচারে অনুমতি দিল, যাতে লেখা থাকবে- মস্তিষ্কে রাসায়নিক ভারসাম্যহীনতা ‘সম্ভবত’ বিষাদগ্রস্ততা উৎপত্তির কারণ। এখানে ‘সম্ভবত’ শব্দটি খুবই গুরুত্ব বহন করে। কোনো বাক্যে বা উক্তিতে ‘সম্ভবত’ শব্দটি ব্যবহার করা হলে তা বৈজ্ঞানিক সত্য বলে প্রমাণিত হয় না। অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট মস্তিষ্কের রাসায়নিক পরিবর্তন সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখতে পারে। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, বিষাদগ্রস্ততা মস্তিষ্কে রাসায়নিক ভারসাম্যহীনতার ফল। কম কথা বলা একজন লাজুক মানুষকে মদ খাওয়ালে তার মুখ দিয়ে কথার খৈ ফুটবে। এর অর্থ কি এই যে, ওই লাজুক মানুষটির শরীরে অ্যালকোহল বা মদের ঘাটতি রয়েছে? আরও একটি উদাহরণ দিই।
.
প্যারাসিটামল খেলে মাথাব্যথা সারে। এর অর্থ এই নয় যে, কারও মস্তিষ্কে প্যারাসিটামলের ঘাটতি রয়েছে। অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট প্রদান করলে মেজাজ পরিবর্তন হয়, হতাশার উপসর্গগুলোর উন্নতি হয়। কিন্তু সেটা ওষুধের কারণে নাকি মনস্তাত্ত্বিক কারণে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। পরীক্ষায় দেখা গেছে, অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট প্রদান করলে দশজন মানুষের মধ্যে ছয়জন ভালো বোধ করেন। অন্যদিকে প্ল্যাসিবো (যে ওষুধে কোনো সক্রিয় উপাদান নেই, যেমন সুগার পিল) প্রদান করলেও দশজনের মধ্যে অন্তত পাঁচজন সুস্থবোধ করেন। এখন সিদ্ধান্তের ব্যাপার আমরা মানসিক রোগীকে ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করব, নাকি সুগার পিল দিয়ে তাকে সুস্থ করে তুলব।
ওষুধ বিক্রির উদ্দেশ্যে প্রমোটাররা বিজ্ঞাপনে মানুষের মানসিক অবস্থাকে অতিরঞ্জিত করে উপস্থাপন করে। এটি শুধু মানসিক অবস্থার মধ্যে সীমিত নয়। প্রথম যখন রেস্টলেস লেগ সিন্ড্রোমের (অস্থির বা বিরামহীন পদ-উপসর্গ) ওষুধ বাজারে ছাড়া হয়, তখন ডার্টমাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক স্টিড ওলশিন ও লিসা সোয়ার্টজ দুই বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সব ধরনের বিজ্ঞাপন অনুসরণ করেছেন। বিরামহীন পা নাচানো হলো এক ধরনের অপ্রীতিকর অবস্থা, যা বিশ্রামে থাকলে উৎপত্তি হয়। যাদের মধ্যে এসব উপসর্গ থাকে, তা হয় অতি মৃদু। খুব অল্পসংখ্যক মানুষের মধ্যে এ উপসর্গগুলো মারাত্মক হতে পারে। কিন্তু দুই-তৃতীয়াংশ বিজ্ঞাপনে বা খবর প্রতিবেদনে অতিরঞ্জিত করে বলা হয়েছে, ১২ মিলিয়ন আমেরিকান এ উপসর্গে আক্রান্ত। এ পরিসংখ্যান গ্রহণ করা হয়েছিল এক ভুল পদ্ধতিতে। তারা এও উল্লেখ করেনি যে, এ উপসর্গগুলোর কারণে মানুষের খুব অসুবিধা হয় না। আবিষ্কৃত ওষুধটিকে অলৌকিক ওষুধ হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়েছিল; যদিও প্ল্যাসিবোর সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, আটজনের মধ্যে মাত্র একজন ভালো অনুভব করে। এ ফলাফল বৈজ্ঞানিক বা পরিসংখ্যানের ভাষায় অর্থবহ বা গুরুত্বপূর্ণ নয়। যখন কোনো নতুন ওষুধ বাজারে আসে এবং তার বিপণনের জন্য বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয়, তখন মানুষ সাধারণত বিজ্ঞাপনের টেকনিক্যাল শব্দ বা ভাষা অধিকাংশ ক্ষেত্রে বুঝে উঠতে পারে না। তারপরও এসব বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয় চিকিৎসকদের ওষুধ প্রেসক্রাইবিংকে প্রভাবান্বিত করার জন্য। অনেক চিকিৎসকসহ এটি খুব কম লোকই জানে ওষুধের অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে। সেটা যদি অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট বা মানসিক রোগের ওষুধ হয়, তবে তো কোনো কথাই নেই।
.
কানাডায় ওষুধের বিজ্ঞাপন বৈধ না হলেও কোম্পানিগুলোকে নামহীন ওষুধের বিজ্ঞাপন প্রচারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। যেমন কোলেস্টেরল কমানোর একটি নামহীন ওষুধের বিজ্ঞাপনে ফিতা দিয়ে পায়ের আঙুল বাঁধা একটি মৃতদেহ দেখিয়ে বলা হয়েছে, পরীক্ষা ও চিকিৎসা ছাড়া আপনি যে কোনো মুহূর্তে হার্ট অ্যাটাকে মারা যেতে পারেন। অধিকাংশ মানুষের জন্য বিজ্ঞাপনের ভাষা সত্য হয় না। কোনো কোনো বিজ্ঞাপনে দাবি করা হয়, মৃদু গলাব্যথা ভয়ংকর আকার ধারণ করতে পারে। আমি হলে এসব বিজ্ঞাপন দেখে অন্তত একটু থামতাম ও ভাবতাম, কারা এসব বিজ্ঞাপন তৈরি করেছে, কেন করেছে এবং আমার ওপর এসব বিজ্ঞাপনের বক্তব্যের প্রভাব কী। উত্তর পেতে কষ্ট হওয়ার কথা নয়। এর ভালো চিকিৎসা হলো, এসব কুটিল ও জটিল বিজ্ঞাপনের প্রতি প্রত্যেকের স্বাস্থ্যসম্মত অবিশ্বাস তৈরি করা।
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনে ইন্টারনেট আসক্তদের চিকিৎসার জন্য ক্লিনিক খোলা হয়েছে। কিছুদিন আগে উঠতি বয়সি এক স্কটিশ যুবককে ইলেকট্রনিক মেসেজ বা বার্তার প্রতি আসক্তির কারণে চিকিৎসা দেওয়া হয়। সে এক বছরে ইলেকট্রনিক বার্তা প্রেরণের জন্য ৪ হাজার ৫০০ পাউন্ড খরচ করে। কর্মদিবসের প্রতি মিনিটে একটি বা প্রতিদিন ৪০০ করে এক মাসে সে ৮ হাজার বার্তা প্রেরণ করে। এ কারণে তাকে চাকরি ছাড়তে হয়। বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে যুবক বলেছিল, যখন আপনি কোনো বার্তা পেয়ে থাকেন, সেটি খুব আনন্দদায়ক। এটি ঠিক পিংপং খেলার মতো। একটি বার্তা পাঠানোর কারণে অন্য একটি বার্তা আপনার কাছে ফিরে আসবে। আমি এটি ভীষণ পছন্দ করি। যুবকের পছন্দ হলে তো চলবে না। এ মানসিকতাকে এক বড় ধরনের ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সমস্যা হিসাবে দেখা হচ্ছে। এ ধরনের ইন্টারনেট অ্যাডিকশন ডিসঅর্ডারের জন্য ওষুধ চাই। এটি কোনো সমস্যাই নয়। মানবসেবায় নিবেদিতপ্রাণ বহুজাতিক কোম্পানিগুলো এসব সমস্যা সমাধানকল্পে ওষুধ উদ্ভাবনে এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছে। অতি স্থুল, অতি দুঃখ, অতি চিকন, অতি সুখ জাতীয় সমস্যা সমাধানে আসছে ওষুধ। একটিমাত্র বড়ি বা ভ্যাকসিন আবিষ্কার করে বায়োটেক মানবসভ্যতার ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক সব সমস্যা নিমিষে উড়িয়ে দেওয়া হবে! এ ধরনের চিকিৎসাকে আমরা রিটেইল থেরাপি বা খুচরা চিকিৎসা হিসাবে আখ্যায়িত করতে পারি। ইতোমধ্যে আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশন কম্পালসিভ শপিংকে (যারা কেনাকাটা না করে থাকতে পারেন না) একটি বড় ধরনের ডিসঅর্ডার বা সমস্যা হিসাবে চিহ্নিত করেছে। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে উপসংহারে এসেছেন যে, অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট সিটালোপ্রাম কম্পালসিভ শপিং ডিসঅর্ডারে প্রয়োগ করলে খুব ফলপ্রসূ ও নিরাপদ হবে। এ ধরনের ফলপ্রসূ ও নিরাপদ চিকিৎসার জন্য উন্নত বিশ্বে নতুন নতুন ডিসঅর্ডার ও সিন্ড্রোম তৈরি করার এক মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে রয়েছে। আস্তে আস্তে ম্যাজিক বুলেটের মতো ওষুধ আবিষ্কৃত হওয়া শুরু হয়েছে। এসব কল্পকাহিনির শেষ নেই।
.
কিন্তু প্রশ্ন হলো, আমরা আসলে চলেছি কোথায় আর এসব হচ্ছেটাই বা কী? কেউ ভাবছেন- সর্বত্র এত ওষুধ কেন? এত ওষুধ কি সত্যি সত্যি আমাদের প্রয়োজন? নাকি এখানে ওষুধ কারবারিদের কোনো চক্রান্ত আছে? প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয় ওষুধ খাইয়ে তারা সুকৌশলে আমাদের রোগী ও দেউলিয়া বানিয়ে ছাড়ছেন? আবার কেউ হতাশ হয়ে ভাবছেন, অতসব চিন্তার দরকার আছে কি? যা হচ্ছে হোক না। আমাদের কী-ই বা করার আছে! আমরা তো গিনিপিগ। আমরা কি তাদের কুটিল চাল বুঝি? আমরা তো তাদের দাবার চালের ঘুঁটি। আমরা কল্পনার রাজ্যে বাস করি, কল্পনাতেই থাকি।
আমরা কল্পনার রাজ্যে বাস করি। চোখ বুঁজলে আমাদের সব আশা-আকাক্সক্ষা পূরণ হয়ে যাবে, আমাদের সব ধরনের অনিরাপদ ও ভোঁতা সীমাবদ্ধতা, দুঃখ-কষ্ট, ছলচাতুরী দূর হয়ে যাবে- যখন আকাশ ফুটতে থাকবে, বিশ্বের সব বরফ গলে যাবে, সব মাছ মারা যাবে, ভূপৃষ্ঠ পুড়ে ছাই হয়ে যাবে এবং সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর লাগাতার অত্যাধুনিক যুদ্ধে অগণিত মানুষ মারা যাবে একের পর এক বোমা বিস্ফোরণে। তারপরও আমাদের মুখে হাসি লেগে থাকবে আর আমাদের মন-প্রাণ আনন্দে নাচতে থাকবে। সব রকম ডিসঅর্ডারেও আমরা অর্ডারে থাকব। আর তা সম্ভব হবে ওষুধ কোম্পানিগুলো কর্তৃক উদ্ভাবিত নতুন নতুন জাদুকরী ওষুধের মাধ্যমে। আসুন, আমরা সবাই নৃত্য করি আর সেই জাদুর ওষুধের জন্য অপেক্ষায় থাকি!
.

-লেখক: ড. মুনীরউদ্দিন আহমদ

অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এবং
সাবেক অধ্যাপক ও ডিন, ক্লিনিক্যাল ফার্মেসি অ্যান্ড ফার্মাকোলজি ডিপার্টমেন্ট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়