বাংলাদেশে ১৯৮০ সাল থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত ক্ষতিকর প্যারাসিটামল সিরাপ খেয়ে কয়েক হাজার শিশুর মৃত্যু ঘটেছিল। সরকারে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের হিসাবে এ সংখ্যা দুই হাজারের বেশি।

দেশে বছরে প্রায় ২৫ হাজার রকমের ওষুধ তৈরি হয়। কিন্তু এর মধ্যে মাত্র ৪ হাজার ওষুধ পরীক্ষা করে দেখার সামর্থ্য আছে সরকারের। ফলে বিপুল পরিমাণ ভেজাল, নকল বা নিম্নমানের ওষুধ বাজারে ছড়িয়ে পড়ছে।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিএইচও) এর তথ্য অনুযায়ী উন্নয়নশীল দেশগুলির বাজারে যে ওষুধ বিক্রি হয় তার শতকরা ১৫ ভাগ ওষুধ নিম্নমানের, ভেজাল বা নকল।

দেশে সরকারি কর্তৃপক্ষ সর্বোচ্চ চেষ্টা করে ভেজাল, নকল বা নিম্নমানের ওষুধ নিয়ন্ত্রণের। ২০১৫ সালে ভেজাল বা নিম্নমানের ওষুধ উৎপাদন এবং বাজারজাতকরণের দায়ে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর ১২৩৫টি মামলা করেছে এবং ৬৬ জন ব্যক্তিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছিল। ২০১৬ সালের প্রথম দুই মাসে এ সংক্রান্ত ২৫০টি মামলা দায়ের করা হয় এবং ৬জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড এবং একটি ফার্মেসি সিলগালা করে দেয়।

ভেজাল বা নকল ওষুধ শনাক্তে সরকারের পাশাপাশি নাগরিকেরও দায়িত্ব রয়েছে। একজন নাগরিক যখন ওষুধ কিনতে যান তখন তিনি খুব সহজেই সেটি যাচাই করে নিতে পারেন। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী পণ্য যাচাই-বাছাই করা ভোক্তার অধিকার। কেউ যাচাই-বাছাইয়ে বাধা দিলে তার শাস্তির বিধান রয়েছে।

১. ওষুধের প্যাকেটের গায়ে যে সিল থাকে সেটি ভাল করে দেখুন। কোথাও কোনো গলদ আছে কিনা। প্রয়োজনে একই কোম্পানির অন্য একটি ওষুধের প্যাকেট হাতে নিয়ে দুই প্যাকেটের সিল মিলিয়ে দেখুন। দু’টির সিল ও অন্যান্য লেবেল একই আছে কিনা। একরকম না হলে অন্য দোকান থেকে ওষুধ কিনুন।

২. আগে যদি আপনি একই ওষুধ কিনে থাকে তাহলে পরের বার কেনার সময় আগের প্যাকেটের সঙ্গে প্যাকেজিং, অক্ষরের ফন্ট, বানান, রং এগুলো মিলিয়ে দেখুন। কোথাও কোনো গলদ মনে হলে সেখান থেকে ওষুধ কেনা এড়িয়ে চলুন।

৩.ওষুধ কেনার পর বাড়িতে গিয়ে যখন সেটি খাবেন বা ব্যবহার করবেন তখন খেয়াল করুন, ওষুধের রং, আকার, গঠন নিয়ে কোনো সন্দেহ আছে কিনা। ওষুধের কোথাও কোনো ভাঙা অংশ রয়েছে কি না, গুঁড়ো ওষুধের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত পরিমাণে দেয়া আছে কি না এসব ভাল করে দেখুন। সন্দেহ হলে সেটি এড়িয়ে চলুন।

৪. ওষুধটি যদি ক্রিস্টালের মতো হয় তাহলে আগের কেনা ওষুধের মতো শক্তি বা নরম কিনা দেখুন। ওষুধের ভেতরে কোথাও ফোলা অংশ বা দাগ থাকলে সেই ওষুধ এড়িয়ে চলতে হবে।

৫. ওষুধের দাম আপনার কাছে অসম্ভব কম বা বেশি হলে সেটি সন্দেহের একটি কারণ। নকল বা ভেজাল ওষুধ আসল ওষুধ থেকে কম দামে বিক্রি হতে পারে। এমন সন্দেহ হলে সেই দোকান থেকে ওষুধ না কেনাই ভাল।

৬. দেশে প্যানাসিয়া ডট লাইভ (www.panacea.live) নামে একটি ওয়েবসাইট রয়েছে যেখানে গিয়ে আপনি আপনার ওষুধটি যাচাই করতে পারবেন।

৭. প্যানাসিয়ার আওতায় থাকা প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট ওষুধের প্রতিটি পাতায় একটি করে আলাদা কোড থাকে। কেনার আগে ওষুধের গায়ে থাকা নির্দিষ্ট কোডটি ‘২৭৭৭’ নম্বরে এসএমএস করে পাঠালে প্যানাসিয়ার ডাটাবেইসে থাকা কোডের সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই যাচাই হবে। আর তাত্ক্ষণিকভাবে একটি ফিরতি এসএমএসে (ইংরেজি ও বাংলায়) জানিয়ে দেওয়া হবে ওষুধটি আসল না নকল।

সুত্রঃ সময় টিভি