সকাল বেলাতেই বুঝতে পারলাম পিরিয়ড হয়ে গেছে আমার। পিরিয়ড হলেই অস্বস্তি বেড়ে যায় আমার, প্রচন্ড পেটে ব্যাথা, কোমরে ব্যাথা, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। তবুও নিজেকে শান্ত রেখে তানভীরের অফিসে যাওয়ার আগে নাস্তা বানিয়ে নিয়ে ওর লাঞ্চ রেডি করে দিলাম। খেয়ে তানভীর অফিসে চলে গেলো, ২ জনের সংসার। কাজ খুব একটা নেই তাই। অন্যান্য বারের তুলনায় এবার পেট ব্যাথা বেশি করতেছে, পেটে গরম পানির সেঁক দিলাম, তাও ব্যাথা কমতেছে না দেখে তানভীরকে কল দিলাম।
তানভীরঃহ্যাঁ বলো।
আমিঃ আজকে একটু তাড়াতাড়ি এসে, আর আমার জন্য একপাতা পেট ব্যাথার ঔষধ এনো মনে করে।
তানভীরঃ কি হয়েছে তোমার?
আমিঃ পিরিয়ড।
তানভীরঃ হুম, আনবো।
বলেই ফোন রেখে দিলো, আমার খুব ইচ্ছে করছিলো, তানভীরের সাথে কথা বলতে অনেকক্ষন। শরীর খারাপ লাগলেই আমার কেনো জানি তানভীরকে কাছে পেতে ইচ্ছে করে। খুব ইচ্ছে করে ওর হাত ধরে বসে থাকি বা ও আমাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকুক। সন্ধ্যায় তানভীর বাসায় এলো, ও ফ্রেশ হয়ে আসতেই ওকে চা এনে দিলাম।
আমিঃ আমার জন্য ঔষধ এনেছো?
তানভীরঃ আমার একটুও মনে ছিলো না, কাল সকালে এনে দিবো।
আমিঃ আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। সকাল থেকেই প্রচন্ড পেট ব্যাথা, মোড়েই তো ফার্মেসী আছে। একটু যাও না।
তানভীরঃ এখন টায়ার্ড লাগতেছে নাহার। ঘ্যানঘ্যানানি বন্ধ করো তো প্লিজ।
নাহারঃ চুপচাপ সরে এলাম আর কিছু না বলে। রাতে আজ আর তানভীর আমার দিকে ফিরে ঘুমালো না, অন্যদিনের মতো আমাকে বুকেও নিলো না। যেন পিরিয়ডের জন্য আমি নিজেই দায়ী।
রাতে ২ জন চুপচাপ শুয়ে আছি । আর আর আমাকে তার দরকার নেই, রাতে আজ আমাকে লাগবে না তাই আজ আমার দিকে ফিরে শুতেও ইচ্ছে করেনা। শরীরের প্রয়োজনেই আমাকে চায়, ভালোবেসে না। কিছুক্ষন পরে আর থাকতে না পেরে নিজেই ডাকলাম তানভীরকে।
তানভীরঃ কি?
নাহারঃ একটু আমার দিকে ফিরো না! আমার খুব পেট ব্যাথা করে, একটু আমাকে জড়িয়ে ধরো।
তানভীরঃ ঢং কইরো না নাহার। পিরিয়ড দুনিয়ার সব মেয়েরই হয়, তারা তোমার মতো এসব ভং ধরে না, সবার হাসব্যান্ড পিরিয়ডের সময় ওয়াইফকে জড়িয়ে ধরে শোয় না।, চুপচাপ শুয়ে থাকো। পেট ব্যাথা এমনিতেই কমে যাবে।
নাহারঃ তানভীরের কথা শুনে আমার ২ চোখের পানি আপনাতেই পরতে লাগলো। ঠিকই বলেছে, ও পাশের মানুষটা কখনো জানবে না তার এই কথা শুনার পরে আমার পেট ব্যাথা ঠিকই কমে গিয়েছিলো কিন্ত বুকে ব্যাথা বেড়ে গেছে।
আর্টিকেলটি ছেলেদেরকে ছোট করার উদ্দেশ্যে তৈরী করা নয়। একজন মানুষের মধ্যে যেমন খারাপ দিক থাকে, তেমনি তার মাঝে অনেক ভালো দিকও থাকে। এই গল্পটি থেকে শিক্ষা নিয়ে পিরিয়ডের সময় আপনার আপন জনকে ঠিক তেমনি ভালোবাসুন, যেমনটা সে সুস্থ থাকা অবস্থায় ভেসেছেন। আর পারলে সে সময়টায় তাকে বেশি বেশি সময় দিন এবং অনেক বেশি যত্ন নিন, দেখবেন পৃথিবীর সবথেকে সুখী মানুষগুলোর মধ্যে আপনি একজন হবেন।
পৃথিবীর সব ছেলেরা একবার, মাত্র একবার যদি পিরিয়ডের ৩ দিনের যন্ত্রনা ভোগ করতাম, তাহলে মেয়েরা নিত্যদিনের বেঁচে থাকা আর একটু অপমানের হাত থেকে রেহাই পেতো।
ভাই যদি বুঝতা তলপেট চেপে ধরে শরীর উল্টানো ব্যাথার কান্না কতটা ভয়ঙ্কর তাহলে খুড়িয়ে হাঁটতে দেখে মুচকি হাসি দিতা না। হাতটা ধরে রাস্তা পার করে দিতা। যদি টের পেতে, কি সাংঘাতিক কষ্ট নিয়ে একটা মেয়ে মাসিকচক্রের ওই ৫-৬ দিনের সময়টা পার করে!
চিটচিটে, গা ঘিনঘিনে একটা অস্বস্তিকর অবস্থা নিয়ে ক্লাস, অফিস, সংসার, মাটিকাটা, ইটভাঙ্গা, সবকিছু রুটিন মেনেই করে যায়। তাহলে অন্তত এটাকে নিয়ে উপহাস করতে না। কালচে রক্তের ছাপ শাড়িতে, কামিজে, প্যান্টে দেখলেই খুব মজা লাগে। হেসে গড়াগড়ি খেয়ে অন্যের গায়ে পড়ে বলতে শুনেছি, “তোর কি মাসিক চলতেছে? আজকে কয় দিন?”
কিন্ত একটা বারও ভেবে দেখে না এই সময়টা আসে বলেই, এই কষ্টটা হয় বলেই কিন্ত আমাদের মত সন্তানদের জন্ম হয়। আর আমরাই এটাকে হাসির খোরাক বানাই।
কোনো দোকান থেকে ন্যাপকিন বা প্যাড কিনতে দেখলেই পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটা বলে উঠে, এটা কি পাউরুটির প্যাকেট নাকি? বলেই অট্রহাসিতে গড়িয়ে পড়ে। কিন্ত একটা বারও যদি বুঝতো ঐ পাউরুটির মতো ন্যাপকিন বা প্যাডটা ব্যবহার করতে গিয়ে তাদের কতটা বিরক্তিকর অবস্থার ভিতর দিয়ে কাটাতে হয়। তুমি একটা মেয়েকে ন্যাপকিন কিনতে দেখে মজা করতেছো, তো, মাত্র ২ ঘন্টা একটা ন্যাপকিন আন্ডারওয়্যারে লাগিয়ে বাহির দিয়ে হেঁটে আসলেই বুঝবা, তুমি কত বড় বাঘের বাচ্চা। আমার বড় মায়ের পিরিয়ড জয়েছে বলেই আমার ‍নানুর জন্ম, আমার নানুর পিরিয়ড হয়েছে বলেই আমার মায়ের জন্ম, আমার মায়ের পিরিয়ড হয়েছে বলেই আমার জন্ম। এটা চক্র। এটাকে নিয়ে ঠাট্রা বা উপহাস করার মত কোন বিষয় নয়।