গর্ভাবস্থার প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় সপ্তাহ

আপনার গর্ভের বাচ্চার বয়স কত সে অনুযায়ী বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে হয়। তাই শুরুতেই আলোচনা করছি কীভাবে এই হিসাব করতে হয়।

আপনার সর্বশেষ মাসিকের প্রথম দিন থেকে আপনার গর্ভকাল অর্থাৎ আপনি কতদিন ধরে গর্ভধারণ করেছেন তা হিসাব করা হবে। ধরুন, গত মাসের ৫ তারিখ আপনার মাসিক শুরু হয়ে ১০ তারিখে শেষ হয়েছে। এরপর আপনার আর মাসিক হয়নি। তাহলে গত মাসের ৫ তারিখ থেকে আপনার গর্ভকাল হিসাব করা হবে।

প্রথম থেকে তৃতীয় সপ্তাহে আপনার করনীয়
সবার আগে নারীরা যে বিষয়টি খেয়াল করেন তা হল তাদের মাসিক বা পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যাওয়া।
আপনি গর্ভবতী কিনা তা জানার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উপায় হল প্রেগন্যান্সি টেস্ট করা। ঘরে বসেই স্ট্রিপের মাধ্যমে প্রস্রাব পরীক্ষা করে জেনে নিতে পারেন আপনি গর্ভবতী কিনা। প্রায় সব ফার্মেসিতেই এই স্ট্রিপ কিনতে পাওয়া যায়। আপনার নিকটস্থ ক্লিনিক বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রক্ত পরীক্ষা করেও নিশ্চিত হতে পারেন।
এসময় কিছু কিছু শারীরিক পরিবর্তন বা লক্ষণ দেখা দিতে পারে। যেমন:
• স্তনে, বিশেষ করে স্তনের বোঁটায় খোঁচাখোঁচা ভাব বা অস্বস্তি হতে পারে। গর্ভাবস্থায় স্তনে রক্ত সরবরাহ বেড়ে যাওয়ার কারণে এমনটা হয়ে থাকে।
• যোনিতে অর্থাৎ মাসিকের রাস্তায় রক্ত সরবরাহ বেড়ে যাওয়ার কারণে যোনিদ্বার তথা মাসিকের রাস্তার মুখের অংশটি গাঢ় বা কালচে হয়ে যেতে পারে; সাধারণত এটি ফ্যাকাশে গোলাপি রঙের হয়ে থাকে।
সাদাস্রাবের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হতে পারে, এতে দুশ্চিন্তার কিছু নেই।
• গর্ভধারণের ২-৩ সপ্তাহে যোনিপথ তথা মাসিকের রাস্তা থেকে হালকা বা কয়েক ফোঁটা রক্তপাত হতে পারে।
• এসময় ক্ষুধা বা খাদ্যাভাসে লক্ষণীয় কিছু পরিবর্তন আসতে পারে, যেমন হঠাৎ হঠাৎ কোন খাবার খাওয়ার তীব্র ইচ্ছা অথবা প্রিয় কোন খাবারের প্রতি হঠাৎ অনীহা। সাধারণত গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে টকজাতীয় খাবারের প্রতি বাড়তি আগ্রহ অথবা ডিম, ভাজাপোড়া বা ক্যাফেইন-জাতীয় পানীয়ের (চা, কফি, ইত্যাদি) প্রতি অরুচি দেখা যায়।
• এসময় খুব ক্লান্ত বা অবসন্ন বোধ হতে পারে। আপনার গর্ভের শিশুর বৃদ্ধির জন্য শরীরে যে অতিরিক্ত শক্তি খরচ হচ্ছে তার জন্য এমনটা বোধ হয়। তাই এসময় পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেয়া উচিত।
আপনি গর্ভধারণ করেছেন এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার পর আপনার গর্ভকালীন পরিচর্যা শুরু করার জন্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তার বা আপনার নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের স্বাস্থ্যকর্মীর সাথে যোগাযোগ করুন।

চেকআপের জন্য কোথায় যোগাযোগ করবো?
আপনি নিচের যেকোন স্থানে যোগাযোগ করতে পারেন:
• বিভাগীয় হাসপাতালের গাইনী বা প্রসূতিসেবা বিভাগে
• আপনার জেলা-শহরের কোন ম্যাটারনিটি ক্লিনিকে
• পরিচিত কোন গাইনী ডাক্তারের চেম্বারে
• এছাড়া নিকটস্থ কমিউনিটি ক্লিনিক এর স্বাস্থ্যকর্মীরা আপনাকে দিকনির্দেশনা দিতে পারবে

কী কী বিষয় খেয়াল রাখতে হবে ?
গর্ভাবস্থার একদম শুরুর দিকে (কয়েকদিন বা কয়েক সপ্তাহ) আপনি হয়তো নাও জানতে পারেন যে আপনি গর্ভবতী।
এসময় আপনি এই বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন –
• গর্ভধারণের চেষ্টা শুরু করার পর থেকে গর্ভধারণের ১২তম সপ্তাহ পর্যন্ত অর্থাৎ প্রথম তিন মাসে দৈনিক ৪০০ মাইক্রোগ্রাম ফলিক এসিড ট্যাবলেট সেবন করতে পারেন। ফলিক এসিড আপনার গর্ভের শিশুকে ‘স্পাইনা বিফিডা’ সহ নিউরাল টিউবের (এটি থেকেই পরবর্তীতে ব্রেন বা মস্তিষ্ক, মেরুদণ্ড ও স্নায়ুতন্ত্র তৈরি হয়) অন্যান্য সমস্যা থেকে রক্ষা করবে।
• দৈনিক ১০ মাইক্রোগ্রাম করে ভিটামিন-ডি ট্যাবলেট সেবন করতে পারেন। ভিটামিন ডি শিশুর হাড় ও দাঁত গঠনে ভূমিকা রাখবে।
• ইনফেকশনের হাত থেকে রক্ষা পেতে কিছু খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। ডাক্তার আপনাকে এ বিষয়ে পরামর্শ দিবে।
• গর্ভের শিশুর সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে অবশ্যই ধূমপান ও মদ্যপান এড়িয়ে চলা উচিত।
আপনি যদি ভিটামিন ডি বা ফলিক এসিড এর চাহিদা পূরণের জন্য মাল্টিভিটামিন ট্যাবলেট সেবন করতে চান, তবে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন যে এতে যেন ভিটামিন এ অথবা রেটিনল না থাকে। কারণ গর্ভাবস্থায় প্রয়োজনের অতিরিক্ত ভিটামিন এ সেবনের ফলে গর্ভের শিশুর শরীরে জন্মগত ত্রুটি দেখা দিতে পারে৷
আপনি গর্ভবতী অবস্থায় সরকারি হাসপাতাল থেকে বিনামূল্যে ফলিক অ্যাসিড সংগ্রহ করতে পারেন।

গর্ভাবস্থার চতুর্থ সপ্তাহ

সাধারণত গর্ভধারণের সময়কাল হল আপনার সর্বশেষ মাসিক/মেন্স বা পিরিয়ডের দুই সপ্তাহ পরে, অর্থাৎ আপনার ডিম্বপাতের কাছাকাছি সময়ে। (গর্ভধারণে সক্ষম নারীদের ডিম্বাশয় থেকে প্রতিমাসে ডিম্বাণু বের হয়, একে ডিম্বপাত বলা হয়ে থাকে।)
গর্ভাবস্থার প্রথম ৪ সপ্তাহে আপনি হয়তো কোন লক্ষণই খেয়াল করবেন না।
নারীরা গর্ভধারণ করলে সবার আগে যেই বিষয়টি বুঝতে পারেন তা হল তাদের মাসিক বা পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যাওয়া। এছাড়া গর্ভাবস্থার অন্যান্য লক্ষণ, যেমন চাপ দিলে স্তনে ব্যথা অনুভব করা (breast tenderness), এমন লক্ষণও থাকতে পারে। কারো কারো ক্ষেত্রে মাসিকের তারিখে যোনিপথ তথা মাসিকের রাস্তা থেকে হালকা বা ফোঁটা ফোঁটা রক্তপাতও হতে পারে – মাসিক নিয়ন্ত্রণকারী হরমোনগুলোর প্রভাবে এমনটা হয়ে থাকে। এতে সাধারণত ঘাবড়ানোর কোন কারণ নেই। গর্ভাবস্থায় এক বা একাধিকবার এমনটা হতে পারে৷

তবে যদি রক্তপাতের পরিমাণ বেশি হয় সেক্ষেত্রে অবশ্যই দেরি না করে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে৷
অধিকাংশ নারীই প্রেগন্যান্সি টেস্টের মাধ্যমে গর্ভধারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হোন।
আপনার সর্বশেষ অর্থাৎ গত মাসিকের প্রথম/শুরুর দিন থেকে হিসাব করে আপনি আপনার সন্তান জন্মদানের সময় অর্থাৎ ডেলিভারির সম্ভাব্য তারিখ বের করতে পারেন, আবার আল্ট্রাসাউন্ড স্ক্যান করেও এটি জানা যায়। তবে এই দুই পদ্ধতিতে বের করা সময়সীমায় কিছুটা পার্থক্য থাকতে পারে।

কি কি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে?
• আপনি যদি ইতোমধ্যে ফলিক এসিড সেবন শুরু না করে থাকেন, তবে দেরি না করে এখনই শুরু করুন। দৈনিক ৪০০ মাইক্রোগ্রাম ফলিক এসিড ট্যাবলেট সেবন করুন আর ১২তম সপ্তাহ পর্যন্ত এটি সেবন করা চালিয়ে যান। ফলিক এসিড আপনার গর্ভের শিশুকে ‘স্পাইনা বিফিডা’ সহ অন্যান্য নিউরাল টিউবজনিত (মস্তিষ্ক/ব্রেইন, মেরুদণ্ড ও স্নায়ুর) সমস্যা থেকে রক্ষা করবে।
• দৈনিক ১০ মাইক্রোগ্রাম করে ভিটামিন-ডি ট্যাবলেট সেবন করুন। ভিটামিন ডি শিশুর হাড় ও দাঁত গঠনে ভূমিকা রাখবে।
• যদি আপনার ডায়াবেটিস থাকে বা ওজন বেশি হয় ( বি এম আই ৩০ এর বেশি হলে), সেক্ষেত্রে ফলিক এসিড সেবনের মাত্রা বাড়ানোর প্রয়োজন হতে পারে। তবে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ওষুধই বেশি মাত্রায় সেবন করা উচিৎ নয়৷

গর্ভের শিশু কীভাবে বড় হচ্ছে
গর্ভাবস্থার শুরুর দিকে, মূলত গর্ভের ৪র্থ ও ৫ম সপ্তাহে ভ্রূণটি জরায়ুর ভেতরের আবরণীতে বেড়ে উঠতে থাকে। এই ভ্রূণটিই ভবিষ্যতে আপনার পূর্ণাঙ্গ শিশুতে রূপ নেবে।
ভ্রূণের বাইরের দিকের কোষগুলো মায়ের রক্ত সরবরাহ ব্যবস্থার সাথে যোগাযোগ তৈরি করে। অন্যদিকে, ভ্রূণের ভেতরের দিকের কোষগুলো পর্যায়ক্রমে ২ থেকে ৩ স্তরে বিন্যস্ত হয় এবং প্রতিটি স্তর পরবর্তীতে শিশুর দেহের ভিন্ন ভিন্ন অংশে পরিণত হয়:
• ভেতরের স্তরটি শ্বসনতন্ত্র (কাজ: শ্বাস-প্রশ্বাস সংক্রান্ত) ও পরিপাকতন্ত্রের (কাজ: হজম সংক্রান্ত) বিভিন্ন অংশে, যেমন ফুসফুস, পাকস্থলী, অন্ত্র ও মূত্রাশয়, ইত্যাদিতে পরিণত হয়।
• মাঝের স্তরটি পরিণত হয় হৃৎপিণ্ড/হার্ট, রক্তনালি, মাংসপেশি ও হাড়ে।
• বাইরের স্তরটি থেকে তৈরি হয় মস্তিষ্ক বা ব্রেইন ও স্নায়ুতন্ত্র, চোখের লেন্স, দাঁতের এনামেল (দাঁতের বাইরের চকচকে আবরণ), ত্বক ও নখ।

গর্ভাবস্থার শুরুর দিকের এই সপ্তাহগুলোতে ভ্রূণটি একটি ছোট কুসুম থলির সাথে সংযুক্ত থাকে যা একে পুষ্টি সরবরাহ করে।
তবে এই ছোট কুসুম থলির পক্ষে গর্ভাবস্থার পুরো সময় জুড়ে ভ্রূণকে পুষ্টি সরবরাহ করা সম্ভব হয় না। এজন্য প্রয়োজন হয় প্লাসেন্টা বা অমরার, যা গর্ভফুল নামেও পরিচিত; এটি পরবর্তী কয়েক সপ্তাহ শেষে পুরোপুরি প্রস্তুত হয়ে গিয়ে ভ্রূণকে পুষ্টি সরবরাহ করার দায়িত্ব নেয়।
ভ্রুণটি অ্যামনিওটিক থলি নামের একটি থলির ভেতরে চারিদিকে তরল দিয়ে ঘেরা থাকে। এই থলির বাইরের স্তরটি থেকেই প্লাসেন্টা/অমরা তথা গর্ভফুল গঠিত হয়।
শুরুর দিকের এই সময়ে প্লাসেন্টার কোষগুলো জরায়ুর দেয়ালের গভীরে গিয়ে বড় হতে থাকে। এভাবেই একটি শক্তিশালী রক্ত সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে ওঠে, যার মাধ্যমে গর্ভের শিশুটির প্রয়োজনীয় অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহ নিশ্চিত হয়।

গর্ভাবস্থার পঞ্চম সপ্তাহ

এটি হল প্রথমবারের মত বন্ধ হওয়া পিরিয়ড বা মাসিকের সময়। অধিকাংশ নারী এসময়ই মাত্র বুঝতে শুরু করেন যে তিনি সম্ভবত গর্ভবতী।
তবে অনেকের ক্ষেত্রে পিরিয়ড প্রতি মাসে নির্দিষ্ট সময়ে না হয়ে কিছুটা আগে বা পরে হয়। তাই তারা গর্ভধারণের ব্যাপারটি আরো দেরিতে বুঝতে পারেন। এছাড়া গর্ভের ভ্রূণটি গর্ভাশয়ের দেয়ালে বসতে গিয়ে মাসিকের রাস্তা দিয়ে কিছুটা রক্তপাতও হতে পারে (ইমপ্লান্টেশন ব্লিডিং); অনেকেই একে পিরিয়ডের বা মাসিকের রক্ত মনে করে ভুল বুঝতে পারেন।
তবে এসময় পিরিয়ড বন্ধ থাকা ছাড়াও গর্ভবতী মায়ের শরীরে কিছু লক্ষণ দেখা দেয়, যা থেকে গর্ভধারণের বিষয়টি প্রাথমিকভাবে অনুমান করা যেতে পারে।
সেই লক্ষণগুলো কী?
এমন ১১টি লক্ষণ হল:
• স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ক্লান্ত অনুভব করা
• স্তনে হালকা ব্যথা বা চাপ দিলে ব্যথা অনুভব করা
• মুখে ধাতব স্বাদ (metallic taste) পাওয়া
• বমি বমি ভাব (বিশেষ করে সকালের দিকে এমনটা হয়, তাই একে “মর্নিং সিকনেস” বলা হয়ে থাকে)
• মাথাব্যথা
• মুড সুইং বা ঘন ঘন মনমেজাজ বদলানো
• খাদ্যাভ্যাসে লক্ষণীয় পরিবর্তন আসা। হঠাৎ নতুন কোন খাবারে তীব্র রুচি বা প্রিয় কোন খাবারে অরুচি দেখা দেওয়া
• ঘ্রাণশক্তি আগের চেয়ে তীব্র হওয়া
• ছোটখাটো বিষয়ে মন খারাপ লাগা/কান্না করে ফেলার প্রবণতা দেখা দেওয়া। গর্ভাবস্থায় শরীরের হরমোনগুলোর ওঠানামার কারণে এসব লক্ষণ দেখা দেয়
• সাদাস্রাবের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া
• পিরিয়ড বা মাসিকের ব্যথার মত তলপেটে মোচড় দিয়ে ব্যথা অনুভব করা, পেটে অস্বস্তি বা পেট ফাঁপা হয়েছে এমন মনে হওয়া

প্রসবকালীন সেবা (একে গর্ভকালীন বা মাতৃত্বকালীন সেবাও বলা হয়)
আপনি গর্ভধারণ করেছেন এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার সাথে সাথেই আপনার পরিচিত ডাক্তারের সাথে বা কোন মেটারনিটি ক্লিনিকে বা নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যোগাযোগ করুন, যাতে আপনি সঠিক সময়ে গর্ভকালীন সেবা গ্রহণ শুরু করতে পারেন৷ যোগাযোগের পর ডাক্তার বা স্বাস্থ্যকর্মী আপনার প্রথম চেকআপ তথা চিকিৎসা এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা করবেন।
আপনার যদি এমন কোন স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে যা আপনার গর্ভাবস্থার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে, যেমন হার্ট বা ফুসফুসের সমস্যা, খিঁচুনি রোগ, মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা, হাই প্রেশার, থাইরয়েডের সমস্যা, ডায়াবেটিস, অ্যাজমা বা হাঁপানি, সেক্ষেত্রে যত দ্রুত সম্ভব আপনার গর্ভকালীন সেবা গ্রহণ শুরু করা জরুরি।
গর্ভধারণের আগে থেকেই চালিয়ে যাচ্ছিলেন এমন কোন ওষুধ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া সেবন করা বন্ধ করবেন না।

যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে:
গর্ভধারণের আগে থেকেই চালিয়ে যাচ্ছিলেন এমন কোন ওষুধ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া সেবন করা বন্ধ করবেন না।
এছাড়া একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলার চেষ্টা করুন। বেশি বেশি পুষ্টিকর খাবার খান, যাতে আপনার শরীর ও গর্ভের শিশু উভয়ই প্রয়োজনীয় পুষ্টি পায়।
গর্ভাবস্থায় বদহজম একটি কমন সমস্যা। বদহজম এড়াতে প্রতি বারে অল্প অল্প করে খান, এভাবে ঘন ঘন খেতে থাকুন এবং সেই সাথে প্রচুর পানি পান করুন।
ফলিক এসিড আর ভিটামিন ডি ট্যাবলেট এর পাশাপাশি ভিটামিন সি-যুক্ত বা টক জাতীয় খাবার – যেমন লেবু, কমলালেবু, মাল্টা, আমড়া, পেয়ারা, আমলকী, আপেল ইত্যাদি খেতে থাকুন। ভিটামিন সি আপনার শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশে সহায়তা করবে৷

গর্ভের শিশু কীভাবে বড় হচ্ছে
এ পর্যায়ে গর্ভের শিশুর প্রধান অঙ্গগুলোর প্রাথমিক কাঠামো তৈরি হয়েছে এবং শিশুর স্নায়ুতন্ত্র (মস্তিষ্ক/ব্রেইনসহ বোধশক্তির সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য অঙ্গ মিলে তৈরি হয়) ইতোমধ্যেই বিকশিত হচ্ছে। এই ধাপে ভ্রূনটি (ভ্রূণ পরিণত হয়ে ভবিষ্যতে আপনার পূর্ণাঙ্গ শিশুতে রূপ নেয়) প্রায় ২ মিলিমিটার দৈর্ঘ্যের হয়ে থাকে।
হৃৎপিন্ড একটি সরল টিউব বা নলের মত কাঠামো হিসেবে তৈরি হতে থাকে। শিশুটির কিছু নিজস্ব রক্তনালী ইতোমধ্যেই তৈরি হয়ে যায় এবং রক্ত চলাচল শুরু হয়। সাধারণত এ সময়েই শিশুটির হৃৎপিন্ড প্রথমবারের মত স্পন্দিত হয়ে কাজ শুরু করে অর্থাৎ হার্টবিট শুরু হয়।
এই রক্তনালীগুলোর একটি তারের মত অংশ শিশুটিকে মায়ের দেহের সাথে যুক্ত করে রাখে, যা পরবর্তীতে আম্বিলিকাল কর্ড (Umbilical cord) বা নাড়িতে পরিণত হবে।
একই সময়ে ভ্রূণটির বাইরের স্তরের কোষগুলো একটি খাঁজ সৃষ্টি করে, যা আরও গভীরভাবে ভাঁজ হয়ে নিউরাল টিউব নামের একটি ফাঁপা নলের মত কাঠামোতে পরিণত হয়। এই নিউরাল টিউব থেকেই পরবর্তীতে শিশুটির মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ড তৈরি হবে।
নিউরাল টিউবের এক প্রান্তের (শুরুর বা মাথার দিকের) ত্রুটি থেকে ‘অ্যানেনসেফালি’ (anencephaly) দেখা দিতে পারে, যেখানে মাথার খুলির হাড়গুলো সঠিকভাবে গড়ে ওঠে না। অন্য প্রান্তের (শেষের বা লেজের দিকের) ত্রুটি থেকে দেখা দিতে পারে ‘স্পাইনা বিফিডা’ (spina bifida) – এতে মেরুদণ্ড সঠিকভাবে তৈরি হয় না, মেরুদণ্ডে গ্যাপ বা শূন্যস্থান থেকে যায়।
ফলিক এসিড স্পাইনা বিফিডা প্রতিরোধে সহায়তা করে। তাই গর্ভধারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার সাথে সাথে আপনার ফলিক এসিড সেবন শুরু করা উচিত (এমনকি সম্ভব হলে গর্ভধারণের আগে থেকেও শুরু করা যেতে পারে)।

গর্ভাবস্থার ষষ্ঠ সপ্তাহ

৬ষ্ঠ সপ্তাহে বাইরে থেকে দেখে আপনি গর্ভবতী কিনা তা বুঝা না গেলেও, আপনার গর্ভে এসময় শিশুটি খুব দ্রুত বেড়ে উঠতে থাকে। আর তার বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত উপকরণ সে আপনার শরীর থেকে গ্রহণ করে। তাই স্বাভাবিকভাবেই এসময় আপনি অত্যন্ত ক্লান্ত অনুভব করে থাকেন।
গর্ভাবস্থার প্রথমদিকের লক্ষণগুলো এসপ্তাহেও প্রায় একই থাকে:
• স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ক্লান্তি অনুভব করা,
• স্তনে হালকা ব্যথা হওয়া বা চাপ দিলে ব্যথা অনুভব করা,
• মুখে ধাতব এক ধরনের স্বাদ (মেটালিক টেস্ট) পাওয়া বা খবারের স্বাদ বুঝতে না পারা,
• বমি বমি ভাব হওয়া (মর্নিং সিকনেস),
• মাথাব্যথা,
• মুড সুইং বা ঘন ঘন মেজাজ পরিবর্তন হওয়া,
• খাদ্যাভ্যাসে লক্ষণীয় পরিবর্তন আসা। হঠাৎ নতুন কোন খাবারে তীব্র রুচি বা প্রিয় কোন খাবারে অরুচি দেখা দেওয়া,
• ঘ্রাণ শক্তি আগের চেয়ে তীব্র হওয়া,
• ছোটখাটো বিষয়ে মন খারাপ লাগা/কান্না করে ফেলার প্রবণতা দেখা দেওয়া। গর্ভাবস্থায় শরীরের হরমোনগুলোর ওঠানামার কারণে এসব লক্ষণ দেখা দেয়,
• সাদস্রাবের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া,
• পিরিয়ডের ব্যথার মত তলপেটে মোচড়ানো বা ব্যথা হওয়া,
• পেটে অস্বস্তি বা পেট ফাঁপা হয়েছে এমন মনে হওয়া।
মনে রাখতে হবে গর্ভাবস্থায় আবেগপ্রবণ অনুভব করা খুবই স্বাভাবিক। একেক জনের ক্ষেত্রে এই অভিজ্ঞতাও একেকরকম হযয়ে থাকে। তাই এ নিয়ে বিচলিত হওয়ার কোন কারণ নেই।

যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে:
• এই সময়ে যতটা সম্ভব বিশ্রাম নেয়ার চেষ্টা করুন। আপনার শারীরিক পরিবর্তন ও মানসিক অবস্থা সম্পর্কে আপনার স্বামী ও পরিবারের সাথে আলোচনা করুন, এতে তাদের জন্য আপনার দেখভাল করা বা সহায়তা করা সহজ হবে। খেয়াল রাখবেন, গর্ভাবস্থার পুরো সময় জুড়ে আপনি এমন শারীরিক ক্লান্তি বা মানসিক অস্থিরতা অনুভব করবেন না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রথম ত্রৈমাসিক অর্থাৎ ১২ তম সপ্তাহের পর থেকে এসব সমস্যা ভালো হয়ে যায়।
• গর্ভাবস্থায় আপনার ও আপনার শিশুর সুস্থতা বজায় রাখার জন্য স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস অর্থাৎ পুষ্টিকর ও নিরাপদ খাদ্য গ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
• গর্ভের সন্তানের সুস্থতার জন্য অবশ্যই ধূমপান, মদ্যপান অথবা অতিরিক্ত ক্যাফেইন (চা, কফি) সেবনের মত অভ্যাস থাকলে তা পরিত্যাগ করতে হবে।
• এছাড়াও গর্ভাবস্থায় কি কি নিয়ম মেনে চলতে হবে সে বিষয়ে ডাক্তার, নিকটস্থ স্বাথ্যকেন্দ্রের স্বাস্থ্যকর্মী বা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ধাত্রীর সাথে নিয়মিত পরামর্শ করা উচিত।

গর্ভের শিশু কীভাবে বড় হচ্ছে
গর্ভাবস্থার ৬ষ্ঠ থেকে ৭ম সপ্তাহে, আপনার গর্ভের ভ্রূণের দেহে যেখানে হার্ট থাকার কথা, সেখানে একটি স্ফীত অংশ দেখা যায়, যা পরবর্তীতে পূর্ণাঙ্গ হার্ট গঠন করে। এছাড়া নিউরাল টিউব নামে মেরুদণ্ডী প্রাণিদের ভ্রূণের দেহের যেই টিউবের মত অংশ থাকে, এর সামনেও একটি স্ফীতি দেখা যায়, যা পরবর্তীতে শিশুর মাথা ও মস্তিষ্ক গঠন করে। নিউরাল টিউব থেকে পরবর্তীতে মেরুদন্ডও গঠিত হয়।
এসময় ভ্রূণটির দেহ বাঁকানো থাকে এবং এর একটি লেজের মত অংশ থাকে, ফলে একে দেখতে অনেকটা ব্যাঙাচির মত মনে হয়। এই সময়ে মাসিকের রাস্তা দিয়ে আল্ট্রাসাউন্ড (ভ্যাজাইনাল) স্ক্যান করা হলে অনেকসময় ভ্রূণের হৃদস্পন্দন টের পাওয়া যায়।
ভ্রূণের বর্ধিষ্ণু হাত ও পাগুলো (limb buds) এসময় ছোট ছোট স্ফীতি বা ফোলা অংশের মত মনে হয়।
মাথার দু’পাশের অগভীর খাঁজের মত জায়গা থেকে পরে কান সৃষ্টি হয় আর মাথার সামনের দিকের অংশ আরো গভীর ও কোটরাগত হয়ে চোখের সৃষ্টি করে।
ইতিমধ্যে, ভ্রূণটি একটি স্বচ্ছ ও পাতলা চামড়া দিয়ে আবৃত হয়ে যায়।

গর্ভাবস্থার সপ্তম সপ্তাহ

গর্ভাবস্থার ৭ম থেকে ৮ম সপ্তাহের মধ্যে আপনার গর্ভের আকার প্রায় একটি লেবুর মত হয়। আপনার গর্ভাশয় বাড়ন্ত শিশুটিকে ধারণের জন্য ক্রমাগত বড় হতে থাকে হতে থাকে, এর আশেপাশের পেশি বা লিগামেন্ট গুলোতে চাপ পড়ে, ফলে আপনি পেটে হালকা টান বা ব্যথা অনুভব করতে পারেন।
এসময় আপনার শরীরে রক্ত সঞ্চালনের বা চলাচলের পরিমাণ অনেকাংশে বেড়ে যায়, এই বাড়তি সঞ্চালন গর্ভের শিশুর নিয়মিত ও পর্যাপ্ত অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহ নিশ্চিত করে৷ এই বাড়তি চাহিদার কারণে আপনার ঘন ঘন পিপাসা পাওয়াটা স্বাভাবিক। এসময় দিনে অন্তত ৮ গ্লাস পানি পান করা উচিত।
এসময় আপনার ক্লান্তি বোধ হতে পারে৷ স্তনে ব্যথা বা স্তনের আকার বৃদ্ধি পেয়েছে এমনটা বোধ হতে পারে এবং স্বাভাবিকের চেয়ে ঘন ঘন প্রস্রাবের প্রয়োজন হতে পারে।
অনেকে এসময়ে বমিবমি ভাব ও ক্লান্তি বোধ করেন ও গর্ভাবস্থার অন্যান্য কিছু ছোটখাটো সমস্যা যেমন, কষা পায়খানা, পায়ের পেশী বা পাতায় ব্যথা, মাথা ঘুরানো, অতিরিক্ত গরম অনুভব করা, ত্বকে কালো কালো ছোপ দেখতে পাওয়া, কোমরে ব্যথা ইত্যাদি বোধ করা শুরু করেন, যা সাধারণত বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে থাকে।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই, এই বমি বমি ভাব ও বমি (মর্নিং সিকনেস) গর্ভাবস্থার ১৪ তম সপ্তাহ বা এর কাছাকাছি সময়ে গিয়ে সেরে ওঠে।

যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে:
কোন কোন ইনফেকশন গর্ভাবস্থায় ভ্রূণের ক্ষতির কারণ হতে পারে। যদি মনে হয় আপনার কোন ধরনের ইনফেকশন হয়েছে তবে এ ব্যাপারে ডাক্তার বা নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের স্বাস্থ্যকর্মী বা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ধাত্রীর সাথে পরামর্শ করুন, যেন দ্রুত প্রয়োজনীয় সেবা নিশ্চিত করা যায়।
গর্ভাবস্থায় আপনার দাঁতের মাড়িতে ব্যথা বা রক্তপাত হতে পারে৷ এধরনের সমস্যা এড়ানোর জন্য দাঁত ও মাড়ির সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে ওরাল হাইজিন (Oral Hygiene) অর্থাৎ নিয়মিত দাঁত ও মাড়ির যত্ন নেয়া (নিয়মিত দুই বেলা দাঁত ব্রাশ করা, বার বার মুখ কুলি করা ইত্যাদি) এর কোন বিকল্প নেই।
৮ম থেকে ১৪তম সপ্তাহের মধ্যে আপনার প্রথম গর্ভকালীন চেক-আপ (ফার্স্ট এন্টিনেটাল এপয়েন্টমেন্ট) করানো সব থেকে ভালো৷ তাই এ সপ্তাহেই ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করে পরবর্তী চেক আপের বিস্তারিত সময়সূচি জেনে নিন।
গর্ভাবস্থায় শরীরে হরমোনের মাত্রার ওঠা নামার কারণে অনেকেই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন । এসময় অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার কারণে অনেকে ঘুমের মধ্যে বিচিত্র স্বপ্ন দেখেন আবার অনেকে একেবারেই ঘুমাতে পারেন না৷ বিচলিত না হয়ে নিজের যত্ন নিন, নিজের খেয়াল রাখুন। মন ভালো করে দেয়, এমন সব কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করুন।

গর্ভের শিশু কীভাবে বড় হচ্ছে:
৭ম সপ্তাহের মধ্যে আপনার গর্ভের ভ্রূণ লম্বায় প্রায় ১০ মিলিমিটার বা ১ সেন্টিমিটার হয়ে যায়। এই সময়ে ভ্রূণটি দেখতে অনেকটা ব্যাঙাচির মতো থাকে, তাই ভ্রূণের মাথার তালু থেকে লেজের মতো অংশটি পর্যন্ত দৈর্ঘ্য হিসাব করা হয়। এই লেজের মত অংশটি ক্রমান্বয়ে ছোট হতে থাকে ও কয়েক সপ্তাহ পরে আর এটি দেখা যায় না৷
এসময় মস্তিষ্ক খুব দ্রুত বেড়ে ওঠে, ফলে শরীরের অন্যান্য অঙ্গের তুলনায় মাথা অনেক তাড়াতাড়ি বাড়তে থাকে। ভ্রূণের মাথার সামনের অংশ বা কপাল বেশ বড় হয়, এর চোখ-কানগুলোও বিকশিত হতে থাকে। এসময় চোখের পাতা তৈরি হয়ে চোখ দুটোকে সুরক্ষিত করে।
এসময় অন্তঃকর্ণ (কানের সব থেকে ভেতরের অংশ) তৈরি হতে শুরু করে, তবে মাথার দু’পাশে বহিঃকর্ণ (কানের বাইরের অংশ) আরো কয়েক সপ্তাহ পরে দেখা যায়৷
বর্ধিষ্ণু হাত ও পায়ে তরুণাস্থি তৈরি হতে শুরু করে, যা থেকে পরবর্তীতে অস্থি অর্থাৎ হাড় গঠিত হয়।বর্ধিষ্ণু হাতগুলো বড় হওয়ার সাথে সাথে এর প্রান্তভাগ চ্যাপ্টা হয়ে হাতের তালু গঠন করে।
মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ড (সেই সাথে স্নায়ুতন্ত্র) সুগঠিত হওয়ার সাথে সাথে স্নায়ুকোষ গুলো সংখ্যাবৃদ্ধি ও বিকাশ লাভ করতে থাকে। এসময় ভ্রূণটির দেহে প্রতি মিনিটে প্রায় ১০০ টির মত স্নায়ুকোষ (brain cell) তৈরি হতে থাকে। তাই এসময় নিয়মিত ফলিক এসিড সেবন করা জরুরি যেন শিশুটির স্নায়ুতন্ত্রের সঠিক বিকাশ নিশ্চিত হয়।

গর্ভাবস্থার অষ্টম সপ্তাহ

গর্ভধারণের ৭ম থেকে ৮ম সপ্তাহে আপনার গর্ভের আকার প্রায় একটি লেবুর মত হয়। ক্রমশ বড় হতে থাকা গর্ভাশয় আপনার মূত্রথলির আশেপাশে চাপ সৃষ্টি করে বলে এসময় ঘন ঘন প্রস্রাবের প্রয়োজন হতে পারে।
এসময় আপনার ক্লান্তি বোধ হতে পারে৷ স্তনে ব্যথা বা স্তনের আকার বৃদ্ধি পেয়েছে এমনটা বোধ হতে পারে।
এছাড়া অন্যান্য লক্ষণের মধ্যে থাকতে পারে:
• মুখে ধাতব এক ধরনের স্বাদ (মেটালিক টেস্ট) পাওয়া বা খবারের স্বাদ বুঝতে না পারা,
• বমি বমি ভাব হওয়া (মর্নিং সিকনেস),
• মাথাব্যথা,
• মুড সুইং বা ঘন ঘন মেজাজ পরিবর্তন হওয়া,
• খাদ্যাভ্যাসে লক্ষণীয় পরিবর্তন আসা, হঠাৎ নতুন কোন খাবারে তীব্র রুচি বা প্রিয় কোন খাবারে অরুচি দেখা দেওয়া,
• ঘ্রাণ শক্তি আগের চেয়ে তীব্র হওয়া,
• ছোটখাটো বিষয়ে মন খারাপ লাগা/কান্না করে ফেলার প্রবণতা দেখা দেওয়া। গর্ভাবস্থায় শরীরের হরমোনগুলোর ওঠানামার কারণে এসব লক্ষণ দেখা দেয়,
• সাদস্রাবের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া,
• পিরিয়ডের ব্যথার মত তলপেটে মোচড়ানো বা ব্যথা হওয়া,
• পেটে অস্বস্তি বা পেট ফাঁপা হয়েছে এমন মনে হওয়া।

এরই মধ্যে আপনার মাসিক বা পিরিয়ড বন্ধ থাকার প্রায় দুই মাস হয়ে যায় । তবে কারো কারো ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় ও কিছুটা রক্তপাত হতে পারে৷ গর্ভাবস্থায় যে কোন ধরনের রক্তপাতের ব্যাপারে অবশ্যই আপনার ডাক্তার, নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের স্বাস্থ্যকর্মী বা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ধাত্রীকে জানান, বিশেষত এই রক্তপাত যদি নিয়মিত হয় এবং এর সাথে আপনার পেটে ব্যথা অনুভূত হয়।

যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে:
এ সময়ের মধ্যেই আপনার প্রথম গর্ভকালীন চেক-আপ (এন্টিন্যাটাল অ্যাপয়েন্টমেন্ট) করানো উচিৎ এবং গর্ভাবস্থায় কয়বার এই সেবা নিতে হবে, কি কি পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে হবে এইসব বিষয়ে আপনার ডাক্তার, নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের স্বাস্থ্যকর্মী বা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ধাত্রীর সাথে বিস্তারিত আলোচনা করা উচিৎ।

গর্ভের শিশু কীভাবে বড় হচ্ছে:
গর্ভধারণের ৮ম সপ্তাহ থেকে গর্ভের শিশুকে বলা হয় ‘ফিটাস’, যার মাধ্যমে আপনার অনাগত সন্তানকে বুঝানো হয়।
এসময়ে ফিটাসের হাত, পায়ের চেয়ে দৈর্ঘ্যে লম্বা হয়, কারণ এসময় শরীরের উপরের অংশ নিচের অংশের চেয়ে দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে। পাগুলো সাথে সাথে বাড়লেও পায়ের বিভিন্ন অংশ তখনো আলাদা ভাবে বুঝা যায় না। পায়ের হাঁটু, গোড়ালি, উরু ও আঙুল গুলো বিকশিত হতে আরো কিছু সময় লাগে।
ফিটাসটি এমনিওটিক থলে (পানীর মত তরলে পূর্ণ একটি স্বচ্ছ কিন্তু শক্তিশালী থলে) এর ভেতরেই অবস্থান করে। গর্ভাশয় প্রাচীরে সংযুক্ত হওয়ার জন্য কাঠামো তৈরির মাধ্যমে অমরা বা ফুল (প্লাসেন্টা) বিকশিত হতে থাকে।
এই সময়েও ভ্রূণটি তার প্রয়োজনীয় পুষ্টি কুসুম থলে (yolk sac) হতে পেয়ে থাকে। গর্ভধারণের পরে প্রথমেই গর্ভের যে আবৃত অংশ দেখা যায়, তাকে ভ্রূণের কুসুম থলে বলা হয়।

গর্ভাবস্থার নবম সপ্তাহ

৯ম সপ্তাহে আপনার শরীরে গর্ভকালীন বিশেষ হরমোন ‘হিউম্যান কোরিয়নিক গোনাডোট্রপিন’-এর মাত্রা সবচেয়ে বেড়ে যায়। এছাড়া ইস্ট্রোজেন, প্রোজেস্টেরন হরমোনগুলোও উচ্চমাত্রায় থাকে। এসব হরমোন গর্ভের শিশুর সঠিক বৃদ্ধি ও বিকাশ নিশ্চিত করে। তবে সেই সাথে এদের মাত্রার এই ওঠা-নামার কারণে এসময় আপনার আবেগ-অনুভূতি বা সংবেদনশীলতা চরম মাত্রায় থাকে। অনেকেই এই অভিজ্ঞতাকে ‘ইমোশনাল রোলারকোস্টার’ বা ‘অনুভূতির চড়াই-উৎরাই’ হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকেন।
গর্ভাবস্থার এই সময়টা অনেকের জন্য বেশ কঠিন বা অস্বস্তিকর হতে পারে। তবে পরবর্তী সপ্তাহগুলোতে আস্তে আস্তে গর্ভবতী মায়েরা এই অস্বস্তি কাটিয়ে উঠতে থাকেন।

নিচের লক্ষণগুলো এসময় আরও তীব্রভাবে দেখা দেয়:
• স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ক্লান্ত অনুভব করা,
• স্তনে হালকা ব্যথা বা চাপ দিলে ব্যথা অনুভব করা,
• মুখে ধাতব এক ধরনের স্বাদ (মেটালিক টেস্ট) পাওয়া বা খবারের স্বাদ বুঝতে না পারা,
• বমি বমি ভাব হওয়া (মর্নিং সিকনেস),
• মাথাব্যথা,
• মুড সুইং বা ঘন ঘন মেজাজ পরিবর্তন হওয়া,
• খাদ্যাভ্যাসে লক্ষণীয় পরিবর্তন আসা – হঠাৎ নতুন কোন খাবারে তীব্র রুচি বা প্রিয় কোন খাবারে অরুচি দেখা দেওয়া,
• ঘ্রাণ শক্তি আগের চেয়ে তীব্র হওয়া,
• ছোটখাটো বিষয়ে মন খারাপ লাগা/কান্না করে ফেলার প্রবণতা দেখা দেওয়া। গর্ভাবস্থায় শরীরের হরমোনগুলোর ওঠানামার কারণে এসব লক্ষণ দেখা দেয়,
• সাদস্রাবের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া,
• পিরিয়ডের ব্যথার মত তলপেটে মোচড়ানো বা ব্যথা হওয়া,
• পেটে অস্বস্তি বা পেট ফাঁপা হয়েছে এমন মনে হওয়া,
• চামড়ায় ছোপ ছোপ দাগ হওয়া।
যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে
এসময় আপনার আবেগ-অনুভূতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ঝামেলা পোহাতে হতে পারে। যতটা সম্ভব নিজেকে উৎফুল্ল ও হাসিখুশি রাখার চেষ্টা করুন। প্রচুর পরিমাণে বিশ্রাম নিন ও চিন্তামুক্ত থাকার চেষ্টা করুন।
নিয়মিত মাঝারি বা হালকা ধরনের শরীরচর্চা করলে এসময় শরীর ও মন ভালো থাকে, তবে ভারী কাজ বা বেশি শারীরিক পরিশ্রম হয় এমন কোন ব্যায়াম করা উচিত নয়। এছাড়া ভারী কিছু ওঠানামা করা থেকেও এসময় বিরত থাকা উচিত।
অনেকের এই সময়টায় ঘন ঘন মাথাব্যথা হতে পারে। তবে গর্ভাবস্থায় আইবুপ্রোফেন বা অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ সেবন করতে নিষধ করা হয়। গর্ভাবস্থায় মাথাব্যথা বা অন্য কোন শারীরিক সমস্যায় ওষুধ সেবনের আগে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিশ্চিত হয়ে তবেই ওষুধ সেবন করা উচিত।

গর্ভের শিশু কীভাবে বড় হচ্ছে
এ সপ্তাহে শিশুটির মুখমণ্ডল ধীরে ধীরে সুগঠিত হতে থাকে। চোখগুলো আরও বড় ও স্পষ্ট হতে থাকে, সাথে চোখের মণিও রঙিন হতে থাকে। মুখ ও এর ভেতরের জিভ তৈরি হয়; জিভের মধ্যে ছোট ছোট টেস্ট বাড বা স্বাদকুঁড়ি (জিভের যে অংশগুলোর সাহায্যে খাবারের স্বাদ পাওয়া যায়) তৈরি হয়।
শিশুর হাত ও পা বিকশিত হয়। এই সপ্তাহেও আঙুলগুলো একে অপরের থেকে আলাদা হয় না, তবে উঁচু জায়গাগুলো (ridge) দেখে বোঝা যায় হাত ও পায়ের আঙুলগুলো কোথায় তৈরি হবে।
হৃৎপিণ্ড (হার্ট), মস্তিষ্ক (ব্রেইন), ফুসফুস, কিডনি ও অন্ত্রের মত প্রধান অঙ্গগুলোর বিকাশ চলতে থাকে। শিশুটির যৌনাঙ্গও এসময় ধীরে ধীরে গঠিত হতে থাকে। তবে ১৮ থেকে ২১ সপ্তাহের আগ পর্যন্ত শিশুটি মেয়ে না ছেলে তা বোঝা যায় না।
গর্ভের ৯ম সপ্তাহে শিশুটি মাথা থেকে পা পর্যন্ত প্রায় ২২ মিলিমিটার বা ১ ইঞ্চির মত (আকারে প্রায় মাঝারি সাইজের একটি লিচু বা আমলকীর সমান) লম্বা হয়ে থাকে।

গর্ভাবস্থার দশম সপ্তাহ
দশম সপ্তাহ নিয়ে আপনার যা জানা প্রয়োজন
এই সপ্তাহে আপনার গর্ভাশয় আকারে একটি বড়সড় কমলালেবুর মতো হয়। ক্রমশ বড় হতে থাকা গর্ভের কারণে আপনার খাবার হজমের সাথে জড়িত অঙ্গগুলোর উপর চাপ পড়ে, ফলে হজমের সমস্যা বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা ও বুকে জ্বালাপোড়া হতে পারে।
হজমের সমস্যা এড়াতে নিচের তিনটি কাজ করার চেষ্টা করুন:

• অতিরিক্ত তেলচর্বি বা মশলাযুক্ত ভারী খাবার এড়িয়ে চলুন,
• পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন ও
• প্রতিবেলার খাবারের পর হালকা হাঁটাচলা করুন

এছাড়াও নিচের লক্ষণগুলো থাকতে পারে:
• স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ক্লান্ত অনুভব করা,
• স্তনে হালকা ব্যথা বা চাপ দিলে ব্যথা অনুভব করা,
• মুখে ধাতব এক ধরনের স্বাদ (মেটালিক টেস্ট) পাওয়া বা খবারের স্বাদ বুঝতে না পারা,
• বমি বমি ভাব হওয়া (মর্নিং সিকনেস),
• মাথাব্যথা,
• মুড সুইং বা ঘন ঘন মেজাজ পরিবর্তন হওয়া,
• খাদ্যাভ্যাসে লক্ষণীয় পরিবর্তন আসা, হঠাৎ নতুন কোন খাবারে তীব্র রুচি বা প্রিয় কোন খাবারে অরুচি দেখা দেওয়া,
• ঘ্রাণ শক্তি আগের চেয়ে তীব্র হওয়া,
• মাথা ঘুরানো,
• সাদস্রাবের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া,
• পিরিয়ডের ব্যথার মত তলপেটে মোচড়ানো বা ব্যথা হওয়া,
• পেটে অস্বস্তি বা পেট ফাঁপা হয়েছে এমন মনে হওয়া,
• চামড়ায় ছোপ ছোপ দাগ হওয়া।

যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে
গর্ভবতী নারী ও গর্ভের সন্তান সহজেই ফ্লু তথা ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে, তাই গর্ভবতী মা যেন ঠাণ্ডাজ্বর বা সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত না হন, সে ব্যাপারে সাবধানে থাকতে হবে। প্রয়োজনে ডাক্তারের চেম্বার বা ম্যাটারনিটি ক্লিনিক থেকে ফ্লু বা হুপিং কাশির টিকা দেয়া যেতে পারে৷
গর্ভাবস্থায় কোন নারী যদি পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হন তবে তা বিভিন্ন জটিলতা, মারাত্মক ইনফেকশন, এমনকি অকাল গর্ভপাত বা গর্ভের শিশুর মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

বিশেষ তথ্য
গর্ভাবস্থায় অনেক নারীই পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হন। এই নির্যাতন শারীরিক, মানসিক বা অর্থনৈতিকও হতে পারে। এধরনের পরিস্থিতিতে যথাসম্ভব নিজেকে ও গর্ভের শিশুটিকে নিরাপদে রাখার চেষ্টা করতে হবে। প্রয়োজন হলে আইনী সহায়তা নিতে হবে। নির্যাতন দমনে আইনী সহায়তার জন্য 10921, 999, 333, 109 সহ অন্যান্য সরকারী সহায়তা কেন্দ্রে ফোন করে সাহায্য চাইতে পারেন।
এছাড়া আপনি কোথায় (কোন হাসপাতাল বা ক্লিনিকে বা সরকারিভাবে প্রশিক্ষিত দাই-এর সাহায্যে) সন্তান প্রসব করতে চান তা আপনার সুবিধা অনুযায়ী আগে থেকেই নির্ধারণ করে রাখতে পারেন। এক্ষেত্রে কিছু জিনিস মাথায় রাখতে হবে, যেমন আপনার বাড়ির এলাকা, আপনার বা আপনার গর্ভের শিশুর কোনো রোগ বা অন্যান্য সমস্যা।
সব মিলিয়ে আপনার বাসার কাছাকাছি কোনো ভালো সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানকেই বেছে নেয়া উচিত।

গর্ভের শিশু কীভাবে বড় হচ্ছে

১০ সপ্তাহ সময়কালে আপনার শিশু মাথা থেকে পা পর্যন্ত প্রায় ৩০ মিলিমিটার বা এক ইঞ্চির চেয়ে সামান্য বেশি লম্বা হয়ে থাকে।
এসময় শিশুটির মাথার দু’পাশে কান দু’টি বিকশিত হতে থাকে, সেই সাথে কানের ভেতরের অংশগুলো (ear canal) মাথার মধ্যেই তৈরি হতে থাকে। শিশুর মুখমণ্ডল আরও সুগঠিত হয় – উপরের ঠোঁট আর ছোট্ট দুটি নাকের ফুটো এসময়ে দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। চোয়ালের হাড়গুলো গড়ে উঠতে থাকে; এই সময়ের মাঝেই এতে ভবিষ্যতের সব দুধদাঁত তৈরি হয়ে যায়।
শিশুর হৃৎপিণ্ড এখন সম্পূর্ণ সুগঠিত থাকে। এটি মিনিটে ১৮০ বার বিট দিতে বা স্পন্দিত হতে থাকে, যা আপনার নিজের হৃৎস্পন্দন তথা হার্টবিটের তুলনায় প্রায় ২-৩ গুণ বেশি।
শিশুটি এসময় খানিকটা ঝাঁকুনির মত নড়াচড়া করে, যা আল্ট্রাসাউন্ড স্ক্যানের সময় দেখা যেতে পারে।

গর্ভাবস্থার ১১তম সপ্তাহ
১১তম সপ্তাহ নিয়ে আপনার যা জানা প্রয়োজন
গর্ভাবস্থায় শরীরে রক্ত চলাচলের পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়। গর্ভের শিশুর বৃদ্ধির জন্য এই বাড়তি রক্ত চলাচল জরুরি, তবে এর ফলে গর্ভবতী মায়েরা অতিরিক্ত ক্লান্ত বোধ করে থাকেন; অনেকের ক্ষেত্রে মাথা ঘুরানো বা মাথাব্যথার মত সমস্যাও দেখা দেয়।
এছাড়া গর্ভের আকার বাড়ার সাথে সাথে এর আশেপাশের পেশি বা লিগামেন্টে টান পড়ার ফলে অনেকে পেটেও ব্যথা অনুভব করেন।
সেই সাথে এসময় গর্ভাবস্থার অন্যান্য লক্ষণ গুলোও থাকতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে:
• স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ক্লান্ত অনুভব করা,
• স্তনে হালকা ব্যথা বা চাপ দিলে ব্যথা অনুভব করা,
• মুখে ধাতব এক ধরনের স্বাদ (মেটালিক টেস্ট) পাওয়া বা খবারের স্বাদ বুঝতে না পারা,
• বমি বমি ভাব হওয়া (মর্নিং সিকনেস),
• হজমে সমস্যা ও বুক জ্বালাপোড়া করা,
• মাথাব্যথা,
• মুড সুইং বা ঘন ঘন মেজাজ পরিবর্তন হওয়া,
• খাদ্যাভ্যাসে লক্ষণীয় পরিবর্তন আসা – হঠাৎ নতুন কোন খাবারে তীব্র রুচি বা প্রিয় কোন খাবারে অরুচি দেখা দেওয়া,
• ঘ্রাণ শক্তি আগের চেয়ে তীব্র হওয়া,
• মাথা ঘুরানো,
• সাদস্রাবের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া,
• পিরিয়ডের ব্যথার মত তলপেটে মোচড়ানো বা ব্যথা হওয়া,
• পেটে অস্বস্তি বা পেট ফাঁপা হয়েছে এমন মনে হওয়া,
• চামড়ায় ছোপ ছোপ দাগ হওয়া।
যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে
• গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত চা-কফি খাওয়ার অভ্যাস বাদ দিলে মিসক্যারেজ বা অকাল গর্ভপাতের ঝুঁকি কমানো সম্ভব। এছাড়া ক্যাফেইন সেবনের মাত্রা কমালে গর্ভের শিশুর কম ওজন নিয়ে জন্মানোর ঝুঁকিটাও কমে। তাই এসময় চা-কফি জাতীয় পানীয় পান করার ক্ষেত্রে সচেতন থাকা উচিত।
• ৮-১৪ সপ্তাহের মধ্যে সাধারণত প্রথম আলট্রাসনোগ্রাফি স্ক্যানটি করানো হয়। এই স্ক্যানের মাধ্যমে গর্ভের শিশুর বৃদ্ধি দেখে ডেলিভারি তথা প্রসবের সম্ভাব্য তারিখ হিসাব করা যায় বলে একে ‘ডেটিং স্ক্যান’ও বলা হয়। আপনার ডেটিং স্ক্যানটি কোন সপ্তাহে করানো হবে সে বিষয়ে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলে নিশ্চিত হয়ে নিন।
• আমাদের দেশে প্রতিবছর প্রায় ১,৫০০ শিশু ‘ডাউন সিনড্রোম’ নামের শারীরিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক ব্যাধি নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। তাই সম্ভব হলে গর্ভাবস্থার ১০ থেকে ১৪ তম সপ্তাহের ভেতরে একটি স্ক্রিনিং টেস্ট করিয়ে নেয়া উচিত; এই স্ক্রিনিং টেস্টের মধ্যে থাকে আলট্রাসনোগ্রাম এবং কিছু রক্ত পরীক্ষা৷ আপনার ডেটিং স্ক্যান টি করানোর সময়ই এ বিষয়ে ডাক্তারের সাথে আলোচনা করে নিতে পারেন।
তাছাড়া গর্ভের শিশুর কোনো জন্মগত ত্রুটি আছে কিনা জানতে আপনার ডাক্তার এই সপ্তাহে আপনাকে ‘অ্যানোমালি স্ক্যান’ নামের এক বিশেষ আলট্রাসনোগ্রাফি স্ক্যান করার উপদেশ দিতে পারেন।
গর্ভের শিশু কীভাবে বড় হচ্ছে
শিশুটি এসময় দ্রুত বেড়ে উঠতে থাকে। প্লাসেন্টা বা গর্ভফুল তথা অমরাও খুব দ্রুত বিকশিত হতে থাকে। ১২ সপ্তাহের মধ্যে এটি পুরোপুরিভাবে গড়ে ওঠে।
মুখমণ্ডলের হাড়গুলোও এই সময়েই গঠিত হয়ে যায়৷ চোখের পাতা বন্ধ অবস্থায় থাকে। পরবর্তী কয়েক মাসও এটি এই অবস্থাতেই থাকে। মাথার দু’পাশে ছোট কুঁড়ির মত কানের অংশ গুলো বৃদ্ধির সাথে সাথে এখন অনেকটাই পরিপূর্ণ কানের মত দেখতে হয়ে যায়। শিশুর মাথা এই সপ্তাহে লম্বায় তার পুরো শরীরের তিন ভাগের এক ভাগ-এর সমান হয়। তবে শরীরের বাকি অংশ ও দ্রুত বাড়তে থাকে।
দেহ বাঁকানো থেকে ধীরে ধীরে সোজা হতে থাকে। হাত ও পায়ের জোড়া লাগানো আঙুলগুলো আলাদা হয় এবং আঙুলের নখ তৈরি হয়।
শিশুটি এসময় গর্ভের ভেতরে হাত-পা ছোঁড়াছুড়ি শুরু করে, তবে এখনো গর্ভবতী মা এই নাড়াচাড়া টের পান না।

গর্ভাবস্থার ১২তম সপ্তাহ
১২তম সপ্তাহ নিয়ে আপনার যা জানা প্রয়োজন
গর্ভাবস্থার শুরুর দিকের সপ্তাহগুলোর নানা লক্ষণ এসময়ে এসে সাধারণত ধীরে ধীরে কমতে থাকে। ১২তম সপ্তাহের মধ্য দিয়ে আপনার গর্ভাবস্থার প্রথম ৩ মাস (ফার্স্ট ট্রাইমেস্টার) শেষ হয়।
এসময় আপনার পাইলস ও কোষ্ঠকাঠিন্য বা পায়খানা কষা হওয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে। সবার ক্ষেত্রেই এমনটা হবে তা নয়, তবে এটি বেশ কমন এবং এমনটা হলে গর্ভবতী মায়েরা শারীরিক অস্বস্তি বোধ করে থাকেন। এই কোষ্ঠকাঠিন্য এড়ানোর জন্য বেশি বেশি আঁশযুক্ত খাবার ও প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। সাথে প্রয়োজন নিয়মিত হালকা শরীরচর্চা বা ব্যায়াম।
গর্ভাবস্থায় প্রায়ই পেটে ব্যথা বা পেটে মোচড় দেয়ার মত অনুভূতি হতে পারে৷ এটি সাধারণত চিন্তিত হওয়ার মত কিছু নয়। কোষ্ঠকাঠিন্য, পেটফাঁপা বা পেট আকারে বড় হওয়ার সাথে সাথে লিগামেন্টগুলিতে টান পড়ার কারণে এমনটা হতে পারে৷
আপনার যদি একটানা পেট ব্যথা হতে থাকে, বা খুব বেশি ব্যথা হয়, অথবা সাথে রক্তপাত ও অন্যান্য লক্ষণ থাকে তবে দেরি না করে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।
যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে:
গর্ভাবস্থায় সুস্থ থাকার জন্য যেসব পরামর্শ মেনে চলা উচিত সেগুলো মানছেন কিনা খেয়াল করুন যেমন স্বাস্থ্যকর খাবার, নিয়মিত শরীরচর্চা, ধূমপান এড়িয়ে চলা, ইত্যাদি।
গর্ভাবস্থার ৮ম থেকে ১১তম সপ্তাহের মধ্যে ডাক্তার আপনাকে আলট্রাসাউন্ড স্ক্যান করার পরামর্শ দিতে পারেন। গর্ভে একাধিক/যমজ শিশু থাকলে এই স্ক্যানের মাধ্যমে তা জানা যাবে। এছাড়া স্ক্যান থেকে গর্ভের শিশুর আকার ও বৃদ্ধি দেখে সে অনুযায়ী আপনার ডেলিভারির সম্ভাব্য তারিখও হিসাব করা যাবে।
এসময় গর্ভকালীন স্ক্রিনিং পরীক্ষা (অ্যান্টিনেটাল স্ক্রিনিং টেস্ট) করানোর পরামর্শ দেয়া হয়, যার মধ্যে থাকতে পারে অ্যানোমালি স্ক্যান ও কিছু রক্ত পরীক্ষা। গর্ভের শিশুর কোন স্বাস্থ্যগত সমস্যা বা জন্মগত ত্রুটি থাকলে তা এই স্ক্রিনিং টেস্টে ধরা পড়ে। এসব ক্ষেত্রে ডাক্তার সমস্যা সমাধানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা সম্পর্কে আপনাকে জানাতে পারবেন৷
এছাড়া আপনি ডেলিভারি অর্থাৎ বাচ্চা প্রসব কোথায় করাবেন সে ব্যাপারেও এখন থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে রাখতে পারেন, এতে পরবর্তীতে আপনারই সুবিধা হবে৷ ডেলিভারির স্থান নির্ধারণের সময় আপনার ও পরিবারের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা, বাসস্থান থেকে দূরত্ব ও কোথায় ভালো সেবা নিশ্চিত হবে – এই বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন।
গর্ভের শিশু কীভাবে বড় হচ্ছে
গর্ভাবস্থার ১২তম সপ্তাহে অর্থাৎ আপনার সর্বশেষ মাসিক/মেন্স তথা পিরিয়ডের ১২ সপ্তাহ পরে গর্ভের ভ্রূণটির (এই ভ্রূণই আপনার গর্ভের ভেতর বড় হতে থাকে এবং পরবর্তীতে পূর্ণাঙ্গ শিশুতে পরিণত হয়) শরীরের কাঠামো পুরোপুরিভাবে তৈরি হয়ে যায়; এখন ভ্রূণটি দৈর্ঘ্যে প্রায় ৫.৪ সেন্টিমিটার বা ২ ইঞ্চির সামান্য বেশি ও ওজনে প্রায় ১৮ গ্রাম হয়।
ইতোমধ্যে প্লাসেন্টা তথা গর্ভফুল বা অমরা পুরোপুরি তৈরি হয়ে ভ্রূণদেহে পুষ্টি সরবরাহের দায়িত্ব নিয়ে নেয়। শরীরের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, পেশি, হাত-পা ও হাড় জায়গামতো চলে আসে। যৌনাঙ্গও প্রায় গঠিত হয়ে যায়, যদিও শিশুটি ছেলে না মেয়ে তা এখনও বোঝা সম্ভব হয় না।
১২ সপ্তাহের পর থেকে শিশুটি আকারে আরও বড় ও পরিণত হতে থাকে৷ শরীরের নরম হাড় বা তরুণাস্থিগুলো সব আস্তে আস্তে মজবুত হাড়ে পরিণত হতে থাকে।
এসময় শিশুটি গর্ভের ভেতরে হালকা নড়াচড়াও করতে পারে, তবে মা এত তাড়াতাড়ি গর্ভের শিশুর নড়াচড়া বুঝতে পারেন না। গর্ভের ১৬-২৪ সপ্তাহের মধ্যে একজন মা সাধারণত এই নড়াচড়া প্রথমবারের মত অনুভব করে থাকেন। তবে যারা প্রথমবারের মত মা হচ্ছেন, তারা সাধারণত ২০ সপ্তাহের আগে এই নড়াচড়া বুঝতে পারেন না।

গর্ভাবস্থার ১৩তম সপ্তাহ

যদি আপনি এতদিন ধরে বমিবমি ভাব ও ক্লান্তি অনুভব করে থাকেন (মর্নিং সিকনেস), তবে ১৩ থেকে ১৪ সপ্তাহের দিকে আপনি সাধারণত একটু ভালো বোধ করতে শুরু করবেন।
অনেকের এ সময়ে যৌন সহবাসের ইচ্ছা বেড়ে যেতে পারে৷ গর্ভাবস্থায় হরমোনগুলোর তারতম্য ও কোমর থেকে যৌনাঙ্গ ও নিতম্বের অঞ্চলটুকুতে রক্ত চলাচল বেড়ে যাওয়ার কারণে এমনটা হতে পারে৷ অনেকের ক্ষেত্রেই আবার এমনটা হয় না এবং সেটাও খুব স্বাভাবিক।
গর্ভাশয়ের আকার বাড়ার সাথে সাথে ধীরে ধীরে আপনার পেটের আকার বড় হয় (Baby bump)। ক্রমশ বড় হতে থাকা গর্ভাশয় মূত্রথলিতে (দেহের এই অঙ্গটিতে প্রস্রাব জমা হয়) চাপ দেয়ার কারণে গর্ভাবস্থার শুরুর দিকে ঘনঘন প্রস্রাব করার প্রয়োজন হয়৷ তবে ১৩তম সপ্তাহের কাছাকাছি সময়ে এসে এই সমস্যা সাধারণত আর থাকে না।
বিশেষ সতর্কতা
প্রস্রাব করার সময় ব্যথা অনুভব করলে ডাক্তারকে জানান। এই ব্যথা মূত্রনালীর ইনফেকশনের (Urinary tract infection) কারণে হতে পারে৷ গর্ভাবস্থায় মূত্রনালীর ইনফেকশনে আক্রান্ত হওয়ার হার বেড়ে যায়। দ্রুত চিকিৎসা করা না হলে এর থেকে কিডনিতেও ইনফেকশন ছড়িয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।
১৩তম সপ্তাহের সম্ভাব্য ১৫টি লক্ষণ:
• দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়া বা রক্ত পড়া,
• পেটের আকার বাড়ার সাথে সাথে এর চারপাশে পেশিতে টান বা ব্যথা অনুভব করা,
• মাথাব্যথা,
• কিছু ক্ষেত্রে নাক থেকে হালকা রক্ত পড়া,
• পেট ফাঁপা ও কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া,
• বদহজম ও বুক জ্বালাপোড়া করা,
• চাপ দিলে স্তনে ব্যথা অনুভব করা,
• পায়ে ব্যথা,
• অল্পতেই গরম লাগা কিংবা সামান্য গরম আবহাওয়াতেই অস্বস্তি বোধ করা বা হাঁসফাঁস করা,
• মাথা ঘুরানো,
• হাত-পায়ে পানি আসা বা ফুলে যাওয়া,
• প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া বা ইনফেকশন,
• যোনিপথে অর্থাৎ মাসিক/পিরিয়ডের রাস্তায় ইনফেকশন,
• মুখের বা শরীরের অন্যান্য অংশের চামড়ায় ছোপ ছোপ দাগ পড়া,
• অনেকের ক্ষেত্রে মাথার চুল আগের চেয়ে ঘন, কালো হয়ে ওঠা।
এছাড়া বিগত সপ্তাহগুলোর কিছু কিছু লক্ষণ এ সপ্তাহেও থেকে যেতে পারে, যেমন মর্নিং সিকনেস, মুড সুইং, ইত্যাদি।
যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখা প্রয়োজন
• গর্ভাবস্থায় দাঁত ও দাঁতের মাড়িতে ব্যথা বা মাড়ি থেকে রক্ত পড়া খুব কমন। তাই এসময় দাঁত ও মাড়ির সুস্বাস্থ্যের ব্যাপারে সচেতন হতে হবে ও নিয়মিত যত্ন নিতে হবে।
• আপনার গর্ভে যদি যমজ শিশু থাকে, তাহলে বাড়তি যত্ন ও সতর্কতার প্রয়োজন হবে। এ বিষয়ে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলে বিস্তারিত জেনে নিন৷
• গর্ভাবস্থার ১৬-৩২ সপ্তাহ সময়কালে হুপিং কাশির টিকা দেয়া যেতে পারে৷ এ বিষয়ে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলে নিশ্চিত হয়ে নিন।
• গর্ভকালীন ডায়াবেটিস বা জেসটেশনাল ডায়াবেটিস সম্পর্কে সচেতন থাকুন। প্রয়োজনে এর জন্য নির্ধারিত পরীক্ষাগুলো করিয়ে নিন।
গর্ভের শিশু এই সপ্তাহে কীভাবে বড় হচ্ছে
এসময় সাধারণত গর্ভের শিশুর ওজন প্রায় ২৫ গ্রাম হয়ে থাকে।
শিশুটির দেহের ভেতরে ডিম্বাশয়(মেয়ে শিশুর ক্ষেত্রে) বা শুক্রাশয় (ছেলে শিশুর ক্ষেত্রে) পুরোপুরি তৈরি হয়ে যায়। দেহের বাইরের দিকে যৌনাঙ্গগুলো তৈরি হতে থাকে। ডিম্বাশয় ও শুক্রাশয় বয়ঃসন্ধিকালে হরমোন তৈরি এবং ভবিষ্যতে সন্তান জন্মদানসহ বিভিন্ন ধরনের কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
গর্ভের ভেতরে এতদিন শিশুর দুই পায়ের মাঝে যে ফোলা অংশটি ছিল সেখানে এখন পুরুষাঙ্গ (ছেলে শিশুর ক্ষেত্রে) বা ক্লিটোরিস নামের নারী-যৌনাঙ্গের একটি অংশ (মেয়ে শিশুর ক্ষেত্রে) তৈরি হতে থাকে। তবে আল্ট্রাসাউন্ড স্ক্যান এর মাধ্যমে এখনো শিশুটির লিঙ্গ অর্থাৎ শিশুটি আসলে ছেলে না মেয়ে তা ধরা বুঝা যাবে না।

গর্ভাবস্থার ১৪তম সপ্তাহ

এসময় ধীরে ধীরে আপনার ওজন বাড়তে শুরু করে। গর্ভাবস্থায় আপনার ওজন কতটা বেড়েছে তা নির্ভর করে গর্ভধারণের আগে আপনার ওজন কত ছিল তার ওপর। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পুরো গর্ভাবস্থায় ১০ থেকে ১২.৫ কেজির মত ওজন বাড়ে, তবে আপনার ওজন খুব বেশি বেড়ে গেলে বা একেবারেই না বাড়লে এটি আপনার ও আপনার শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আপনার ডাক্তারের সাথে আলোচনা করে নিন।
এই সপ্তাহের কমন লক্ষণগুলো হল:
• দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়া বা রক্ত পড়া,
• পেটের আকার বাড়ার সাথে সাথে এর চারপাশে পেশিতে টান বা ব্যথা অনুভব করা,
• মাথাব্যথা,
• কিছু ক্ষেত্রে নাক থেকে হালকা রক্ত পড়া,
• পেট ফাঁপা ও কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া,
• বদহজম ও বুক জ্বালাপোড়া করা,
• চাপ দিলে স্তনে ব্যথা অনুভব করা,
• পায়ে ব্যথা,
• অল্পতেই গরম লাগা কিংবা সামান্য গরম আবহাওয়াতেই অস্বস্তি বোধ করা বা হাঁসফাঁস করা,
• মাথা ঘুরানো,
• হাত-পায়ে পানি আসা বা ফুলে যাওয়া,
• প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া বা ইনফেকশন,
• যোনিপথে অর্থাৎ মাসিকের রাস্তায় ইনফেকশন,
• মুখের বা শরীরের অন্যান্য অংশের চামড়ায় ছোপ ছোপ দাগ পড়া,
• অনেকের ক্ষেত্রে মাথার চুল আগের চেয়ে ঘন, কালো হয়ে ওঠা।
এছাড়াও বিগত সপ্তাহগুলোর কিছু লক্ষণ এই সপ্তাহেও থেকে যেতে পারে, যেমন মর্নিং সিকনেস, মুড সুইং, ইত্যাদি। এছাড়া কখনও কখনও স্তনের বোঁটা থেকে হলুদ হলুদ তরল বের হতে পারে। এটি হল ‘কলোস্ট্রাম’ বা শালদুধ (মায়ের বুকের প্রথম দুধ)। এমনটা হলে ভয় পাওয়ার কারণ নেই, বুঝতে হবে আপনার শরীর গর্ভের শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য ধীরে ধীরে তৈরি হচ্ছে৷ তবে এই নিঃসরণ অস্বাভাবিক মনে হলে (যেমন এর সাথে রক্ত গেলে, স্তনে অসহ্য ব্যথা হলে, ত্বক লাল হয়ে গেলে, ইত্যাদি) ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে পারেন।
যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে:
গর্ভবতী অবস্থায় ধূমপানের ফলে গর্ভের শিশুর মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। তাই অবশ্যই এসময় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ধূমপান এড়িয়ে চলা উচিত৷
গর্ভের শিশু কীভাবে বড় হচ্ছে
১৪তম সপ্তাহে শিশুটি মাথা থেকে শুরু করে লম্বায় মোট ৮.৫ সেন্টিমিটার বা সাড়ে ৩ ইঞ্চির মতো লম্বা হয়ে থাকে।
এ সময় শিশুটি অল্প অল্প করে অ্যামনিওটিক তরল গিলতে শুরু করে, যা শিশুর পাকস্থলীতে (পেটের ভেতরে) গিয়ে জমা হয়। পাকস্থলী থেকে এই তরল কিডনিতে যায়। এবার শুরু হয় কিডনির কাজ – কিডনি এই তরলকে মূত্র বা প্রস্রাবে পরিণত করার মাধ্যমে সচল হয়। পান করা অ্যামনিওটিক তরল এভাবে প্রস্রাব হিসেবে শরীর থেকে আবার বেড়িয়ে আসে। এভাবেই শিশুটি প্রথমবারের মত প্রস্রাব করে।
[আপনার শিশু ভ্রূণ অবস্থায় আপনার জরায়ুর ভেতরে অ্যামনিওটিক থলি নামের একটি বিশেষ থলির ভেতরে অ্যামনিওটিক তরল দিয়ে ঘেরা থাকে। এ সম্পর্কে আরও জানতে আমাদের গর্ভাবস্থার ৪র্থ সপ্তাহ নিয়ে লেখা আর্টিকেলটি পড়ুন।]

গর্ভাবস্থার ১৫তম সপ্তাহ

গর্ভাবস্থায় সাদাস্রাবের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে, এটি সাধারণত দুশ্চিন্তার কারণ নয়। তবে যদি এই সাদাস্রাব ধরনে বা পরিমাণে অস্বাভাবিক বা গন্ধযুক্ত হয়, আর সাথে চুলকানি থাকে, অথবা প্রস্রাব করার সময় ব্যথা হয়, তাহলে আপনাকে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। এগুলো ইনফেকশনের লক্ষণ হতে পারে। এ ব্যাপারে আরও জানতে আমাদের আর্টিকেলটি পড়তে পারেন।
এসময় গর্ভের আকার বেড়ে যাওয়ার কারণে মাংসপেশিতে টান পড়ে, ফলে অনেকে পিঠ ও কোমরে ব্যথা অনুভব করে।
এই সপ্তাহের কমন লক্ষণগুলো হল:
• দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়া বা রক্ত পড়া,
• পেটের আকার বাড়ার সাথে সাথে এর চারপাশে পেশিতে টান বা ব্যথা অনুভব করা,
• মাথাব্যথা,
• কিছু ক্ষেত্রে নাক থেকে হালকা রক্ত পড়া,
• পেট ফাঁপা ও কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া,
• বদহজম ও বুক জ্বালাপোড়া করা,
• চাপ দিলে স্তনে ব্যথা অনুভব করা,
• পায়ে ব্যথা,
• অল্পতেই গরম লাগা কিংবা সামান্য গরম আবহাওয়াতেই অস্বস্তি বোধ করা বা হাঁসফাঁস করা,
• মাথা ঘুরানো,
• হাত-পায়ে পানি আসা বা ফুলে যাওয়া,
• প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া বা ইনফেকশন,
• যোনিপথে অর্থাৎ মাসিকের রাস্তায় ইনফেকশন,
• মুখের বা শরীরের অন্যান্য অংশের চামড়ায় ছোপ ছোপ দাগ পড়া,
• অনেকের ক্ষেত্রে মাথার চুল আগের চেয়ে ঘন, কালো হয়ে ওঠা।
এছাড়াও বিগত সপ্তাহগুলোর কিছু লক্ষণ এই সপ্তাহেও থেকে যেতে পারে, যেমন মর্নিং সিকনেস, মুড সুইং, ইত্যাদি।
যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে:
গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশনের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই এসময় যথাসম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে ও সঠিক খাদ্যাভ্যাস মেনে চলতে হবে।
গর্ভের শিশুর সুস্থভাবে বেড়ে ওঠার পেছনে সব ধরনের ভিটামিন ও মিনারেল এর ভূমিকা রয়েছে। যেমন:
• ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন-ডি শিশুর হাড় ও দাঁত মজবুত করে।
• আয়রন বা লৌহ-জাতীয় খাবার শিশুর শরীরে রক্তকোষ তৈরিতে এবং রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে সাহায্য করে৷
• জিংক শিশুর অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলোর সঠিক বিকাশে ভূমিকা রাখে।
তাই গর্ভাবস্থায় সবসময় সুষম খাদ্য খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে, যাতে মা ও শিশুর শরীরের সকল চাহিদা সঠিকভাবে পূরণ হয়।
গর্ভের শিশু কীভাবে বড় হচ্ছে
১৫তম সপ্তাহে আপনার শিশুটি লম্বায় প্রায় ১০.১ সেন্টিমিটার বা ৪ ইঞ্চি হয়ে থাকে, যা একটি মাঝারি থেকে বড় সাইজের আপেলের সমান। এসময় শিশুর ওজন হয় প্রায় ৭০ গ্রাম।
এ সপ্তাহে শিশুটির পুরো শরীর জুড়ে এক ধরনের পাতলা লোমের আবরণ তৈরি হয়।
শিশুটির চোখ এই সপ্তাহেও বন্ধ থাকবে, তবে শিশু এ সময়ে ধীরে ধীরে বাইরের উজ্জ্বল আলোর উপস্থিতি বুঝতে শুরু করে৷
এই সপ্তাহ থেকে শিশুটি কানেও শুনতে আরম্ভ করবে। সে এখন থেকে মায়ের গলার স্বর ও হার্টবিট তথা হৃৎস্পন্দন শুনতে পাবে। মায়ের পেটের গুড়গুড় আওয়াজ, এমনকি বাইরের কোন উচ্চ শব্দ বা জোরে বাজতে থাকা গানও তার কান পর্যন্ত পৌঁছাবে।

গর্ভাবস্থার ১৬তম সপ্তাহ

সাধারণত গর্ভবতী অবস্থার প্রথম ৩ মাসের চেয়ে এই সময়ে মায়েরা অনেকটাই ভালো অনুভব করে থাকেন। তারপরও এসময় কিছু কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা থেকেই যায়, বিশেষ করে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা গর্ভাবস্থার যে কোন সময়ই দেখা দিতে পারে৷ তাই নিয়মিত প্রচুর পরিমাণে পানি ও আঁশসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। সেই সাথে হালকা ব্যায়ামের অভ্যাস রাখার চেষ্টা করুন৷
এই সপ্তাহের কমন লক্ষণগুলো হল:
• দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়া বা রক্ত পড়া,
• পেটের আকার বাড়ার সাথে সাথে এর চারপাশে পেশিতে টান বা ব্যথা অনুভব করা,
• মাথাব্যথা,
• কিছু ক্ষেত্রে নাক থেকে হালকা রক্ত পড়া,
• পেট ফাঁপা ও কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া,
• বদহজম ও বুক জ্বালাপোড়া করা,
• চাপ দিলে স্তনে ব্যথা অনুভব করা,
• পায়ে ব্যথা,
• অল্পতেই গরম লাগা কিংবা সামান্য গরম আবহাওয়াতেই অস্বস্তি বোধ করা বা হাঁসফাঁস করা,
• মাথা ঘুরানো,
• হাত-পায়ে পানি আসা বা ফুলে যাওয়া,
• প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া বা ইনফেকশন,
• যোনিপথে অর্থাৎ মাসিকের রাস্তায় ইনফেকশন,
• মুখের বা শরীরের অন্যান্য অংশের চামড়ায় ছোপ ছোপ দাগ পড়া,
• অনেকের ক্ষেত্রে মাথার চুল আগের চেয়ে ঘন, কালো হয়ে ওঠা।
এছাড়াও বিগত সপ্তাহগুলোর কিছু লক্ষণ এই সপ্তাহেও থেকে যেতে পারে, যেমন মর্নিং সিকনেস, মুড সুইং, ইত্যাদি।
যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে:
গর্ভাবস্থায় একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা খুব জরুরি। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আপনার ডাক্তার, নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের স্বাস্থ্যকর্মী বা একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শ মেনে চলুন।
গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশনের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। এসময় আপনার শরীরে হেপাটাইটিস বি, এইডস, সিফিলিস বা অন্য কোন ইনফেকশন আছে কি না তা জানতে ডাক্তার আপনাকে কিছু রক্ত পরীক্ষার পরামর্শ দিতে পারেন। সেই সাথে আপনার প্রস্রাবও পরীক্ষা করতে হতে পারে।
গর্ভের শিশু কীভাবে বড় হচ্ছে
১৬তম সপ্তাহে শিশুটি প্রায় ১১.৬ সেন্টিমিটার বা সাড়ে চার ইঞ্চি থেকে সামান্য বেশি লম্বা হয়,যা মোটামুটি মাঝারি থেকে বড় আকৃতির একটি পেয়ারার সমান। এ সময় তার ওজন হয় প্রায় ১০০ গ্রাম।
এই সপ্তাহ থেকেই শিশুটি মুখের পেশিগুলো নাড়াতে শুরু করে। এভাবে তার প্রথম চেহারার অভিব্যক্তি (facial expression) অর্থাৎ মুখের মাংসপেশীগুলোর সাহায্যে অনুভূতি প্রকাশের শুরু হয়। তবে শিশুটি এখনই এই অভিব্যক্তি নিজে নিজে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।
সেই সাথে শিশুটির স্নায়ুতন্ত্র (Nervous system – যা মূলত বোধ-বুদ্ধির সাথে জড়িত) বিকশিত হতে থাকে। এ পর্যায়ে শিশু তার হাত-পায়ের পেশিগুলোও বাঁকাতে পারে। শিশুটি তার হাত মুষ্টিবদ্ধ অর্থাৎ মুঠো করতে পারে এবং এক হাত দিয়ে অন্য হাতকে ধরতে পারে।

গর্ভাবস্থার ১৭তম সপ্তাহ
আপনার শিশু গর্ভে বড় হতে থাকার সাথে সাথে আপনার পেটের আকারও বাড়তে থাকে। সামনের সপ্তাহগুলোতে (বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ১৮ থেকে ২০ সপ্তাহের মধ্যে) আপনি শিশুটির অস্তিত্ব তার নড়াচড়ার মাধ্যমে টের পেতে শুরু করবেন।
বেশিরভাগ মহিলাই গর্ভাবস্থার এ সময়টাতে বেশ ভালো বোধ করতে থাকেন। অনেকে বলে থাকেন, গর্ভবতী মায়েদের তথাকথিত সৌন্দর্য এসময় অনেক বেড়ে যায় – এসময় তাদের চুল আগের চেয়ে ঘন ও কালো দেখায় (চুল পড়া কমে যাওয়ার ফলে) এবং ত্বকও আগের চেয়ে উজ্জ্বল হয়ে যায় (হরমোনজনিত এবং শরীরে রক্ত চলাচল বাড়ার কারণে)।
তবে সবার ক্ষেত্রে এই অভিজ্ঞতা একই রকম হয় না। অনেকেই এসময় বিভিন্ন কারণে দুশ্চিন্তা করতে থাকেন৷ গর্ভাবস্থায় যতটা সম্ভব দুশ্চিন্তা না করে রিল্যাক্স করার পরামর্শ দেয়া হয়।

এ সপ্তাহেও বিগত সপ্তাহের মত কিছু লক্ষণ দেখা যায়, যেমন:
• বেশি ক্লান্ত লাগা ও ঘুমের সমস্যা হওয়া,
• দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়া বা রক্ত পড়া,
• পেটের আকার বাড়ার সাথে সাথে এর চারপাশে পেশিতে টান বা ব্যথা অনুভব করা,
• মাথাব্যথা,
• কিছু ক্ষেত্রে নাক থেকে হালকা রক্ত পড়া,
• পেট ফাঁপা ও কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া,
• বদহজম ও বুক জ্বালাপোড়া করা,
• চাপ দিলে স্তনে ব্যথা অনুভব করা,
• পায়ে ব্যথা,
• অল্পতেই গরম লাগা কিংবা সামান্য গরম আবহাওয়াতেই অস্বস্তি বোধ করা বা হাঁসফাঁস করা,
• মাথা ঘুরানো,
• হাত-পায়ে পানি আসা বা ফুলে যাওয়া,
• প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া বা ইনফেকশন,
• যোনিপথে অর্থাৎ মাসিক/পিরিয়ডের রাস্তায় ইনফেকশন,
• মুখের বা শরীরের অন্যান্য অংশের চামড়ায় ছোপ ছোপ দাগ পড়া,
• অনেকের ক্ষেত্রে মাথার চুল আগের চেয়ে ঘন, কালো হয়ে ওঠা।

যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে:
সাধারণত ১৮ থেকে ২১ সপ্তাহের মধ্যে (বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ২০তম সপ্তাহে) একটি আলট্রাসাউন্ড স্ক্যান করা হয়। এর সাহায্যে আপনার গর্ভের শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশ ঠিকমত হচ্ছে কিনা তা দেখা হয়। আপনার ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করে আপনার আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষার তারিখ আগেভাগে নির্ধারণ করে নিন।

বিশেষ তথ্য
গর্ভাবস্থায় যোনিপথে অর্থাৎ মাসিকের রাস্তা দিয়ে রক্তপাত হলে তা গুরুতর কোন সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। তাই এক্ষেত্রে দেরি না করে দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন বা হাসপাতালে চলে যান।

গর্ভের শিশু কীভাবে বড় হচ্ছে
এ সপ্তাহে আপনার শিশু খুব দ্রুত বেড়ে উঠতে থাকে। এরমধ্যে শিশুর ওজন বেড়ে দাঁড়ায় ১৫০ গ্রামে, আর শিশু লম্বায় হয় প্রায় ১২ সেন্টিমিটার বা ৫ ইঞ্চি।
এসময় শিশুটির অবয়বে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আসে। তার চেহারার আদল অনেকটাই মানুষের মত হয়ে যায়৷ ভ্রূ ও চোখের পাপড়ি তৈরি হয়। শিশু তার চোখের মণি এদিক-সেদিক নাড়াতে পারে, যদিও চোখের পাতা এখনো বন্ধ থাকে। শিশুটি মুখ খুলতে ও বন্ধ করতে পারে। যদিও এসবের ওপর তার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ এই সপ্তাহেও তৈরি হয় না।
শিশুর কানে শোনার ক্ষমতাও এসময় বেড়ে যায়; বিকট কোন আওয়াজ শুনলে শিশু হাত-পা ছুঁড়ে প্রতিক্রিয়া দিতে পারে।
শিশুটির হাতের আঙুলের চামড়ায় সূক্ষ্ম রেখাগুলো ইতোমধ্যে তৈরি হয়ে যায়, অর্থাৎ এই সময় থেকে তার নিজস্ব ও স্বতন্ত্র আঙুলের ছাপ (ফিংগার প্রিন্ট) থাকবে। এছাড়া তার হাত ও পায়ের আঙুলের নখগুলো তৈরি হতে থাকে এবং শিশু হাত দিয়ে কোনো কিছু শক্তভাবে আঁকড়ে ধরার ক্ষমতাও অর্জন করে।

গর্ভাবস্থার ১৮তম সপ্তাহ

অনেকেই এই সপ্তাহে প্রথমবারের মত গর্ভের শিশুর নড়াচড়া টের পেতে শুরু করবেন। বেশিরভাগ গর্ভবতী মা ১৮-২০ সপ্তাহের মধ্যে গর্ভের শিশুর অস্তিত্ব বুঝতে শুরু করেন। তবে প্রথমবারের মত গর্ভধারণ করলে, শিশুটির নড়াচড়া টের পেতে আপনার আরও কিছুদিন সময় লাগতে পারে। গর্ভের শিশুর নড়াচড়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই আর্টিকেলটি পড়তে পারেন।

এছাড়া এসময়ে যেসব লক্ষণ দেখা যায়:
• স্ট্রেচ মার্কস (পেটের আকার বাড়াতে থাকায় চামড়ায় যে টান পড়ে তার কারণে ফাটা দাগের মত চিহ্ন দেখা দেওয়া),
• বেশি ক্লান্ত লাগা ও ঘুমের সমস্যা হওয়া,
• দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়া বা রক্ত পড়া,
• মাথাব্যথা,
• কিছু ক্ষেত্রে নাক থেকে হালকা রক্ত পড়া,
• পেট ফাঁপা ও কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া,
• বদহজম ও বুক জ্বালাপোড়া করা,
• চাপ দিলে স্তনে ব্যথা অনুভব করা,
• পায়ে ব্যথা,
• অল্পতেই গরম লাগা কিংবা সামান্য গরম আবহাওয়াতেই অস্বস্তি বোধ করা বা হাঁসফাঁস করা,
• মাথা ঘুরানো,
• হাত-পায়ে পানি আসা বা ফুলে যাওয়া,
• প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া বা ইনফেকশন,
• যোনিপথে অর্থাৎ মাসিক/পিরিয়ডের রাস্তায় ইনফেকশন,
• মুখের বা শরীরের অন্যান্য অংশের চামড়ায় ছোপ ছোপ দাগ পড়া,
• অনেকের ক্ষেত্রে মাথার চুল আগের চেয়ে ঘন, কালো হয়ে ওঠা।

যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে:
• সাধারণত ১৮ থেকে ২১ সপ্তাহের মধ্যে (বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ২০ তম সপ্তাহে) একটি আলট্রাসাউন্ড স্ক্যান করানো হয়। এর সাহায্যে আপনার গর্ভের শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশ ঠিকমত হচ্ছে কিনা তা দেখা হয়। আপনার ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করে আপনার আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করে নিন।
বিশেষ সতর্কতা
গর্ভাবস্থায় সব ধরনের ওষুধ সেবনের জন্য নিরাপদ নয়। তাই এ সময় ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো ধরনের ওষুধ সেবন করা থেকে বিরত থাকুন।

গর্ভের শিশু কীভাবে বড় হচ্ছে
১৮তম সপ্তাহে আপনার শিশু লম্বায় প্রায় ১৪.২ সেন্টিমিটার বা পৌনে ৬ ইঞ্চি হয়। এসময় তার ওজন হয় প্রায় ১৯০ গ্রাম।
এ সপ্তাহে আপনার শিশুর কানে শোনা, কোন কিছু অনুভব করা, কিছু গিলে নেয়া, মুখ দিয়ে কিছু চোষা – এসব শারীরবৃত্তীয় প্রতিক্রিয়া বা রিফ্লেক্স (reflexes) তৈরি হয়। এছাড়া এসময় শিশুটি প্রচুর পরিমাণে হাত-পা ছোঁড়াছুড়ি করে ও শরীর মোচড়ানোর মত অঙ্গভঙ্গি করতে থাকে।

গর্ভাবস্থার ১৯তম সপ্তাহ

আপনি যদি প্রথমবারের মত গর্ভবতী হয়ে থাকেন, তাহলে আপনি হয়তো এ সপ্তাহ থেকে গর্ভের শিশুর নড়াচড়া বুঝতে পারবেন।
প্রথম প্রথম এই নড়াচড়া এতটাই হালকাভাবে অনুভূত হবে, অনেকের মনে হয় যেন পেটের ভেতর বুদ্বুদ তৈরী হচ্ছে বা খুব ছোট কিছু নাড়াচাড়া করছে। তবে সামনের সপ্তাহ গুলোতে ধীরে ধীরে শিশুটির অস্তিত্ব একদম স্পষ্ট হতে থাকবে, তার ছোট ছোট পায়ের লাথি আপনি টের পেতে শুরু করবেন।

গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন কারণে ঘুমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। অনেক গর্ভবতী মহিলা এসময় স্বাভাবিক ভঙ্গিতে শুয়ে আরাম পান না। আপনার ক্ষেত্রে এমনটা হলে আপনি এক পাশ হয়ে অর্থাৎ কাত হয়ে শুয়ে বা বালিশে পেটের ভার দিয়ে নিজের সুবিধামত একটি আরামদায়ক ভঙ্গিতে ঘুমানোর চেষ্টা করতে পারেন। ঘুমানোর আগে হালকা যোগব্যায়াম বা মেডিটেশনও ঘুমে সাহায্য করতে পারে।

ঘুমের সমস্যা ছাড়াও এ সময়ে আরও যেসব লক্ষণ থাকতে পারে সেগুলো হলো:
• স্ট্রেচ মার্কস (পেটের আকার বাড়াতে থাকায় চামড়ায় যে টান পড়ে তার কারণে ফাটা দাগের মত চিহ্ন দেখা দেওয়া),
• বেশি ক্লান্ত লাগা ও ঘুমের সমস্যা হওয়া,
• দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়া বা রক্ত পড়া,
• মাথা ব্যথা,
• পেটে ব্যথা,
• কিছু ক্ষেত্রে নাক থেকে হালকা রক্ত পড়া,
• পেট ফাঁপা ও কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া,
• বদহজম ও বুক জ্বালাপোড়া করা,
• চাপ দিলে স্তনে ব্যথা অনুভব করা,
• পায়ে ব্যথা,
• অল্পতেই গরম লাগা কিংবা সামান্য গরম আবহাওয়াতেই অস্বস্তি বোধ করা বা হাঁসফাঁস করা,
• মাথা ঘুরানো,
• হাত-পায়ে পানি আসা বা ফুলে যাওয়া,
• প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া বা ইনফেকশন,
• যোনিপথে অর্থাৎ মাসিক/পিরিয়ডের রাস্তায় ইনফেকশন,
• মুখের বা শরীরের অন্যান্য অংশের চামড়ায় ছোপ ছোপ দাগ পড়া,
• অনেকের ক্ষেত্রে মাথার চুল আগের চেয়ে ঘন, কালো হয়ে ওঠা।

যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে:
• গর্ভের শিশুর নড়াচড়া বুঝতে শুরু করার পর থেকে তার নড়াচড়ার ধরন সম্পর্কে খেয়াল রাখুন। শিশুরা সাধারণত জন্মানোর আগ পর্যন্ত পেটের ভেতর একটি নির্দিষ্ট ধাঁচে বা প্যাটার্নে নিয়মিত নড়াচড়া করে থাকে। যদি আপনার মনে হয় যে শিশু স্বাভাবিকের চেয়ে কম নড়াচড়া করছে তবে দেরি না করে দ্রুত ডাক্তার দেখিয়ে নেয়া উচিত।
• প্রি-এক্লাম্পসিয়া গর্ভাবস্থার একটি মারাত্মক সমস্যার নাম। এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানুন ও গর্ভাবস্থার বিপদচিহ্নগুলো নিয়ে সচেতন থাকুন।
• গর্ভবতী অবস্থায় শরীরে আয়রনের বাড়তি চাহিদা মেটানোর জন্য বেশি বেশি আয়রনযুক্ত খাবার, যেমন মাছ, মাংস, ডাল ও সবুজ শাকসবজি খাওয়ার চেষ্টা করুন। সাথে খেতে হবে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি-যুক্ত খাবার, যেমন – টক ফল।

গর্ভের শিশু কীভাবে বড় হচ্ছে
১৯তম সপ্তাহে আপনার শিশু লম্বায় প্রায় ১৫.৩ সেন্টিমিটার বা ৬ ইঞ্চি দীর্ঘ হয়। এ সময় শিশুটির ওজন হয় প্রায় ২৪০ গ্রাম।
এ সপ্তাহে শিশুটির পূর্ণাঙ্গ/প্রাপ্তবয়সের দাঁতগুলো তৈরি হতে থাকে। এগুলো আগে তৈরি হওয়া দুধদাঁতের পেছনের সারিতে থাকে। তবে এখনো সবগুলো দাঁতই চামড়া দিয়ে ঢাকা থাকে। জন্মের পর ৬ মাস বয়সে শিশুর প্রথম দুধ দাঁত দেখা যায়। আর এরো কয়েক বছর পরে দুধ দাঁত গুলো পড়ে গিয়ে পূর্ণাঙ্গ দাঁতগুলো ধীরে ধীরে প্রকাশিত হয়।

গর্ভাবস্থার ২০তম সপ্তাহ

আপনি ইতোমধ্যেই গর্ভাবস্থার প্রায় অর্ধেক পথ পার করে ফেলেছেন।
২০তম সপ্তাহে এসে আপনার যেসব লক্ষণ দেখা দিতে পারে সেগুলো হল:
• স্ট্রেচ মার্কস (পেটের আকার বাড়াতে থাকায় চামড়ায় যে টান পড়ে তার কারণে ফাটা দাগের মত চিহ্ন দেখা দেওয়া),
• বেশি ক্লান্ত লাগা,
• ঘুমের সমস্যা হওয়া,
• দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়া বা রক্ত পড়া,
• মাথা ব্যথা,
• পেটে ব্যথা,
• কিছু ক্ষেত্রে নাক থেকে হালকা রক্ত পড়া,
• পেট ফাঁপা ও কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া,
• বদহজম ও বুক জ্বালাপোড়া করা,
• চাপ দিলে স্তনে ব্যথা অনুভব করা,
• পায়ে ব্যথা,
• অল্পতেই গরম লাগা কিংবা সামান্য গরম আবহাওয়াতেই অস্বস্তি বোধ করা বা হাঁসফাঁস করা,
• মাথা ঘুরানো,
• হাত-পায়ে পানি আসা বা ফুলে যাওয়া,
• প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া বা ইনফেকশন,
• যোনিপথে অর্থাৎ মাসিক/পিরিয়ডের রাস্তায় ইনফেকশন,
• মুখের বা শরীরের অন্যান্য অংশের চামড়ায় ছোপ ছোপ দাগ পড়া,
• অনেকের ক্ষেত্রে মাথার চুল আগের চেয়ে ঘন, কালো হয়ে ওঠা।

যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে:
• এ সপ্তাহে আপনার একটি আল্ট্রাসাউন্ড স্ক্যান করানো উচিৎ। ২০তম সপ্তাহের আল্ট্রাসাউন্ড স্ক্যানে গর্ভের সন্তানের কোন জন্মগত ত্রুটি আছে কিনা দেখা হয়।
• গর্ভাবস্থার এ সময়টাতে পায়ের ব্যথা ও কোমড় ব্যথা বেড়ে যেতে পারে। ব্যথা কমানোর জন্য হালকা ব্যায়াম করতে পারেন। গর্ভাবস্থায় ব্যায়ামের ধরন সম্পর্কে জানতে একজন ব্যায়াম প্রশিক্ষকের পরামর্শ নিতে পারেন।

গর্ভের শিশু কীভাবে বড় হচ্ছে
২০তম সপ্তাহে আপনার শিশু লম্বায় প্রায় ২৫.৬ সেন্টিমিটার বা প্রায় ১০ ইঞ্চি হয়। এসময় শিশুর ওজন হয় প্রায় ৩০০ গ্রাম।
এ সপ্তাহের মধ্যে শিশুটির ত্বকের উপর ‘ভার্নিক্স’ নামের একটি সাদা রঙের পিচ্ছিল স্তর তৈরি হবে। শিশুটি গর্ভের ভেতরে যেই অ্যামনিওটিক তরল দিয়ে ঘেরা থাকে, তার সংস্পর্শে শিশুর নাজুক ত্বক যেন খসখসে না হয়ে যায় তাই চামড়ার উপর এই সুরক্ষা স্তরটি তৈরি হয় বলে ধারণা করা হয়৷ এছাড়া এই স্তরটি পিচ্ছিল হওয়ার কারণে প্রসবের সময় শিশুকে সহজে বের করে আনতেও সাহায্য করে।
শিশুটি এখন আগের চেয়ে আরো বেশি নড়াচড়া করতে শুরু করবে। গর্ভবতী মায়েরা এ সময় থেকে নিয়মিত ও স্পষ্টভাবে গর্ভের শিশুর উপস্থিতি অনুভব করতে পারবে।

গর্ভাবস্থার ২১তম সপ্তাহ

এসময়ে আপনার পেট দ্রুত বড় হতে থাকে। শরীরের এই বাড়তি ওজনের সাথে তাল মিলিয়ে হাঁটাচলা করতে কষ্ট হতে পারে । ফলে অসাবধানতাবশত পা পিছলে পড়ে যাওয়ার ঘটনাও এই সময়ে বেশি ঘটে। কখনো পড়ে গেলে খুব বেশি ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই, কারণ গর্ভে শিশুটি অ্যামনিওটিক থলের ভেতরে অত্যন্ত সুরক্ষিত অবস্থায় থাকে। তাই সাধারণত মা পা পিছলে পড়ে গেলেও গর্ভের শিশুর এতে কোন ক্ষতি হয় না। তবে যদি আপনার প্রয়োজন মনে হয়, আঘাত অনেক তীব্র হয়, বা পড়ে যাওয়ার পরে পেটে ব্যথা বা অন্য কোন লক্ষণ দেখা দেয় সেক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়ে পরীক্ষা করিয়ে নেয়া উচিত।
অনেক গর্ভবতী মায়েরই এসময় হালকা মাথাব্যথা হয়ে থাকে৷ তবে যদি আপনার তীব্র মাথাব্যথা হয় – যা একটানা কয়েক ঘন্টা ধরে থাকে এবং ওষুধ খেলেও সারে না – সেক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন। এটি ‘প্রি-এক্লাম্পসিয়া’ নামের গর্ভকালীন এক জটিল সমস্যার লক্ষণ হতে পারে৷

এছাড়াও এ সপ্তাহে অন্যান্য যেসব লক্ষণ থাকতে পারে সেগুলো হল:
• স্ট্রেচ মার্কস (পেটের আকার বাড়াতে থাকায় চামড়ায় যে টান পড়ে তার কারণে ফাটা দাগের মত চিহ্ন দেখা দেওয়া),
• বেশি ক্লান্ত লাগা,
• ঘুমের সমস্যা হওয়া,
• দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়া বা রক্ত পড়া,
• পেটে ব্যথা,
• কিছু ক্ষেত্রে নাক থেকে হালকা রক্ত পড়া,
• পেট ফাঁপা ও কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া,
• বদহজম ও বুক জ্বালাপোড়া করা,
• চাপ দিলে স্তনে ব্যথা অনুভব করা,
• পায়ে ব্যথা,
• অল্পতেই গরম লাগা কিংবা সামান্য গরম আবহাওয়াতেই অস্বস্তি বোধ করা বা হাঁসফাঁস করা,
• মাথা ঘুরানো,
• হাত-পায়ে পানি আসা বা ফুলে যাওয়া,
• প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া বা ইনফেকশন,
• যোনিপথে অর্থাৎ মাসিকের রাস্তায় ইনফেকশন,
• মুখের বা শরীরের অন্যান্য অংশের চামড়ায় ছোপ ছোপ দাগ পড়া,
• অনেকের ক্ষেত্রে মাথার চুল আগের চেয়ে ঘন, কালো হয়ে ওঠা।

যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে
• এসময় আপনার স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি ক্ষুধা লাগতে পারে৷ পর্যাপ্ত পরিমাণে সুষম খাদ্য ও নিয়মিত যথেষ্ট পরিমাণ পানি পান করার চেষ্টা করুন।
• এছাড়া নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করতে পারেন।

গর্ভের শিশু কীভাবে বড় হচ্ছে
এ সপ্তাহে আপনার শিশু লম্বায় প্রায় ২৬.৭ সেন্টিমিটার বা প্রায় সাড়ে ১০ ইঞ্চি হয়। এসময় শিশুর ওজন হয় প্রায় ৩৫০ গ্রাম।
এ সময়ের আগ পর্যন্ত গর্ভফুল বা অমরার ওজন শিশুর ওজনের চেয়ে বেশি ছিল, তবে এখন শিশুটির ওজন প্লাসেন্টার ওজনের চেয়ে বেড়ে যায়৷ গর্ভাবস্থার বাকি সময়টাতে প্লাসেন্টা ও শিশু দুটোই আকারে বাড়বে, তবে শিশুটি অমরার চেয়ে দ্রুত গতিতে বড় হবে।

শিশুটির পুরো শরীর এক ধরনের পাতলা, নরম পশম দিয়ে আবৃত হয়ে যায়, যাকে ‘লানুগো’ বলা হয়। ধারণা করা হয়, এই পশম গর্ভের শিশুর শরীরে সঠিক তাপমাত্রা বজায় রাখতে সহায়তা করে। শুধুমাত্র গর্ভাবস্থাতেই শিশুর শরীরে এই পশম থাকে, সাধারণত শিশুর জন্মের আগেই এগুলো চলে যায়।
এছাড়া এসময় শিশুটির মাথার চুল এবং ভ্রূ জোড়াও দ্রুত বাড়তে থাকে। জন্মানোর সময় কিছু কিছু শিশুর মাথাভর্তি চুল থাকে, আবার কারো কারো একেবারেই চুল থাকে না। এটি সাধারণত দুশ্চিন্তার কোন ব্যাপার নয় – এক বছরের মধ্যে সাধারণত এসব স্বাভাবিক হয়ে আসে৷

গর্ভাবস্থার ২২তম সপ্তাহ

এসময় গর্ভের আকার দ্রুত বাড়তে থাকে। ফলে পেটের ত্বকে টান পড়ে ‘স্ট্রেচ মার্কস’ দেখা দেয়। পেট ছাড়াও স্তন (breast) ও উরুর (thighs) আশেপাশেও এমন দাগ দেখা দিতে পারে। শুরুর দিকে এই দাগগুলো লালচে বা বেগুনি থাকে। সন্তান প্রসবের পরে আস্তে আস্তে দাগগুলো মিলিয়ে যেতে শুরু করে।
এই সময় বা এর পরের সপ্তাহগুলোতে আপনার স্তন থেকে মাঝেমাঝে সামান্য পরিমাণে বুকের দুধের মত তরল বের হতে পারে, যা খুবই স্বাভাবিক৷ মূলত এভাবেই আপনার শরীর ভবিষ্যতে সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য তৈরি হয়৷
গর্ভাবস্থায় অনেকের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হয়ে থাকে। কারো কারো এসময় পাইলস, অর্শ্ব বা গেজ-এর মত সমস্যাও দেখা দিতে পারে৷ তাই কোষ্ঠকাঠিন্য এড়াতে প্রচুর পরিমাণে পানি ও আঁশযুক্ত খাবার খান।

এছাড়া এ সময়ে অন্যান্য যেসব লক্ষণ থাকতে পারে সেগুলো হল:
• বেশি ক্লান্ত লাগা,
• ঘুমের সমস্যা হওয়া,
• দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়া বা রক্ত পড়া,
• পেটে ব্যথা,
• কিছু ক্ষেত্রে নাক থেকে হালকা রক্ত পড়া,
• পেট ফাঁপা ও কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া,
• বদহজম ও বুক জ্বালাপোড়া করা,
• চাপ দিলে স্তনে ব্যথা অনুভব করা,
• পায়ে ব্যথা,
• অল্পতেই গরম লাগা কিংবা সামান্য গরম আবহাওয়াতেই অস্বস্তি বোধ করা বা হাঁসফাঁস করা,
• মাথা ঘুরানো,
• হাত-পায়ে পানি আসা বা ফুলে যাওয়া,
• প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া বা ইনফেকশন,
• যোনিপথে অর্থাৎ মাসিকের রাস্তায় ইনফেকশন,
• মুখের বা শরীরের অন্যান্য অংশের চামড়ায় ছোপ ছোপ দাগ পড়া,
• অনেকের ক্ষেত্রে মাথার চুল আগের চেয়ে ঘন, কালো হয়ে ওঠা,
• রক্ত চলাচল বেড়ে গিয়ে ত্বক আগের চেয়ে উজ্জ্বল বা লাবণ্যময় মনে হওয়া (একে অনেকে ‘প্রেগন্যান্সি গ্লো’ বলে থাকেন)।

যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে:
• এই সপ্তাহ থেকে শিশুটি একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে এবং নির্দিষ্ট সময় ধরে জেগে থাকতে শুরু করে। শিশুর ঘুমানো ও জেগে থাকার রুটিন আপনার ব্যক্তিগত ঘুমের রুটিনের সাথে নাও মিলতে পারে। রাতে আপনার ঘুমানোর সময়ে সে অনেক নড়াচড়া করে আপনার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। তাই শিশুটি দিনের যে সময়ে কিছুটা চুপচাপ থাকবে আপনিও তখন বিশ্রাম নেয়ার চেষ্টা করুন।
• গর্ভাবস্থায় অনেকে হুপিং কাশির প্রতিষেধক টিকা নিয়ে থাকেন। আপনি যদি এখনও টিকাটি নিয়ে না থাকেন তাহলে আপনার ডাক্তারের সাথে এ বিষয়ে কথা বলুন।
• চাকরিজীবী মায়েরা সন্তান প্রসবের মাস তিনেক আগে মাতৃত্বকালীন ছুটি’র জন্য আবেদন করে রাখতে পারেন। আপনার অফিস বা কর্মক্ষেত্রে এ বিষয়ে কী ধরনের নিয়মকানুন রয়েছে তা আগে থেকেই জেনে রাখার চেষ্টা করুন।

গর্ভের শিশু কীভাবে বড় হচ্ছে
২২ তম সপ্তাহে আপনার শিশু লম্বায় প্রায় ২৭.৮ সেন্টিমিটার বা প্রায় ১১ ইঞ্চি হয়, আর এ সময় তার ওজন হয় প্রায় ৪৩০ গ্রাম।
শিশুর ফুসফুস এখন আরও সুগঠিত হয়। এসময় সে ধীরে ধীরে শ্বাসপ্রশ্বাস নেয়ার চেষ্টা করে। এই সপ্তাহ থেকে শিশুটি অল্প অল্প করে অ্যামনিওটিক তরল গিলতে শুরু করে। এই তরল তার পেটে জমা হতে থাকে এবং জন্মের পর ত্যাগ করা প্রথম মল বা পায়খানা হিসেবে তার শরীর থেকে বেরিয়ে আসে। অ্যামনিওটিক তরল যুক্ত এই প্রথম মলকে বলা হয় ‘মেকোনিয়াম’।
এ সপ্তাহ থেকে শিশুর জিভে ‘টেস্ট বাড্স’ তৈরি হতে থাকে। ‘টেস্ট বাড্স’ খাবারের স্বাদ পাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। শিশুর টেস্ট বাড্স-এর ওপর মায়ের খাদ্যাভাস এর প্রভাব থাকতে পারে। তাই এসময় যতটা সম্ভব স্বাস্থ্যকর ও সুষম খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন।

গর্ভাবস্থার ২৩তম সপ্তাহ

এই সময়ে আপনার বুকের পাঁজরে হালকা চাপ বা ব্যথা লাগতে পারে। বাড়ন্ত গর্ভকে জায়গা করে দেয়ার জন্য পাঁজরের হাড়গুলোকে কিছুটা প্রসারিত হতে হয়, যা এই ব্যথার জন্য দায়ী। এছাড়াও এসময় ফুসফুসের ওপর হালকা চাপ পড়তে পারে, ফলে আপনি কিছুটা শ্বাসকষ্ট বা হাঁফ ধরা অনুভব করতে পারেন।
এ সপ্তাহে আপনার স্তন থেকে মাঝেমাঝে সামান্য পরিমাণে তরলজাতীয় কিছু নিঃসৃত হতে পারে। এটি খুবই স্বাভাবিক, এভাবে আপনার শরীর ভবিষ্যতে সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য প্রস্তুতি নেয়৷

এসময় অন্যান্য যেসব লক্ষণ থাকতে পারে সেগুলো হল:
• বেশি ক্লান্ত লাগা,
• ঘুমের সমস্যা হওয়া,
• স্ট্রেচ মার্কস (পেটের আকার বাড়াতে থাকায় চামড়ায় যে টান পড়ে তার কারণে ফাটা দাগের মত চিহ্ন দেখা দেওয়া),
• দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়া বা রক্ত পড়া,
• পেটে ব্যথা,
• কিছু ক্ষেত্রে নাক থেকে হালকা রক্ত পড়া,
• পেট ফাঁপা ও কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া,
• বদহজম ও বুক জ্বালাপোড়া করা,
• চাপ দিলে স্তনে ব্যথা অনুভব করা,
• পায়ে ব্যথা,
• অল্পতেই গরম লাগা কিংবা সামান্য গরম আবহাওয়াতেই অস্বস্তি বোধ করা বা হাঁসফাঁস করা,
• মাথা ঘুরানো,
• হাত-পায়ে পানি আসা বা ফুলে যাওয়া,
• প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া বা ইনফেকশন,
• যোনিপথে অর্থাৎ মাসিকের রাস্তায় ইনফেকশন,
• মুখের বা শরীরের অন্যান্য অংশের চামড়ায় ছোপ ছোপ দাগ পড়া,
• অনেকের ক্ষেত্রে মাথার চুল আগের চেয়ে ঘন, কালো হয়ে ওঠা,
• রক্ত চলাচল বেড়ে গিয়ে ত্বক আগের চেয়ে উজ্জ্বল বা লাবণ্যময় মনে হওয়া (একে অনেকে ‘প্রেগন্যান্সি গ্লো’ বলে থাকেন)।

যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে
• ইতিমধ্যে শিশুটি একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে এবং নির্দিষ্ট সময় ধরে জেগে থাকতে শুরু করে।শিশুর ঘুমানো ও জেগে থাকার রুটিন আপনার ব্যক্তিগত ঘুমের রুটিনের সাথে নাও মিলতে পারে। রাতে আপনার ঘুমানোর সময়ে সে অনেক নড়াচড়া করে আপনার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। তাই শিশুটি দিনের যে সময়ে কিছুটা চুপচাপ থাকবে আপনিও তখন বিশ্রাম নেয়ার চেষ্টা করুন।
• চাকরিজীবী মায়েরা সন্তান প্রসবের মাস তিনেক আগে মাতৃত্বকালীন ছুটি’র জন্য আবেদন করে রাখতে পারেন। আপনার অফিস বা কর্মক্ষেত্রে এ বিষয়ে কী ধরনের নিয়মকানুন রয়েছে তা আগে থেকেই জেনে রাখার চেষ্টা করুন।

গর্ভের শিশু কীভাবে বড় হচ্ছে
এ সপ্তাহে আপনার শিশু লম্বায় প্রায় ২৮.৯ বা ১১.৪ ইঞ্চি সেন্টিমিটার হয়। এসময় শিশুটির ওজন হয় প্রায় ৫০০ গ্রাম বা আধা কেজি।
শিশুর ফুসফুস এ সপ্তাহে আরও সুগঠিত হয়, সে শ্বাসপ্রশ্বাসের ছন্দ আয়ত্ত করতে থাকে, যাতে জন্মের পর মুক্ত বাতাসে সে সঠিকভাবে শ্বাস নিতে পারে৷ এসময় নিজে থেকে শ্বাস নেয়ার চেষ্টা করলেও সত্যিকার অর্থে জন্মের আগ পর্যন্ত সে তার প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের পুরোটাই অমরা/গর্ভফুল বা প্লাসেন্টার মাধ্যমে মায়ের কাছ থেকেই পেয়ে থাকে।
তার কানে শোনার ক্ষমতাও আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে। এখন সে কাছের শব্দগুলো আরও স্পষ্টভাবে শুনতে পায়, এমনকি কিছুটা দূরে দরজা বন্ধ করার মত শব্দও শুনতে পায়। শিশু এখন মায়ের গলার স্বর চিনতে শুরু করে, এছাড়া মাঝে মাঝে কোন শব্দ শুনে হাত-পা ছুঁড়ে প্রতিক্রিয়াও দিতে পারে।

গর্ভাবস্থার ২৪তম সপ্তাহ

এসময় গর্ভের আকার দ্রুত বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে বাড়তে থাকে স্ট্রেচ মার্কস। এছাড়া পেটের চারপাশে, স্তন, পাঁজর, পিঠ বা কোমরসহ শরীরের অনেক জায়গায় ব্যথা বা টান অনুভব হতে থাকে।

এছাড়া এ সপ্তাহে আরও কিছু লক্ষণ দেখা যায়। যেমন:
• বেশি ক্লান্ত অনুভব করা,
• ঘুমের সমস্যা হওয়া,
• দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়া বা রক্ত পড়া,
• পেটে ব্যথা,
• কিছু ক্ষেত্রে নাক থেকে হালকা রক্ত পড়া,
• পেট ফাঁপা ও কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া,
• বদহজম ও বুক জ্বালাপোড়া করা,
• চাপ দিলে স্তনে ব্যথা অনুভব করা,
• পায়ে ব্যথা,
• অল্পতেই গরম লাগা কিংবা সামান্য গরম আবহাওয়াতেই অস্বস্তি বোধ করা বা হাঁসফাঁস করা,
• মাথা ঘুরানো বা মাথা ব্যথা,
• হাত-পায়ে পানি আসা বা ফুলে যাওয়া,
• প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া বা ইনফেকশন,
• যোনিপথে অর্থাৎ মাসিকের রাস্তায় ইনফেকশন,
• মুখের বা শরীরের অন্যান্য অংশের চামড়ায় ছোপ ছোপ দাগ পড়া,
• অনেকের ক্ষেত্রে মাথার চুল আগের চেয়ে ঘন, কালো হয়ে ওঠা।

যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে
গর্ভাবস্থায় রক্তে সুগারের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে অনেক মায়ের গর্ভকালীন ডায়াবেটিস বা জেসটেশনাল ডায়াবেটিস দেখা দিতে পারে। আপনার জেসটেশনাল ডায়াবেটিস দেখা দিয়েছে কিনা তা জানতে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে রক্ত পরীক্ষা করাতে পারেন।

গর্ভের শিশু কীভাবে বড় হচ্ছে
২৪তম সপ্তাহে আপনার শিশু লম্বায় প্রায় ৩০ সেন্টিমিটার বা পৌনে ১২ ইঞ্চি হয়। এসময় তার ওজন হয় প্রায় ৬০০ গ্রাম।
এ সময়ে তার মুখমন্ডলের পেশিগুলো সুগঠিত হতে থাকে। শিশু এই পেশিগুলোর সাহায্যে ধীরে ধীরে নানারকম অনুভূতি প্রকাশ (facial expressions) করতে শেখে৷
সাধারণত এই সময়ে এসে শিশুর দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলো তৈরি হয়ে কাজ করতে শুরু করে। তাই কোন জরুরী কারণে এসময় আপনার সন্তান প্রসব হলে, তার বেঁচে থাকার সম্ভাবনাও বেশি থাকে। তবে এসব ক্ষেত্রে শিশুকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য অনেক বেশি যত্ন নেওয়ার (নিওনেটাল কেয়ার) প্রয়োজন পড়ে। তবে, এই যত্নের পরেও শিশুটির প্রতিবন্ধীতার ঝুঁকি অনেকটাই বেড়ে যায়।

গর্ভাবস্থার ২৫তম সপ্তাহ

এই সময়ে আপনার মুখে, হাতে বা পায়ে পানি জমে কিছুটা ফোলা ফোলা ভাব আসতে পারে। গর্ভাবস্থার এমনটা হওয়া খুবই স্বাভাবিক, তাই সাধারণত ঘাবড়ানোর কোন কারণ নেই। পায়ে পানি আসলে, কোন পিঁড়ি বা উঁচু স্থানে পা রেখে আরাম করুন। পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নেওয়ার চেষ্টা করুন। তবে কোনোমতেই এই ব্যপারটি আপনার ডাক্তারকে জানাতে ভুলবেন না। কারণ অনেক সময় ‘প্রি-এক্লাম্পসিয়া’ নামের গর্ভাবস্থার একটি জটিল সমস্যার কারণেও হাতে-পায়ে পানি আসতে পারে।
গর্ভের আকার বাড়ার সাথে সাথে পাকস্থলীতে চাপ বেড়ে গিয়ে হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এসময় অনেকের প্রতিবার খাওয়ার পরপরই বুকে জ্বালাপোড়া হয়ে থাকে।

এছাড়া এসময়ের অন্যান্য যেসব লক্ষণগুলো থাকতে পারে:
• বেশি ক্লান্ত অনুভব করা,
• স্ট্রেচ মার্কস (পেটের আকার বাড়াতে থাকায় চামড়ায় যে টান পড়ে তার কারণে ফাটা দাগের মত চিহ্ন দেখা দেওয়া),
• ঘুমের সমস্যা হওয়া,
• দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়া বা রক্ত পড়া,
• পেটে ব্যথা,
• কিছু ক্ষেত্রে নাক থেকে হালকা রক্ত পড়া,
• পেট ফাঁপা ও কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া,
• বদহজম ও বুক জ্বালাপোড়া করা,
• চাপ দিলে স্তনে ব্যথা অনুভব করা,
• পায়ে ব্যথা,
• অল্পতেই গরম লাগা কিংবা সামান্য গরম আবহাওয়াতেই অস্বস্তি বোধ করা বা হাঁসফাঁস করা,
• মাথা ঘুরানো বা মাথা ব্যথা,
• হাত-পায়ে পানি আসা বা ফুলে যাওয়া,
• প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া বা ইনফেকশন,
• যোনিপথে অর্থাৎ মাসিকের রাস্তায় ইনফেকশন,
• মুখের বা শরীরের অন্যান্য অংশের চামড়ায় ছোপ ছোপ দাগ পড়া,
• অনেকের ক্ষেত্রে মাথার চুল আগের চেয়ে ঘন, কালো হয়ে ওঠা।

যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে
• গর্ভাবস্থায় ও প্রসবের পরে নানা ধরনের ইনফেকশনের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। এ ব্যাপারে সচেতন থাকার চেষ্টা করুন।
• আপনি কোথায় অর্থাৎ কোন হাসপাতালে বা ক্লিনিকে সন্তান প্রসব করতে চান তা আপনার সুবিধা অনুযায়ী আগে থেকেই ঠিক করে রাখুন। এক্ষেত্রে আপনার বাসার কাছাকাছি হয় এমন একটি ভালো সেবাদানকারী কোন প্রতিষ্ঠানকেই বেছে নেয়া উচিত। বাড়িতে সন্তান প্রসব করতে চাইলে একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, দক্ষ ও অভিজ্ঞ ধাত্রীর সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন।
• চাকরিজীবী মায়েরা সন্তান প্রসবের মাস তিনেক আগে মাতৃত্বকালীন ছুটি’র জন্য আবেদন করে রাখতে পারেন। আপনার অফিস বা কর্মক্ষেত্রে এ বিষয়ে কী ধরনের নিয়মকানুন রয়েছে তা আগে থেকেই জেনে রাখার চেষ্টা করুন।

গর্ভের শিশু কীভাবে বড় হচ্ছে
এই সপ্তাহে আপনার শিশু লম্বায় প্রায় ৩৪.৬ সেন্টিমিটার বা প্রায় সাড়ে ১৩ ইঞ্চি হয়। এসময় তার ওজন হয় প্রায় ৬৬০ গ্রাম৷
এ সময়ে সে গর্ভের ভেতর বেশ সক্রিয় হয়ে ওঠে। সে এখন ক্রমাগত নড়াচড়া করতে থাকে, জোরে কোন শব্দ শুনলে বা মায়ের গলার স্বর শুনলে হাত পা ছুঁড়ে প্রতিক্রিয়াও জানাতে পারে৷ তার সব ধরনের নড়াচড়াই আপনি এখন স্পষ্টভাবে বুঝতে পারবেন, এমনকি শিশু মাঝেমাঝে হেঁচকি তুললে সেটাও আপনি টের পেতে পারেন।
শিশু এখন তার অ্যামনিওটিক থলের ভেতরে নিয়মিত প্রস্রাব তথা মূত্রত্যাগ করতে থাকে, অর্থাৎ অ্যামনিওটিক থলের ভেতরে যেই অ্যামনিওটিক তরল দিয়ে শিশুটি চারপাশে ঘেরা থাকে তার একটা বড় অংশ হল তার নিজের প্রস্রাব। এই তরল শিশুটির চারপাশে একটি স্থিতিশীল তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে।

গর্ভাবস্থার ২৬তম সপ্তাহ

দুই পায়ের মাঝখানে যেই পেশীবহুল পর্দার মত অংশটি মূত্রথলী, জরায়ু (পুরুষের প্রোস্টেট) ও বৃহদান্ত্রকে (Large Intestine) সঠিক স্থানে ধরে রাখতে সাহায্য করে, তাকে পেলভিক ফ্লোর বলা হয়। গর্ভাবস্থায় বাড়তি চাপের কারণে এই পেলভিক ফ্লোর কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ে, ফলে অনেকসময়ই হাঁচি-কাশি দেয়ার সাথে সাথে কিছুটা প্রস্রাব বেড়িয়ে আসতে পারে। এমন পরিস্থিতি এড়াতে আপনি নিয়মিত হালকা কিছু ব্যায়াম করতে পারেন।
বিগত কয়েক সপ্তাহ আপনি বেশ হালকা অনুভব করলেও সামনের সপ্তাহগুলোতে আপনার গর্ভের আকার খুব দ্রুত বাড়বে। ফলে ক্লান্তি, ভারসাম্যহীনতা, পায়ে ব্যথা – এসব সমস্যাও কিছুটা বাড়তে পারে।

২৬তম সপ্তাহের কমন লক্ষণগুলো হচ্ছে:
• বেশি ক্লান্ত অনুভব করা,
• স্ট্রেচ মার্কস (পেটের আকার বাড়াতে থাকায় চামড়ায় যে টান পড়ে তার কারণে ফাটা দাগের মত চিহ্ন দেখা দেওয়া),
• ঘুমের সমস্যা হওয়া,
• দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়া বা রক্ত পড়া,
• পেটে ব্যথা,
• কিছু ক্ষেত্রে নাক থেকে হালকা রক্ত পড়া,
• পেট ফাঁপা ও কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া,
• বদহজম ও বুক জ্বালাপোড়া করা,
• চাপ দিলে স্তনে ব্যথা অনুভব করা,
• পায়ে ব্যথা,
• অল্পতেই গরম লাগা কিংবা সামান্য গরম আবহাওয়াতেই অস্বস্তি বোধ করা বা হাঁসফাঁস করা,
• মাথা ঘুরানো বা মাথা ব্যথা,
• হাত-পায়ে পানি আসা বা ফুলে যাওয়া,
• প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া বা ইনফেকশন,
• যোনিপথে অর্থাৎ মাসিকের রাস্তায় ইনফেকশন,
• মুখের বা শরীরের অন্যান্য অংশের চামড়ায় ছোপ ছোপ দাগ পড়া,
• অনেকের ক্ষেত্রে মাথার চুল আগের চেয়ে ঘন, কালো হয়ে ওঠা।
যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে
• গর্ভাবস্থায় অনেকের উচ্চ রক্তচাপ অর্থাৎ হাই ব্লাড প্রেশারের সমস্যা দেখা দিতে পারে। আপনার প্রেশারের সমস্যা দেখা দিচ্ছে কিনা তা খেয়াল রাখুন। নিয়মিত ডাক্তারের কাছে বা বাসায় ব্লাড প্রেশার পরিমাপ করে দেখতে পারেন।
• গর্ভাবস্থার এই সময়টাতে অনেকেরই খুব বেশি গরম লাগে বা অল্প গরমেই অস্বস্তি হয়। বিশেষত রাতের বেলায় এমনটা বেশি হয়। এ সমস্যা এড়াতে যতটা সম্ভব ঢিলেঢালা ও আরামদায়ক সুতির পোশাক পরার চেষ্টা করুন।

গর্ভের শিশু কীভাবে বড় হচ্ছে
এই সপ্তাহে আপনার শিশু লম্বায় প্রায় ৩৫.৬ সেন্টিমিটার বা ১৪ ইঞ্চি হয়; এসময় তার ওজন হয় প্রায় ৭৬০ গ্রাম বা প্রায় পৌনে এক কেজি।
শিশুটি এ সপ্তাহে প্রথমবারের মত চোখ খোলে। ধীরে ধীরে নিয়মিত চোখের পাতা ফেলতে ও খুলতে, অর্থাৎ মিটমিট (blinking) করতে শুরু করে। শিশুটির চোখের মণির রং তার জন্মের পরে বেশ কিছু সময় (সাধারণত ৩ বছর) পার হওয়া পর্যন্ত বদলাতে থাকে। এই সময়ের পরে শিশুর চোখের মণি একটি নির্দিষ্ট রং-এ এসে স্থির হয়।

গর্ভাবস্থার ২৭তম সপ্তাহ

এ সময়ে আপনি আগের চেয়ে বেশি ক্লান্ত অনুভব করতে পারেন। ঘন ঘন মাথা ঘুরানোর সমস্যাও দেখা দিতে পারে, বিশেষ করে শোয়া বা বসা অবস্থা থেকে হঠাৎ উঠে দাঁড়ানোর সময় মাথা ঘুরাতে পারে। তাই শোয়া বা বসা থেকে ধীরে ধীরে ওঠার চেষ্টা করুন।
এ সময়ে অনেকের ঘুমের মধ্যে নাক ডাকার সমস্যা দেখা দেয়। এ নিয়ে লজ্জিত বা চিন্তিত হওয়ার কোন কারণ নেই, গর্ভবতী অবস্থায় নাক ডাকা খুবই কমন ও স্বাভাবিক সমস্যা।

এসব ছাড়াও এ সপ্তাহে আপনার আর যেসব লক্ষণ থাকতে পারে সেগুলো হল:
• স্ট্রেচ মার্কস (পেটের আকার বাড়াতে থাকায় চামড়ায় যে টান পড়ে তার কারণে ফাটা দাগের মত চিহ্ন দেখা দেওয়া),
• দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়া বা রক্ত পড়া,
• পেটে ব্যথা,
• কোমরে ব্যথা,
• ঘুমের সমস্যা হওয়া,
• কিছু ক্ষেত্রে নাক থেকে হালকা রক্ত পড়া,
• পেট ফাঁপা ও কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া,
• বদহজম ও বুক জ্বালাপোড়া করা,
• চাপ দিলে স্তনে ব্যথা অনুভব করা,
• পায়ে ব্যথা,
• অল্পতেই গরম লাগা কিংবা সামান্য গরম আবহাওয়াতেই অস্বস্তি বোধ করা বা হাঁসফাঁস করা,
• মাথা ঘুরানো বা মাথা ব্যথা,
• হাত-পায়ে পানি আসা বা ফুলে যাওয়া,
• প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া বা ইনফেকশন,
• যোনিপথে অর্থাৎ মাসিকের রাস্তায় ইনফেকশন,
• মুখের বা শরীরের অন্যান্য অংশের চামড়ায় ছোপ ছোপ দাগ পড়া।

যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে
• গর্ভাবস্থায় ঘুমানোর সময় একপাশ হয়ে শোয়ার চেষ্টা করুন। এসময় চিৎ হয়ে শোওয়ার কারণে অনেকের পিঠে বা কোমরে ব্যথা, বদহজম বা কোষ্ঠকাঠিন্য জাতীয় সমস্যা দেখা দিতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, এসময় একপাশ হয়ে শোওয়া গর্ভের শিশুর সুস্থতার জন্যও সহায়ক।
• গর্ভাবস্থায় ভ্রমণ করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করুন। সামনের সপ্তাহগুলোতে প্রয়োজন ছাড়া খুব দূরের ভ্রমণ বা কষ্টকর জার্নি করা থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করুন।

গর্ভের শিশু কীভাবে বড় হচ্ছে
এই সময়ে আপনার শিশু লম্বায় প্রায় ৩৬.৬ সেন্টিমিটার বা প্রায় সাড়ে ১৪ ইঞ্চি হয়, ওজন প্রায় ৮৭৫ গ্রাম৷
শিশুটির হার্টবিট বা হৃৎস্পন্দনের হার আগের চেয়ে কিছুটা কমে আসে (মিনিটে প্রায় ১৪০ বার হৃৎস্পন্দন হয়), তবে এখনও তা মায়ের হার্টবিটের চেয়ে বেশি থাকে।
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, এসময় থেকে শিশুটি তার নিজের ফুসফুসের সাহায্যে সফলভাবে শ্বাস নিতে পারে। এছাড়াও তার শরীরের চামড়া এতদিন কিছুটা কুঁচকানো থাকলেও ধীরে ধীরে চামড়ার ভাঁজে মেদ জমে এখন তা অনেকটা মসৃণ হয়ে আসে। এ সময় থেকে সে ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখতেও শুরু করে।

গর্ভাবস্থার ২৮তম সপ্তাহ

মায়ের রক্তের গ্রুপ নেগেটিভ (Rh Negative) ও বাবার রক্তের গ্রুপ যদিপজিটিভ (Rh Positive) হয়ে থাকে তাহলে গর্ভের শিশুর সুরক্ষার জন্য এসময় মায়ের শরীরে একটি টীকা (Anti-D) দেওয়া হতে পারে। তাই এই সময়ে আপনার এবং আপনার গর্ভের শিশুর রক্ত পরীক্ষা করে নেয়া হবে।
এসময় বুক জ্বালাপোড়া করা একটি কমন সমস্যা। এটি অস্বস্তিকর হলেও আসলে তেমন ক্ষতিকর নয়।
হাতে-পায়ে বা মুখে পানি আসাও এসময়ের একটি কমন ঘটনা, তবে এটি ‘প্রি-এক্লাম্পসিয়া’ নামের একটি জটিল সমস্যার লক্ষণও হতে পারে। এই রোগে আপনার রক্তচাপ বা ব্লাড প্রেশার হঠাৎ করেই অনেক বেড়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন গুরুতর সমস্যা তৈরি হতে পারে। এ ব্যাপারে সচেতন থাকুন এবং প্রয়োজনে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।

২৮তম সপ্তাহ থেকে আপনার তৃতীয় ত্রৈমাসিক বা থার্ড ট্রাইমেস্টার শুরু হয়। এ সপ্তাহেও আগের সপ্তাহগুলোর মত কিছু লক্ষণ থাকে, যেমন:
• অনেক বেশি ক্লান্ত অনুভব করা,
• স্ট্রেচ মার্কস (পেটের আকার বাড়াতে থাকায় চামড়ায় যে টান পড়ে তার কারণে ফাটা দাগের মত চিহ্ন দেখা দেওয়া),
• দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়া বা রক্ত পড়া,
• পেটে ব্যথা,
• কোমরে ব্যথা,
• ঘুমের সমস্যা হওয়া,
• কিছু ক্ষেত্রে নাক থেকে হালকা রক্ত পড়া,
• পেট ফাঁপা ও কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া,
• বদহজম,
• চাপ দিলে স্তনে ব্যথা অনুভব করা,
• পায়ে ব্যথা,
• অল্পতেই গরম লাগা কিংবা সামান্য গরম আবহাওয়াতেই অস্বস্তি বোধ করা বা হাঁসফাঁস করা,
• মাথা ঘুরানো বা মাথা ব্যথা,
• হাত-পায়ে পানি আসা বা ফুলে যাওয়া,
• প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া বা ইনফেকশন,
• যোনিপথে অর্থাৎ মাসিকের রাস্তায় ইনফেকশন,
• মুখের বা শরীরের অন্যান্য অংশের চামড়ায় ছোপ ছোপ দাগ পড়া।
যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে
• এ সপ্তাহে আপনাকে ‘২৮তম সপ্তাহের অ্যান্টিনেটাল চেকআপ‘ অর্থাৎ গর্ভকালীন সেবা গ্রহনের জন্য ডাক্তার বা নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের স্বাস্থ্যকর্মীর সাথে দেখা করতে হবে। এ ব্যাপারে আপনার ডাক্তারের সাথে বা হাসপাতালে কথা বলে আগে থেকেই নিশ্চিত হয়ে নিন।
• গর্ভবতী অবস্থায় নিয়মিত হালকা ব্যায়াম বা শরীরচর্চা করলে তা মা ও শিশু দুজনের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।

গর্ভের শিশু কীভাবে বড় হচ্ছে
এ সপ্তাহে আপনার শিশু লম্বায় প্রায় ৩৭.৬ সেন্টিমিটার বা ১৪.৮ ইঞ্চি হয়, যা আকারে প্রায় একটি বড়সড় আনারসের সমান।। এ সময় শিশুর ওজন হয় প্রায় ১ কেজি।
ইতিমধ্যে শিশুর শারীরিক কাঠামো প্রায় পুরোপুরি তৈরি হয়ে যায়, এখন কেবল তা পরিণত হতে থাকে। এখন স্টেথোস্কোপের সাহায্যে তার হৃৎস্পন্দন যায়, এমনকি মায়ের পেটে কান পাতলেও মাঝেমাঝে এই হার্টবিট শোনা যাবে। শিশুর চামড়ার নিচে মেদ জমতে থাকে, সেই সাথে তার ওজনও বাড়তে থাকে।
এ সময়ে তার মুখমন্ডলের বৈশিষ্ট্যগুলো পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠতে শুরু করে এবং চোখে ছোট ছোট পাঁপড়ি গজাতে শুরু করে।

গর্ভাবস্থার ২৯তম সপ্তাহ

এসময় গর্ভের আকার ক্রমাগত বাড়তে থাকায় ফুসফুসের উপর কিছুটা চাপ পড়ে, ফলে এসময় অনেকে হালকা শ্বাসকষ্ট অনুভব করতে পারেন। পায়ের গোড়ালি ফুলে যেতে পারে, তাছাড়া পায়ে ব্যথাও হতে পারে। তাই যতটা সম্ভব আরামদায়ক জুতা পরে চলাফেরা করুন।

এছাড়া এসময় আরও যে লক্ষণগুলো থাকতে পারে তা হল:
• অনেক বেশি ক্লান্ত অনুভব করা,
• স্ট্রেচ মার্কস (পেটের আকার বাড়াতে থাকায় চামড়ায় যে টান পড়ে তার কারণে ফাটা দাগের মত চিহ্ন দেখা দেওয়া),
• দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়া বা রক্ত পড়া,
• পেটে ব্যথা,
• কোমরে ব্যথা,
• ঘুমের সমস্যা হওয়া,
• কিছু ক্ষেত্রে নাক থেকে হালকা রক্ত পড়া,
• পেট ফাঁপা ও কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া,
• বদহজম,
• চাপ দিলে স্তনে ব্যথা অনুভব করা,
• পায়ে ব্যথা,
• অল্পতেই গরম লাগা কিংবা সামান্য গরম আবহাওয়াতেই অস্বস্তি বোধ করা বা হাঁসফাঁস করা,
• মাথা ঘুরানো বা মাথা ব্যথা,
• হাত-পায়ে পানি আসা বা ফুলে যাওয়া,
• প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া বা ইনফেকশন,
• যোনিপথে অর্থাৎ মাসিকের রাস্তায় ইনফেকশন,
• মুখের বা শরীরের অন্যান্য অংশের চামড়ায় ছোপ ছোপ দাগ পড়া।
যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে
• নিজের এবং বাড়ন্ত শিশুর শরীরের পুষ্টির চাহিদা পূরণের জন্য যথেষ্ট পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। গর্ভাবস্থার স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে জানতে প্রয়োজনে একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন।
• গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশনের ঝুঁকি বেড়ে যায়, এ সম্পর্কে সচেতন থাকুন।

গর্ভের শিশু কীভাবে বড় হচ্ছে
এ সপ্তাহে আপনার শিশু লম্বায় প্রায় ৩৮.৬ সেন্টিমিটার বা ১৫.২ ইঞ্চি হয়। ওজন হয় প্রায় ১.২ কেজি।
গর্ভে শিশুর নড়াচড়া অনেকখানি বেড়ে যায়, ফলে আপনি প্রায় সারাক্ষণই এই নড়াচড়া টের পাবেন। এসময় শিশুরা সাধারণত একটি নির্দিষ্ট ধাঁচে বা প্যাটার্নে নড়াচড়া করে থাকে। আপনার সন্তানের নড়াচড়ার ধরনটি খেয়াল করুন, এতে হঠাৎ কোন পরিবর্তন বা অস্বাভাবিকতা টের পেলে দ্রুত আপনার ডাক্তারকে জানান।

গর্ভাবস্থার ৩০তম সপ্তাহ

গর্ভাবস্থার ২৯তম থেকে ৩২তম সপ্তাহে রাতে ঘুমানোর সময় পায়ে ব্যথা অনুভব করা একটি কমন সমস্যা। রাতে ঘুমানোর ক্ষেত্রে এসময় অনেকে অস্বস্তি বোধ করতে পারেন। এটি কাটিয়ে উঠতে একপাশে কাত হয়ে এবং পেটের নিচে বালিশ বা আরামদায়ক কিছু রেখে ঘুমানোর চেষ্টা করুন।
গর্ভাবস্থায় অনেকের ক্ষেত্রে শরীরের বিভিন্ন জায়গায়, বিশেষ করে পেটের চারপাশের চামড়ায় চুলকানি হতে পারে। চুলকানি এড়াতে এসব জায়গায় ময়েশ্চারাইজার অর্থাৎ লোশন বা তেল মালিশ করতে পারেন। তবে খুব বেশি বা অস্বাভাবিক ধরনের চুলকানি লিভারের সমস্যা বা অন্য কোন গুরুতর সমস্যার লক্ষণ হতে পারে (যেমন ইন্ট্রাহেপাটিক কোলেস্টেসিস অফ প্রেগ্ন্যান্সি/অবস্টেট্রিক কোলেস্টেসিস)। তাই চুলকানি থাকলে প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

এই সপ্তাহের অন্যান্য লক্ষণগুলো হল:
• অনেক বেশি ক্লান্ত অনুভব করা,
• স্ট্রেচ মার্কস (পেটের আকার বাড়াতে থাকায় চামড়ায় যে টান পড়ে তার কারণে ফাটা দাগের মত চিহ্ন দেখা দেওয়া),
• দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়া বা রক্ত পড়া,
• পেটে ব্যথা,
• কোমরে ব্যথা,
• ঘুমের সমস্যা হওয়া,
• কিছু ক্ষেত্রে নাক থেকে হালকা রক্ত পড়া,
• পেট ফাঁপা ও কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া,
• বদহজম,
• চাপ দিলে স্তনে ব্যথা অনুভব করা,
• পায়ে ব্যথা,
• অল্পতেই গরম লাগা কিংবা সামান্য গরম আবহাওয়াতেই অস্বস্তি বোধ করা বা হাঁসফাঁস করা,
• মাথা ঘুরানো বা মাথা ব্যথা,
• হাত-পায়ে পানি আসা বা ফুলে যাওয়া,
• প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া বা ইনফেকশন,
• যোনিপথে অর্থাৎ মাসিকের রাস্তায় ইনফেকশন,
• মুখের বা শরীরের অন্যান্য অংশের চামড়ায় ছোপ ছোপ দাগ পড়া।
যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে:
• হালকা ব্যায়াম বা শরীরচর্চা করা চালিয়ে যান। গর্ভাবস্থায় নিরাপদ ব্যায়ামের ধরন সম্পর্কে জানতে প্রয়োজনে একজন প্রশিক্ষকের সাহায্য নিন ।

কোন লক্ষণগুলো দেখা দেওয়ার পর প্রসববেদনা শুরু হয় জেনে নিন
যদিও হিসাব অনুযায়ী স্বাভাবিকভাবে প্রসব তথা ডেলিভারীর সময় হতে এখনো বেশ কিছুদিন বাকি আছে, তবুও এ ব্যাপারে আগে থেকেই জেনে রাখা ভালো। প্রসববেদনা ও প্রসবের প্রস্তুতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আপনার ডাক্তার বা নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের স্বাস্থ্যকর্মীর সাথে বিস্তারিত আলোচনা করে নিন। কোথায় কিভাবে ডেলিভারী হবে এ ব্যপারে পরিবারের সদস্যদের জানিয়ে রাখুন।

গর্ভের শিশু কীভাবে বড় হচ্ছে
এ সপ্তাহে আপনার শিশু লম্বায় প্রায় ৩৯.৯ সেন্টিমিটার বা প্রায় পৌনে ১৬ ইঞ্চি হয়, যা আকারে একটি বড়সড় বাঁধাকপির সমান। ওজন হয় প্রায় ১.৩ কেজি।
এখন থেকে শিশুটি তার আঙ্গুল চুষতে পারে, যা তাকে জন্মের পর মায়ের বুকের দুধ পান করার জন্য প্রস্তুত করে। তার দৃষ্টিশক্তি আরো উন্নত হতে থাকে। সে এখন বাইরের উজ্জ্বল আলোর উপস্থিতি টের পেলে কখনও কখনও প্রতিক্রিয়া তথা রিঅ্যাকশনও দিতে পারে।
তার ত্বক এতদিন ‘ভার্নিক্স’ নামের যে চিটচিটে আঠালো তরল এবং ‘লানুগো’ নামের যেসব ছোট ছোট পশম দিয়ে আবৃত ছিল, সেগুলো এসময়ে এসে কমতে শুরু করে।

গর্ভাবস্থার ৩১তম সপ্তাহ

গর্ভাবস্থার এসময়ে অনেকেই পিঠে বা কোমরে ব্যথা অনুভব করেন৷ ক্রমশ বাড়তে থাকা গর্ভের কারণে কোমরের পেশিতে চাপ পড়ে, ফলে এই সমস্যা দেখা দেয়। তাই এসময় ভারী কাজ করা থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে কোমরে ম্যাটারনিটি বেল্ট পরতে পারেন। এছাড়া নিয়মিত হালকা ব্যায়াম এই ব্যথা কমাতে সাহয্য করবে।
৩১তম বা এরপরের সপ্তাহগুলোতে গর্ভাশয়ের পেশীগুলোর সংকোচনের ফলে হঠাৎ হঠাৎ পেটে টান পড়ার মত অনুভূতি হতে পারে। এটি ২০-৩০ সেকেন্ড স্থায়ী হয় এবং এতে সাধারণত কোন ব্যথা অনুভব হয় না। ধারণা করা হয়, এই সংকোচনের মাধ্যমে আপনার গর্ভাশয় প্রসবের জন্য প্রস্তুত হয় (ব্রাক্সটন-হিক্স কন্ট্রাকসন)। কিন্তু যদি এর সাথে ব্যথা অনুভূত হয় বা একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর এমনটা হতে থাকে তবে তা নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই প্রসববেদনা শুরু হওয়ার লক্ষণ হতে পারে। তাই এমনটা হলে দেরি না করে ডাক্তার বা নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের স্বাস্থ্যকর্মী বা একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ধাত্রীর শরণাপন্ন হন।

এছাড়া এসপ্তাহে গর্ভবতী মায়েদের যে লক্ষণ গুলো থাকতে পারে সেগুলো হল:
• ঘুমের সমস্যা হওয়া,
• স্ট্রেচ মার্কস (পেটের আকার বাড়াতে থাকায় চামড়ায় যে টান পড়ে তার কারণে ফাটা দাগের মত চিহ্ন দেখা দেওয়া),
• দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়া বা রক্ত পড়া,
• পেটে ব্যথা,
• পাইলসের সমস্যা দেখা দেওয়া বা হঠাৎ এই সমস্যা বেড়ে যাওয়া,
• কিছু ক্ষেত্রে নাক থেকে হালকা রক্ত পড়া,
• পেট ফাঁপা ও কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া,
• বদহজম,
• চাপ দিলে স্তনে ব্যথা অনুভব করা,
• পায়ে ব্যথা,
• অল্পতেই গরম লাগা কিংবা সামান্য গরম আবহাওয়াতেই অস্বস্তি বোধ করা বা হাঁসফাঁস করা,
• মাথা ঘুরানো বা মাথা ব্যথা,
• হাত-পায়ে পানি আসা বা ফুলে যাওয়া,
• প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া বা ইনফেকশন,
• যোনিপথে অর্থাৎ মাসিকের রাস্তায় ইনফেকশন, এবং
• মুখের বা শরীরের অন্যান্য অংশের চামড়ায় ছোপ ছোপ দাগ পড়া।

যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে:
গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ ‘প্রি- একলাম্পশিয়া’ এর লক্ষণ হতে পারে৷ এর ফলে প্রসবে নানাধরণের জটিলতা থেকে শুরু করে মা ও সন্তানের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে৷ গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ ও প্রি-একলাম্পশিয়া সম্পর্কে জানতে আমাদের এ সংক্রান্ত লেখাটি পড়তে পারেন।

গর্ভের শিশু কীভাবে বড় হচ্ছে
৩১ তম সপ্তাহে আপনার শিশু লম্বায় প্রায় ৪১.১ সেন্টিমিটার দীর্ঘ হয় এবং তার ওজন হয় প্রায় ১.৫ কেজির মত, যা আকারে প্রায় একটি নারিকেলের সমান৷
এখন শিশুটি গর্ভের ভেতরে খুবই সক্রিয় হয়ে ওঠে৷ প্রায় সারাক্ষণ ই এদিক সেদিক নড়াচড়া করতে থাকে, আঙুল চুষতে থাকে, এছাড়া মাঝেমাঝে গর্ভের ভেতরে ডিগবাজি বা উল্টে যাওয়ার মত অদ্ভূত কসরতও করতে পারে৷ তার নড়াচড়ায় হঠাৎ কোন অস্বাভাবিকতা অনুভব করলে বা স্বাভাবিক প্যাটার্নে ছন্দপতন হলে আপনার ডাক্তার কে বিষয়টি জানান।
ইতিমধ্যে সে আরও ভালোভাবে চোখে দেখতে শুরু করে৷ আস্তে আস্তে সে কোন কিছু দেখার সময় ফোকাস করতে শিখে৷
এছাড়াও এখন সে মানুষের গলার স্বরও চিনতে শুরু করে৷ তাই এসময় থেকেই বাবা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের তার সাথে কথা বলতে উৎসাহিত করতে পারেন৷ এতে করে তাদের মধ্যে একটি দৃঢ় বন্ধন গড়ে উঠতে শুরু করবে।
________________________________________
আর্টিকেলটি লেখা ও সম্পাদনায় কাজ করেছেন: সামিয়া আফরিন এবং ডা. বিদিশা কুণ্ডু।