হরমোন, হরমোন, হরমোন।
কোনো মেয়ের মুড খারাপ, হয়তো পিরিয়ড হবে, সন্তান জন্মের আগে বা পরে হয়তো কান্না, বিরক্তি। কাউকে জিজ্ঞেস করলে হয়তো বলবে, হরমোনের উঠানামর কারণে হয়তো এটা হয়। কিন্ত হরমোন কি শুধু নারীদের শরীর মনে এমন প্রভাব ফেলে? পুরুষের মুডের উপর এর কোনো প্রভাব নেই?
শিশু, কিশোর, যুবক, বৃদ্ধ, নারী, পুরুষ হরমোন সকলের মধ্যেই আছে। আজ আমরা জানবো ঘুমের মধ্যে এসব হরমোন কি কাজ করে।
হরমোন ও স্বপ্নদোষঃ
আপনি কি কখনো খেয়াল করেছেন আমাদের মনোযোগের মাত্রা দিনের শুরুতে একরকম এবং রাতে অন্যরকম। অফিসে কোনো রিপোর্ট বানাতে ঘন্টার পর ঘন্টা লেগে যায় কিন্ত কাজ শেষ হয় না। আবার কখনো ছট করেই তা হয়ে যায়। এর কারণ হলো আমাদের বডি টক। কেন বলা হয় খুব ভোরে উঠে পড়তে বসলে পড়া দ্রুত মুখস্ত হয়? কারণ সুর্যোদয় থেকে সুর্যাস্ত পর্যন্ত আমাদের দেহে ভিন্ন ভিন্ন হরমোন নিঃসৃত হয়। কেউ আমাদের সতর্ক করে তো কেউ ক্লান্ত করে দেয়। কেউ বলে ওঠো ওঠো সকাল হয়েছে আর কেউ বলে ঘুমিয়ে পড়ো, রাত হয়েছে।
তো চলুন জেনে নেই, রাতের হরমোনে আমাদের শরীরে কি কাজ করে?
সূর্য যখন অস্ত যায়, তখন এর রক্তিম ভাব আমাদের রেটিনাকে সক্রিয় করে। এতে মেলাটোনিন এর মাত্রা বেড়ে যায়। মেলাটোনিন সেই হরমোন যার কারণে আমাদের ঘুম হয়। আসলে এটি আমাদের ক্লান্ত করে। আমরা কোনো কাজ ভালোমতো করার অবস্থা থাকে না। আমাদের চোখ বন্ধ হয়ে আসে। ফলে আমাদের শরীরে মৃদু কম্পনের সৃষ্টি হয়। এর ফলে মস্তিষ্কে এ বার্তা পৌঁছায় যে এখন ঘুমাতে হবে। মস্তিষ্কের হাই ফ্রিকুয়েন্সি তরঙ্গ পুরো শরীরকে শীতল করে দেয়। ফলে আমরা পুরোপুরি রিলাক্স হয়ে যাই। ঘুমিয়ে যাওয়ার পর আমাদের গ্রোথ হেরমোন সক্রিয় হয়ে যায়। আমাদের শরীর একধরণের ওয়ার্কশপে প্রবেশ করে। মাংসপেশী, ত্বক, চুল সবকিছুই মেরামতের কাজ চলে তখন।
তো আপনারা ‍বুঝতে পারলেন, বাচ্চারা কেন বেশি ঘুমায়?একদম ঠিক। হরমোনের কারণে। ওদের দেহে আমাদের চেয়ে গ্রোথ হরমোন বেশি সক্রিয় থাকে। কারণ এটাই তাদের বৃদ্ধির সময়। নবজাতকরা তাই এ সময়ে দিনের বেশিরভাগ সময় ঘুমিয়ে থাকে। শুরুতেই ১৬ ঘন্টা, এরপর ১৪, এরপর ১২, ১২-১০ ঘন্টা ঘুমায়। যখন আমরা কম ঘুমাই, তখন আমাদের চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে। তাইনা? এর কারণ হলো গ্রোথ হরমোন আমাদের শরীরকে মেরামত করার পুরো সময় পায়নি। একারণেই ঘুম কম হলে চুল পড়ে যায়, ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ অনুভব করিনা।
আমাদের শরীর একটা কম্পিউটারের মতো, আর মস্তিষ্ক এর প্রসেসর। প্রসেসর দ্রুত চললে কম্পিউটার ভালোমতো কাজ করবে। যখন আপনার কম্পিউটার ভালোভাবে কাজ করে না বা হ্যাং করে, তখন আপনি কি করেন? একে শাটডাউন করে রিস্টার্ট করেন। ঘুম হলো আমাদের শরীরে শাটডাউনের মতো। শাটডাউনের সময় আমাদের প্রসেসরে কী চলতে থাকে, চলুন একটু জেনে নিই।
ঘুমের মধ্যে মস্তিষ্কে পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু হয়। দিনভর আমরা যা দেখেছি বা শুনেছি তার মধ্যে জরুরী বিষয়গুলো অস্থায়ী স্মৃতিতে চলে যায়। আর যেটা জরুরী না সেটাকে মস্তিষ্ক বুঝে ফেলে। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে মস্তিষ্ক সম্পূর্ণ স্থায়ী স্মৃতিতে জমা রাখে। এসব ঘটে যখন আমরা গভীর ঘুমে থাকি।
এরপর শুরু হয় ঘুমের শেষ অংশের কাজ, যখন আমরা স্বপ্ন দেখি। এসময় আমাদের রক্তচাপ বেড়ে যায়, হৃদস্পন্দন অনেক বেড়ে যায়, আর শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত শুরু হয়। স্বপ্নের মাধ্যমে আমাদের মস্তিষ্ক সেই সব অনূভূতিকে প্রক্রিয়া করে যা আমরা দিনভর ভেবেছি বা অনুভব করেছি। এর কিছুক্ষন পর আমরা আবার গভীর ঘুমে তলিয়ে যাই। এরপর আবার স্বপ্ন দেখি। ঘুমের সময় আমাদের শরীরের তাপমাত্রা কমে যায়। এজন্য গায়ে পাতলা কিছু দিতে ইচ্ছে করে। আর যারা রাতে ঘুমায় না, তাদের মস্তিষ্ক দ্বিধাগ্রস্থ অবস্থায় থাকে। এজন্য রাতে দুর্ঘটনা বেশি হয়। সকাল হতে হতে আমাদের অন্য সকল হরমোন সক্রিয় হয়, আর আমাদের ঘুম ভাঙ্গে। এলার্ম বাজার সাথে সাথে বিছানা থেকে উঠা উচিত নয়। কারণ মস্তিষ্কের সব অংশ একসাথে সচল হয়না। এজন্য কিছুটা সময় নেয়া দরকার। সকাল হওয়ার সাথে সাথে আমাদের মস্তিষ্ক পুনরায় কাজ করা শুরু করে।
আমাদের অনেক গ্রাহকই স্বপ্নদোষ সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। এবার আসছি সেই প্রসঙ্গে। এর সাথেও জড়িয়ে আছে হরমোন। সাধারণত বয়ঃসন্ধিতে এটা বেশি হয়, কারণ এসময় হরমোনের মাত্রা হঠাৎ করে অনেক বেড়ে যায়। নারী পুরুষ সবারই Night Fall বা স্বপ্নদোষ হয়। এ নিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, “একটা মানুষ, সে ছেলে হোক বা মেয়ে হোক সে যখন শৈশব ছেড়ে কৈশোরে পা রাখে, এ সময় তার শরীরের সমস্ত অর্গান যেমন ডেভেলপমেন্ট হয়, একইভাবে সেস্কুয়াল অর্গানগুলোরও ডেভেলপমেন্ট হয়। এসময় দেখা যায় যে, সেস্কুয়াল ড্রাইভ অনেক বেশি থাকে, আর্চটা বেশি থাকে, সে কারণে দেখা যায়, এই যে সেক্সুয়াল অর্গাজম; এটা থেকেই দেখা যায় যে, মানুষ যখন ঘুমায়, সেটা ইনভলানটারীলি রিপ্রোডাক্টিভ ফ্লুইড টা বের হয়, অর্থাৎ যে ইজাকুলেশন হয়, এটাকেই আসলে স্বপ্নদোষ বলা হয়। এটা খুবই স্বাভাবিক এবং ন্যাচারাল একটি প্রক্রিয়া। নারী পুরুষ দুজনেরই এটা হতে পারে। এটা কখনোই দোষের কিছু না।”
চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এটাকে বলা হয় Nocturnal Emmission বা Sleep Orgasm. স্বপদোষের ফলে পুরুষের হয় বীর্যপাত এবং নারীদের যৌনি ভিজে যায়। নারীদের তুলনায় পুরুষের এটা বেশি হয়। এটার কারণ, পুরুষের শরীরে অনবরত বীর্য উৎপাদন হচ্ছে। নতুন বীর্য উৎপাদনের ফলে পুরনো বীর্য শরীর থেকে বের হয়ে যায়। আর টেস্টিস নতুন বীর্য উৎপাদন করতে থাকে। তাই স্বপ্নদোষ নিয়ে কারো ভুল ধারণায় কান দেবেন না।