বিয়ের আগে মেয়েরাই সম্ভবত সবচেয়ে বেশি প্রস্ততি নেন। পোশাক আশাক, গয়না গাটি, মেকাপ এমনকি সার্জারী। আপনি হয়তো ভাবছেন সার্জারী??
তাও আবার বিয়ের আগে? হুম! ঠিকই ধরেছেন।
হাইমেন-নিউ কন্সট্রাকশন সেন্টার। এটা কেন করা হয়? মেয়েদের কুমারীত্ব পরীক্ষা করার জন্য। হ্যাঁ, বাংলাদেশে হয়তো এমন কোনো সার্জারী হয়না কিন্ত প্রতিবেশী দেশ ভারতে অহরহ হচ্ছে। এমনকি যুক্তরাজ্যে এ নিয়ে রীতিমত ব্যবসার অভিযোগ উঠেছে। অনেকের মনে এ বদ্ধমুল ধারণা আছে, যে নারী যদি কুমারী হয়, ভার্জিন হয়, তাহলে বিয়ের প্রথম রাতে সহবাসের সময় চাদরে রক্তের দাগ অবশ্যই লাগবে। এ বিষয়ে যে কাউকে জিজ্ঞেস করলে বলবে, হাইমেন, মানে সতীচ্ছদ পর্দা ছিড়ে গেলে রক্তপাত হয়।
কিন্ত সতীচ্ছদ জিনিসটা কি?
আপনি জানেন? তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক, হাইমেন বা সতীচ্ছদ পর্দা আসলে কী এবং এটা কোথায় থাকে?
কুমারীত্ব ও সতীচ্ছদ
বাস্তবে হাইমেন সারাজীবন আপনার সাথেই থাকে। সতীচ্ছদ ছিড়ে না কারণ এটা কোনো পর্দা নয় যেটা যৌনিকে ঢেকে রাখে। যদি হাইমেন পুরাপুরি বন্ধ থাকতো, তাহলে প্রতিমাসে পিরিয়ড/মাসিক কিভাবে হয়? এটা ঠিক যে কোনো কোনো নারীর সতীচ্ছদ পর্দা পুরোপুরি বন্ধ থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে ডাক্তারের কাছ থেকে ছোট একটি অপারেশন করতে হয়। যাতে মাসিক হতে অসুবিধা না হয়। অর্থাৎ হাইমেনে ছিদ্র থাকাটা ভীষণ জরুরী। কিন্ত আমরা যেখানে ছিলাম, প্রথমবার সহবাসের ফলে হাইমেনের পর্দা ছিড়ে যায়, কিন্ত গাইনী বিশেষজ্ঞ ভালসপারেলজ বলেন, “এটা একেবারেই অসম্ভব, ভুলে যাও যা শুনেছো। হাইমেনের কারণে কেউ তোমার কুমারিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে না।” হাইমেন সার্জারীর পিছনে মেয়েরা লাখ লাখ টাকা খরচ করছে। কিছু ডাক্তারের বক্তব্য তারা হাইমেনের পর্দা সেলাই করতে পারেন বা জোড়া লাগাতে পারেন। গত বছরের নভেম্বরেরর বিবিসি’র এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বলছে, ব্রিটেনের ক্লিনিকে বিতর্কিত কুমারিত্ব পরীক্ষার ব্যবসা চলছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং জাতিসংঘ নারী শরীরে এমন পরীক্ষা চালানোকে মানবাধিকার লঙ্গন বলে মনে করছে এবং এই পরীক্ষা ব্যবস্থা বন্ধের জন্য আহবান জানিয়েছে। সমালোচকরা বলছেন এই পরীক্ষা অবৈজ্ঞানিক এবং কোনো মেয়ে কুমারী কিনা এ পরীক্ষা তা নিশ্চিত করতে পারেনা। এ পরীক্ষা নির্যাতনের একটা হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। এবং বিবিসি’র সেই প্রতিবেদনে উঠে এসেছে একেকটা সার্জারীর জন্য ১৫০-৩০০ পাউন্ড খরচ হয় সাধারণ সার্জারীতে। অপরদিকে বড় ধরণের সার্জারীতে ১৫০০-৩০০০ পাউন্ড খরচ হয়। এবং রক্ষনশীল ‍মুসলিম নারীরা এ সার্জারী করাতে যুক্তরাজ্য যাচ্ছেন যেখানে ২২ টির মতো ক্লিনিক রয়েছে এসব সার্জারীরর জন্য। কিন্ত সতীচ্ছদ পর্দা যদি নাই ছিড়ে তাহলে জোড়া লাগানোর প্রশ্ন আসছে কোথা থেকে?
সেক্ষেত্রে গাইনী বিশেষজ্ঞ ভালসপারেলজ যা বললেন, আমিও সেটার সাথে একমত। হাইমেন কোনোভাবেই ছেড়া সম্ভব নয় আর এটা দিয়ে কোনোভাবেই কুমারিত্ব পরীক্ষা করা যায় না । কিন্ত কুমারী হওয়ার চাপ এত বেশী যে অনেক সময় মেয়েরা ক্যাপসুল ব্যবহার করে যা সহবাস বা যৌন মিলনের সময় ফেটে যায় এবং মনে হয় যেন রক্তপাত হচ্ছে। এটা কি জরুরী যে, প্রথম বার সহবাসের সময় রক্তপাত হতেই হবে? না, একেবারেই ঠিক নয়। রক্তপাত হাইমেনের পর্দা ফেটে যাওয়ার জন্য নয়। যৌন মিলন সঠিতভাবে না হলে হয় এবং সেটা ৫০ শতাংশ নারীর ক্ষেত্রেই দেখা গেছে। এর মানে যৌন মিলনের সময় যদি আপনার সঙ্গীর রক্তপাত হয় এর মানে আপনি তাকে আঘাত দিয়েছেন। হাইমেনে ইলাস্টিক টিস্যু আছে যা ছোট বড় হয়। খেলাধুলার জন্য, সাতার কাটার জন্য, সাইকেল চালানোর জন্য এটি ঢিলে হয়ে যেতে পারে কিন্ত ছিড়ে যাওয়ার একেবারেই কোনো সম্ভাবনা নাই। তাই হাইমেন/ সতীচ্ছদ পর্দা কখনোই কুমারীত্বের প্রতীক নয়।