মুজাহিদুল ইসলাম, ঔষধ ও স্বাস্থ্য পরামর্শকঃ
কৃমি একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা। সাধারণত শিশুদের এই সমস্যা বেশি দেখা দেয় তবে বড়দেরও হতে পারে।কৃমি সমস্যা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়, সবাই আমরা কম বেশি কৃমি সমস্যার সাখে পরিচিত, কৃমি আকারে খুবি ছোট। কিন্তু জেনে আপনি অবাক হবেন কৃমি মানুষের অন্ত্র বা পেট থেকে প্রতিদিন শূন্য দশমিক ২ মিলিমিটার রক্ত শোশন করে নেয়,সুতারাং অনেক পরিমান কৃমি যদি শরীরে থাকে তবে শরীর প্রতিদিন বেশ কিছু পরিমান রক্ত হারায়,এতে করে শরীর হয়ে পড়ে রক্তশূন্য।কৃমি সমস্যায় শিশুরা  অপুষ্টি ও রক্তশূন্যতায় ভোগে,বড়রাও এ ধরনের সমস্যায় পড়েন।

  • কৃমির প্রকারভেদ;
    কৃমি নানা রকমের হয় এবং প্রকারবেদে চিকিৎসার ধরন ও আলাদা,
    -গোল কৃমি : এগুলো সাধারণত গোল, পাতলা, সাদা বা গোলাপী রঙের হয় এবং ১০-১২ ইঞ্চি লম্বা হয়।
    -সুতা কৃমি  : এগুলো সুতার মত, ছোট, পাতলা এবং সাদা রঙের হয়।
    -বক্র কৃমি : এগুলো আকারে খুবই ছোট, গারো গোলাপী রঙের হয়। এগুলো খালি চোখে দেয়া যায় না।
    -ফিতা কৃমি : এগুলো ২-৩ মিটার লম্বা এবং সমান হয়।

কৃমি সমস্যায় সাধারনত যে লক্ষন গুলি দেখা দেয় তা হলো:
প্রচন্ড পেট ব্যথা। রক্ত শূন্যতা, খাওয়ায় অরুচি, ক্ষুদামন্ধা, মাথা ঘোরা, দূর্বল লাগা,কোনো কাঝে শক্তি না পাওয়া ইত্যাদি।

 

 কৃমি হওয়ার প্রাথমিক কারন:

  1. দূষিত পানি বা খাবার খেলে।,
  2. রান্নার পূর্বে শাকসবজি, মাছ, মাংস ইত্যাদি ভালভাবে না ধুয়ে রান্না করলে।
  3. সাস্থ্যসম্মত পায়খানা ব্যবহার না করলে।
  4. পায়খানার পরে,কাজকর্মের শেষে এবং খাবার খাওয়ার পূর্বে সাবান দিয়ে ভালভাবে হাত পরিস্কার না করলে।
  5. অন্যের পোশাক, তোয়ালে ইত্যাদি ব্যবহার করলে।

কৃমি অনেক সময় অন্ত্রের বা পিত্ত থলির নালিতে আটকে বড় ধরনের সাস্থ্য সমস্যা তৈরি করতে পারে,তাই আমাদের উচিত বছরে দুইবার অন্তত ৬মাস পরপর কৃমিনাশক ঔষধ সেবন করা। আমাদের দেশে মেবেন্ডাজল এবং এলবেন্ডাজল  বহুল ব্যবহৃত কৃমি নাশক ঔষধ।

মেবেন্ডাজল বাজারে SOLAS(Opsonin) Ermox(Squre) সহ আরো অনেক নামে পাওয়া যায়।

এলবেন্ডাজল Alben DS(Eskayef) Ben A(Acme) Sintel(ACI)Estazol(ibnsina) Alphin Ds (Beximco)সহ আরো অনেক নামে বাজারে পাওয়া যায়।

মেবেন্ডাজল এবং এলবেন্ডাজল বেনজাইমিডাজল গ্রুপের ঔষধ,এবং এ দুটিই প্রায় সব ধরনের কৃমির বিরুদ্ধে কাজ করে। এখন আসুন জেনে নেই মূলতো মেবেন্ডাজল এবং এলবেন্ডাজল কিভাবে কাজ করে আমাদের শরীরে, মূলতো মেবেন্ডাজল এবং এলবেন্ডাজল কৃমি কে আমাদের শরীর থেকে গ্লুকোজ নিতে বাধা দেয় এতে করে কৃমিরা গ্লুকোজ বা শর্করা জাতিয় খাবারের অভাবে মারা যায়।এই পদ্ধতিতেই মেবেন্ডাজল এবং এলবেন্ডাজল আমাদের শরীর থেকে শরীরের জন্য ক্ষতিকর পরজিবি কৃমি মুক্ত করে।

এখন প্রশ্নে আসতেই পারে কোনটি ব্যবহার করবেন মেবেন্ডাজল নাকি এলবেন্ডাজল?

মেবেন্ডাজলঃ মেবেন্ডাজল অন্ত্রে থাকা কৃমিদের উপর বেশি কাজ করে এবং সহজেই  অন্ত্রথেকে পুরো শরীরে শোষন হয়না বলে কম টক্সিক ,মেবেন্ডাজল পেটে থাকা কৃমি চাড়া টিসুতে অথবা শরীরে ভিবিন্ন অংশে থাকা কৃমি বা ক্ষতিকর পরজিবি এর বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে না।এটি দিনে দু’বার পরপর তিনদিন খেতে হয়। ওষুধটি সেবনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় পেট ব্যথা, বমি হওয়া, শরীরে র‌্যাশ, মাথাব্যথা, মাথা ঘোরানো, জ্বর জ্বর ভাব ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে যদিও এগুলো তেমন গুরুতর কিছু নয়।


এলবেন্ডাজলঃ
এলবেন্ডাজল পুরো শরীরে থাকা কৃমি সহ সকল ক্ষতিকর পরিজীবি দের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে বা সক্ষম।এলবেনডাজল মূলত ফিতা কৃমির চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়, যদিও এটি গুঁড়া কৃমি, বক্রকৃমি এবং গোল কৃমির চিকিৎসায়ও সমানভাবে কার্যকর। এলবেনডাজল একক মাত্রার ৪০০ মিলিগ্রাম ঔষুধ শিশু অথবা বড়দের কৃমিনাশক হিসেবে সেবনের পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। প্রথমবার সেবনের পরেও কৃমির উপদ্রব থাকলে দু’সপ্তাহ পর আবার ওষুধটি সেবনের পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। ওষুধটি সেবনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় পেট ব্যথা, বমি হওয়া, শরীরে র‌্যাশ, মাথাব্যথা, মাথা ঘোরানো, জ্বর জ্বর ভাব ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে যদিও এগুলো তেমন গুরুতর কিছু নয়।

যদিও দুটি ঔষধ সব ধরনের কৃমির বিরুদ্ধে কাজ করে,তবুও তাদের কাজের যায়গা ভিন্ন এলবেন্ডাজল শরীরের যে কোনো অংশের কৃমিসহ ক্ষতিকর পরজীবির বিরুদ্ধে কাজ করে থাকে, অপর দিকে মেবেন্ডাজল শুধু কাজ করে অন্ত্রের (পেটের) কৃমির বা ক্ষতিকর পরজীবির বিরুদ্ধে তাই কোন ঔষধটি সেবন করবেন তা রোগির সমস্যা,বয়স,অবস্থা, সংক্রামনের ধরন সহ নানা বিষয়ের উপর নির্ভর করে।

কৃমিনাশক ওষুধ কখন সেবন করবেনঃ

দু’বছরের বেশি বয়সী শিশু অথবা বড়রা কৃমিনাশক ওষুধ চার মাস পর পর চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করতে পারবেন।,

  • -একক মাত্রার ওষুধের ক্ষেত্রে রাতের বেলায় ওষুধটি সেবন করতে হবে।
  • -অপুষ্টিজনিত রক্তস্বল্পতার ক্ষেত্রে কৃমিনাশক ওষুধ সেবন করলে উপকার পাওয়া যেতে পারে।
  • -কৃমিনাশক ওষুধ সপরিবারে সেবনে কার্যকর ফল পাওয়া যায়।

কৃমিনাশক ওষুধ কখন সেবন করবেন না:

-অসুস্থ্য ব্যক্তির ক্ষেত্রে অথবা গ্যাস্ট্রিকের ওষুধের সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতিত কৃমিনাশক ওষুধ সেবন করা যাবে না।

-গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে, কৃমিনাশক ওষুধ সেবন নিষিদ্ধ। তবে অপুষ্টির শিকার হলে এবং চিকিৎসক প্রয়োজন মনে করলে শেষ প্রান্তিকে অনেক ক্ষেত্রে কৃমিনাশক ওষুধ সেবনের পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে।তাই এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ জরুরী।

ভুল ধারনাঃ অনেকেই মনে করেন গরমের সময়ে কৃমির ঔষধ সেবনে সমস্যা হয়,আসলে সমস্যা হয় না, তবে কৃমির ঔষধ ভরা পেটে সেবন করা উচিত।

 

 

           লেখকঃ আশ্রাফ উদ্দিন আসিফ

পেশায় একজন শিক্ষক, সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের ঔষধ পরামর্শক হিসেবে কর্মরত আছেন। ঔষধ বিষয়ে নিয়মিত কলাম লিখেন ঔষধ বার্তা ডট.কম এ। এছাড়াও, তিনি ঔষধ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, ঔষধের মাত্রা ও সেবনের নিয়ম সংক্রান্ত বিষয়ে কনসালটেন্সি করেন।