পরিচ্ছন্ন সুন্দর ত্বক শুধু নিজেরই নয় একটি জাতিরও প্রতিচ্ছবি। আর শিশুরাই হচ্ছে জাতির ভবিষ্যত। তাই শিশুদের ত্বক সমস্যা একটু বেশি গুরুত্ব বহন করে। শিশুদের ত্বক বড়ই কোমল, নাজুক, মসৃণ, কম লোম বিশিষ্ট এবং তুলনামুলকভাবে বড়দের চেয়ে কম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন। আর তাই পারিপার্শিক পরিবেশ, আবহাওয়া, ব্যবহার‌্য জিনিসপত্র এবং বিভিন্ন ধরণের জীবাণূ সংক্রমনের ফলে শিশুদের ত্বকে অনেক ধরণের চর্মরোগ হতে পারে। শিশুদের ত্বকে বেশ কিছু অস্বাভাবিক পরিবর্তন হয় এবং হতে পারে, যা আসলে কোনো রোগের পর‌্যায়ে পড়েনা এবং চিকিৎসার প্রয়োজন হয়না। তবে এ ব্যাপারে একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শে নিশ্চিন্তে থাকা ভালো। যেমন-
জন্মের পরপরই নবজাতক শিশুর শরীর একটা পাতলা সাদা আবরণ দিয়ে ঢাকা থাকে। এটা আপনা আপনিই শরীর থেকে ধীরেধীরে উঠে যায়,ঘষে ওঠানোর কোনো প্রয়োজন হয়না এবং ওঠানোর চেষ্টা করাও উচিত নয়।
জন্মলাভের পর কিছুদিন শিশুদের ত্বক সাধারণত শুকনো এবং ফাটা ফাটা থাকে। এজন্য ভয়ের কিছু নেই। ত্বকের শুষ্কতা দুর করার জন্য এ সময় প্রয়োজনমতো তেল, লোশন বা ভেসলিন ব্যবহার করা যেতে পারে।
• জন্মের পর পরই শিশুর শরীরের বিভিন্ন অংশে মা থেকে নিয়ে আসা সাদা-কালো বা লাল বর্ণের উঁচু-নিচু বিভিন্ন রকম জন্মদাগ থাকতে পারে। এগুলো সাধারণত কোনো সমস্যার সৃষ্টি করেনা এবং কয়েক মাসের মধ্যেই ভালো হয়ে যায়।
• জন্মলাভের কয়েকদিনের মধ্যেই শিশুর শরীরের বিভিন্ন অংশে হামের মতো ছোট ছোট লালচে তারা উঠতে থাকে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই সাধারণত এটি ভালো হয়ে যায়। চিকিৎসাশাস্ত্রে এর নাম হচ্ছে ইরাইথিমা টক্সিকাম নিওনিটেরাম।
• কিছু কিছু শিশুর মুখে,পিঠে ও হাতে-পায়ে নীলাভ কালো রঙ এর এক ধরণের দাগ দেখা যায়, যা মঙ্গোলিয়ান স্পট নামে পরিচিত। শিশু বড় হওয়ার সাথে সাথে এগুলো বড় হতে থাকে এবং অবশেষে মিলিয়ে যায়।
• শিশুর জন্মের কয়েকদিনের মধ্যে মুখমন্ডলে গুঁড়িগুঁড়ি অসংখ্য সাদা দানা উঠতে পারে, ডাক্তারি ভাষায় যার নাম “মিলিয়া”, এটাও কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এমনিতেই ভালো হয়ে যাবে।ৎ
• নবজাতক শিশুর গালে এক ধরণের ব্রণও হতে পারে। মায়ের এন্ড্রোজেন হরমোন শিশুর শরীরে থেকে যাওয়ায় এটা হয়। আস্তে আস্তে তা শরীর থেকে বের হয়ে যায় এবং ব্রণও সেরে যায়।
• কোনো কোনো শিশুর শরীর এক বা একাধিক স্থানে রক্তনালীর ত্রুটি জনীত এক ধরণের টিউমার দেখা যায়। চিকিৎসাশাস্ত্রে যার নাম “হিমেনজিওমা”। বয়স বাড়ার সাথে সাথে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে এর জন্য অপারেশনের প্রয়োজন হতে পারে।
• কোনো কোনো শিশুর মুখমন্ডলে মাঝে মাঝে সাদা সাদা দাগ দেখা যায়। যা অধিকাংশ মাতাপিতাই শ্বেতী মনে করে আঁতকে উঠেন। ডাক্তারি ভাষায় এর নাম “পিটিরিয়োসিস এলবা”। বয়সের সাথে সাথে এ সমস্যা এমনিতেই ভালো হয়ে যায়।
শিশুদের ত্বকে যেসব চর্মরোগ বেশি হয় এবং চিকিৎসা করা প্রয়োজন সেগুলো নিয়ে পরবর্তী পোস্টে আলোচনা হবে।