মাংসপেশীতে টান পড়া বা শরীরের কোন অংশ মোচকানোকে মাসল পুল বলে। একে মাসল সোরনেস, স্ট্রেইন, স্প্রেইন, ক্র্যাম্প, স্পাজমও বলা হয়।
মাসল পুল কেন হয়, কাদের হয়:
মাংসপেশীতে অতিরিক্ত টান হলে, টিস্যু ছিড়ে যাওয়ার কারণে মাসল পুল হয়। এতে শরীরের ওই অংশে ভীষন ব্যাথা হয়, জ্বালাপোড়া করে। একারণে মাংসপেশী নাড়াচাড়া করা যায়না।
মাসল পুলের কারণঃ
ফিজিওথেরাপিস্ট ডা: রেজওয়ানা সুলতানা’র মতে,
- শরীরের কোনো একটি মাংসপেশী অনেকক্ষন ধরে ব্যবহৃত হলে
- ব্যায়াম, খেলাধুলা বা শারীরিক কসরতের আগে ওয়ার্মআপ না করলে
- পেশী ক্লান্ত থাকা অবস্থায় আকস্মিক নাড়াচাড়া করলে।
- হঠাৎ অতিরিক্ত ভারী কিছু উঠালে
- পেশীর অনুপযুক্ত ও অতিরিক্ত ব্যবহার।
- মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা
- অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস বিশেষ করে পানি কম খেলে।
- শরীরে সোডিয়াম ও পটাশিয়ামের অভাব দেখা দিলে।
অ্যাথলেটরা মাসল পুলের সমস্যায় বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকেন।
কখন বুঝবেন মাসল পুল হয়েছে:
- যদি পেশীতে অনেক ব্যাথা হয় বা পেশী অনেক দুর্বল হয়ে যায়।
- আঘাতপ্রাপ্ত জায়গাটি যদি ফুলে উঠে বা লালচে দাগ পড়ে যায়।
- যদি আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে স্বাভাবিক ওজন নিতে কষ্ট হয়।
- মাংসপেশী অনেক শক্ত হয়ে পড়লে।
মাসল পুল হলে কি করবেন?
মাংসপেশীতে টান খাওয়ার প্রথম কয়েকদিন চারটি ধাপে এর চিকিৎসা করতে হবে।
১. রেস্ট বা বিশ্রামঃ সব ধরণের শারীরিক ব্যায়াম বা ক্রিয়াকলাপ বন্ধ করতে হবে।
2. আইস বা বরফঃ আঘাতের স্থানে 2-3 ঘন্টা পর পর ২০ মিনিট বরফের ব্যাগ দিয়ে রাখুন।
3. কম্প্রেশন বা সংকোচনঃ আঘাতপ্রাপ্ত স্থানটির নাড়াচাড়া নিয়ন্ত্রনে ব্যান্ডেজ দিয়ে মুড়িয়ে দিন।
4. এলিভেট বা উঁচু করাঃ আঘাতের স্থানটি যতটা সম্ভব বালিশের উপরে উঠিয়ে রাখতে হবে।
5. আঘাত পাওয়ার পর প্রথম কয়েকদিন গরম সেক দেয়া বা গরম পানি দেয়া যাবে না।
6. আঘাতের স্থানে কোনো অবস্থাতেই মালিশ করা যাবেনা।
চিকিৎসাঃ
মাংসপেশীতে টান পড়লে সাথে সাথে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।
- মাংসপেশীতে অতিরিক্ত ব্যাথা হলে,
- ব্যাথায় জ্বর উঠলে
- কয়েকদিন পরও ব্যাথা না কমলে
- মাংসপেশী ফুলে উঠা না কমলে বা বাড়লে
- শ্বাস নিতে কষ্ট হলে
- মাথা ঘুরতে থাকলে
- শরীর ভীষণ দুর্বল হয়ে কাঁপতে থাকলে
অনেক সময় মচকানোর এই প্রভাব ৭ দিন থেকে ৫ মাস স্থায়ী হতে পারে। পরিস্থিতি গুরুতর হলে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজনও হতে পারে।
মাসল পুল এড়াতে কি করবেনঃ
- শারীরিক কসরত বা ভারী কিছু তোলার আগে ওয়ার্মআপ করতে হবে।
- নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে।
- দীর্ঘক্ষন না বসে ৪০ মিনিট বা ১ ঘন্টা পর পর পায়চারী করতে হবে।
- প্রচুর পানি পান করতে হবে।
বিবিসি বাংলা অবলম্বনে।