সেবোরিক একজিমা:
সেবোরিক একজিমা মাথার ত্বকে সবচেয়ে বেশি হয়। তবে এটা চোখের ভ্রুতে, নাকের ভাঁজে, কানের পেছনে, বুকের মাঝে,বগলে, নাভিতে ও কুঁচকিতেও হতে পারে। এটা হলে সাধারণত মাথায় আঠালো চটচটে খুসকির মতো খোসা দেখা যায়। শরীরের অন্যান্য স্থানে হলেও গুঁড়িগুঁড়ি খোসা উঠতে পারে। যখন এটা সারা গায়ে হয় তখন ত্বক লাল হয়ে পানি নি:সরণ হয় এবং চুলকানি থাকে। চুলকাতে চুলকাতে এর ভেতরের জীবাণূ সংক্রমন হয়ে তা আরো জটিল আকার ধারণ করতে পারে।
ডায়াপার একজিমা বা ন্যাপকিন একজিমা:
এ অবস্থা হলে শিশুর কুঁচকিতে ও পাছায় লাল ফুসকুড়ি ওঠে এবং চুলকানির সৃষ্টি হয়। পায়খানা-প্রস্রাব করার পরে দীর্ঘ সময় ভেজা কাপড়ে থাকলে এ সমস্যা বেশি হয়। আর সিনথেটিকসের কাপড় দিয়ে তৈরী ন্যাপকিন বা ডায়াপার পরালে এটা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে অনেক বেশি।
এটপিক একজিমা:
এ একজিমা হলে শিশুর মুখ, হাত, পা এবং অনেক সময় সম্পূর্ণ শরীরে খসখসে চুলকানি দেখা যায় এবং প্রচন্ড চুলকানিতে শিশুর খুব কষ্ট হয়। এ অবস্থায় শরীরে সাবান ব্যবহার করা উচিত নয় এবং হাতের নখ কেটে ছোট রাখা প্রয়োজন। এটপিক একজিমা এক ধরণের এলার্জিজনিত রোগ। কিসের সাথে শিশুর এ সমস্যা সম্পর্কিত তা খুঁজে বের করার জন্য সচেতন হতে হবে। কোনো বিশেষ ব্যবহার্য দ্রব্য,খাবার,ধুলাবালি ইত্যাদি থেকে এ সমস্যা শুরু হতে পারে। সাধারণত এ রোগের সাথে বংশানুক্রমিক বা পারিবারিক সম্পর্ক বিদ্যমান থাকে।
আর্টিকেরিয়া বা আমবাত:
এটাও এক ধরণের এলার্জিজনিত রোগ। শরীর সহ্য করতে পারেনা অর্থাৎ শরীরে এলার্জিক এমন কোনো নির্দিষ্ট জিনিস সাধারণত এ ধরণের সমস্যার জন্য দায়ী। এক্ষেত্রে বিভিন্ন স্থানের ত্বক হঠাৎ লাল লাল চাকা হয়ে ফুলে উঠে এবং প্রচন্ড চুলকানির সৃষ্টি হয়।
ফাঙ্গাস ইনফেকশন বা ছত্রাক জাতীয় রোগ:
বাংলাদেশের আবহাওয়াজনিত কারণে খুব বেশি হয়। ক্যানডিডা নামক এক প্রকার ছত্রাক দ্বারা ছোট শিশুদের সবচেয়ে বেশি সংক্রমন করে। সাধারণত গরমের দিনে এবং শরীরের ভাঁজগুলোতে এ রোগ সবচেয়ে বেশি হয়। মুখমন্ডলের ভেতরে,জিহ্বায় এবং মেয়ে শিশুর যোনিপথেও এ সমস্যা খুব বেশি হয়। আক্রান্ত স্থানের ত্বক ভেজা এবং লালচে থাকে। ক্যানডিডা ছত্রাকজনিত রোগে আক্রান্ত মায়েদের যোনিপথ থেকেও জন্মের সময় শিশু এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
ইমপিটিগো বা ফোঁড়া:
শিশুদের নরম ত্বকে ব্যাকটেরিয়া জীবাণু সংক্রমিত হয়ে এ রোগ সৃষ্টি হয়। ত্বকের উপর পুঁজভরতি ফোসকা হয়ে ব্যাথা ও জ্বরের সৃষ্টি হয়। মুখমন্ডলে এ রোগ বেশি হয়, তবে শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এ চর্মরোগে আক্রান্ত শিশুকে অতিসত্তর চিকিৎসার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
স্ক্যাবিস খোস-পাঁচড়া:
এটি একটি অত্যন্ত ছোঁয়াছে সংক্রান্ত চর্মরোগ। উকুনজাতীয় একটি পরজীবি জীবাণু দ্বারা এ রোগ হয়। আমাদের দেশে ঘনবসতি, অপুষ্টি ও অস্বাস্থ্যকর জীবনধারা এবং পরিবেশের কারণে স্ক্যাবিস রোগটির প্রকোপ খুব বেশি। বাবা-মা-ভাই-বোন বা অন্যান্য পরিচার্যকারীদের কারো গায়ে এ রোগ থাকলে তা সহজেই শিশুকে এ রোগে আক্রান্ত করে। এ রোগে প্রচন্ড চুলকানি হয়, যা তুলনামুলকভাবে দিনের চেয়ে রাতে অনেক বেশি। হাতের আঙ্গুলের ফাঁকে,কবজি, পেট, নিতম্ব, যৌনাঙ্গ এবং শিশুদের মুখমন্ডলে এ রোগ বেশি হয়। তবে সারা শরীরেই ধীরে ধীরে তা ছড়িয়ে যায়। প্রথমে ছোট ছোট কালচে দানা হয় যা পরে পুঁজভরতি ফোসকায় পরিণত হয়। আর এ অবস্থায় ব্যাথা ও জ্বর হতে পারে। এরকম পুঁজ ভরতি দানা দিয়ে শিশুটির মারাত্নক কিডনী রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
মিলিয়ারিয়া বা ঘামাচি:
আমাদের দেশে গরম সিক্ত আবহাওয়ার দরুন শিশুদের গায়ে ঘামাচি খুব বেশি হয়। ঘামাচি বেশ কষ্ট ও যন্ত্রনাদায়ক। অনেক সময় এর মধ্যে ইনফেকশন হয়ে তা আরো তীব্র আকার ধারণ করে।