থ্যালাসিমিয়া একটি মারাত্মক জন্মগত রোগ। কোন পরিবারে স্বামী-স্ত্রী দুজনেই যদি থ্যালাসিমিয়া রোগের বাহক হন তবে তাদের সন্তানদের এই রোগ হতে পারে। বিয়ের আগে থ্যালাসিমিয়া বাহক কিনা জানলে সন্তানদের মধ্যে রোগটি সহজেই প্রতিরোধ করা যায়।
বাংলাদেশে প্রতি ১৪ জনে ১ জন থ্যালাসিমিয়া রোগের বাহক। হিমোগ্লোবিন ইলেকট্রোফোরেসিস নামে রক্ত পরীক্ষা করে থ্যালাসিমিয়া বাহক নির্ণয় করা হয়। রক্তের গ্রুপের সাথে থ্যালাসিমিয়ার কোন সম্পর্ক নেই। এই বিষয়ে সচেতন হোন ও প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
থ্যালাসিমিয়া কি?
থ্যালাসিমিয়া একটি রক্তের রোগ। এই রোগে আক্রান্ত শিশুদের শরীরে রক্তের লাল কণিকা পর্যাপ্ত পরিমাণে তৈরি হয় না। ফলে তারা মারাত্মক রক্তশূন্যতায় ভোগে। থ্যালাসিমিয়া রোগীরা আজীবন প্রতি মাসে ১-২ ব্যাগ রক্ত গ্রহণ করে বেঁচে থাকে। এই রোগের চিকিৎসা ব্যয়বহুল।
থ্যালাসিমিয়া রোগের লক্ষণ কি?
শিশু জন্মের ১-২ বছরের মধ্যে থ্যালাসিমিয়া রোগ ধরা পড়ে। এর লক্ষণগুলো হল- ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া, দুর্বলতা, ঘন ঘন ইনফেকশন, শিশুর ওজন বৃদ্ধি না পাওয়া, জন্ডিস, খিটখিটে মেজাজ ইত্যাদি।
থ্যালাসেমিয়ার উপসর্গ:

১। হাড় বিকৃতি, ২। আয়রণ বা লৌহ আধিক্য, ৩ হার্টের বিভিন্ন ধরনের অসুখ (যেমন: বুক ধরফর), ৪। তুলনামূলক লিভার বা যকৃত আকার বৃদ্ধি পাওয়া, ৫। জন্ডিস, ৬। তুলনামূলক প্লীহার আকৃতি বৃদ্ধি, ৭। মুখম-ল ও কপালের হাড় বৃদ্ধি ও ৮। বিলম্বিত বয়ঃসন্ধিকাল ইত্যাদি। আরো অনেক ছোট বড় স্বাস্থ্য সমস্যা।

সাধরণত ৩.৪% মানুষ থ্যালাসেমিয়ার বাহক, প্রায় ৭০০০ থেকে ১০০০০ নতুন শিশু প্রতি বছর থ্যালাসেমিয়া নিয়ে ভারতে জন্মগ্রহণ করে আসছে। এটি যেকোনো প্রকারের থ্যালাসেমিয়া হতে পারে যেমন:- (আলফা থ্যালাসেমিয়া, বিটা থ্যালাসেমিয়া বা ডেল্টা থ্যালাসেমিয়া) এদের মধ্যে থ্যালাসেমিয়াকে হালকা, সহনীয় এবং তীব্র এই তিনটি ভাগে বিভক্ত করা হয়।

পরীক্ষা

শিশুদের ক্ষেত্রে (২-৩) বছর বয়সে প্রথম লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। প্রায় সময় হালকা থ্যালাসেমিয়া কোনো লক্ষণ প্রদর্শন করে না যতক্ষণ না পর্যন্ত রক্ত পরীক্ষা করা হয়।(পরীক্ষা:- কম্লিট ব্লাড কাউন্ট বা সি.বি.সি)

চিকিৎসা

জেনে অবাক হবেন যে থ্যালাসেমিয়া রোগের স্থায়ী কোনো সমাধান নেই, রোগটি বহু প্রাচীনকাল হতে বংশানুক্রমে আমাদের মাঝে বিদ্যমান। তবে আধুনিক চিকিৎসা-বিজ্ঞানের ব্যাপক অগ্রযাত্রায় রক্তদান, ভিটামিন-বি, আয়রণ চিলেশন থেরাপি এবং রক্ত ও অস্থিমজ্জা পুনরায় স্থাপনের মাধ্যমে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। এ সকল চিকিৎসা অতি সময় ও খরচ সাপেক্ষ্য হয়ে থাকে যা অনেক মধ্যবৃত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের জন্য অবহনযোগ্য।

পরামর্শ

এই রোগ হতে বাঁচার একমাত্র উপায় হলো রোগটি সম্পর্কে সচেতনতা তৈরী করা। মনে রাখবেন যতবেশি সচেতনতা তৈরী করা যায় ততোবেশি রোগটি হতে মুক্তি লাভ করা আমাদের জন্য সহজ হবে।

কেন বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস পালন করা হয়?

১. জনসচেতনা বৃদ্ধির মাধ্যমে রোগটি সম্পর্কে জনসাধারণকে জানান দেয়া।
২. রোগটির সংক্রামন প্রতিরোধে কাজ করা।
৩. বিশেষ করে নবীনদের রক্তদানে অনুপ্রণীত করার মাধ্যমে, যারা রোগটি নিয়ে ভুগছে তাদের সাহায্য করা।
৪. আমাদের মতো ডাক্তার ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী যারা আছেন তাদের আরো অনুপ্রাণীত করা।
৫. যারা রোগটি নিয়ে ভুগছেন তাদেরকে হাসপাতালে আসতে এবং রোগটি সংক্রামণ প্রতিরোধে অনুপ্রাণীত করা।
৬. নবীনগনকে বিবাহ পূর্বে রক্ত পরীক্ষা সম্পর্কে অনুপ্রাণীত করা যাতে তাদের পরবর্তী ভবিষ্যত প্রজন্ম রোগটি হতে মুক্তি লাভে সক্ষম হয়।
৭. সর্বোপরি, রোগটি আমাদের সমাজ, দেশ ও পৃথিবী হতে তাড়াতে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করা।

reff: Bangladesh Thalassemia Foundation