কান পাকা/ মধ্যকর্ণের প্রদাহ (Otitis media):

রোগের বর্ণনা (Disease descripion):
এই সমস্যা শিশুদের বেশি হয়ে থাকে। তবে বড়দেরও হয়ে থাকে। সাধারণত উর্ধ্বশ্বাসনালীর প্রদাহ, টনসিলে ইনফেকশন, এডিনয়েড নামক গুচ্ছ লসিকা গ্রন্থির বৃদ্ধি ইত্যাদি থেকে এই ইনফেকশন হয়ে থাকে। এই রোগে কানে বেশ ব্যথা হয়, কান বন্ধ মনে হয়।

শতকরা ৪.১ ভাগ লোক এই রোগে ভুগে থাকেন। এর মধ্যে ৩.১% রোগীর দুই কানেই এবং ১% রোগীর ১ কানে রোগটি দেখা যায়। বাংলাদেশে এই হার ৫-৬%। সাধারণত যাদের বয়স ৪১-৮০ বছর তাদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি যারা ১৮-৪০ বছরের তুলনায় দ্বিগুণ। কায়িক শ্রমনির্ভর পেশার মানুষ অন্যদের তুলনায় এই রোগে বেশী আক্রান্ত হয়।

কারণ (Causes):

  1. 1. কানের পর্দায় একটা স্থায়ী অসামঞ্জস্য তৈরি হলে, কান পাকা রোগ হবার আশংকা থাকে।
  2. 2. মধ্যকর্ণের আকস্মিক প্রদাহের কারণেও কান পাকতে পারে।
  3. 3. অনেক সময় মধ্যকর্ণের বায়ুচাপের কারণে অথবা সেখানে পানি জমে থাকার ফলে এই রোগের আশংকা দেখা দেয়।

রোগের প্রকারভেদ (Classification):
কানপাকা রোগ কানের রোগগুলোর অন্যতম। কান পাকা রোগ দুই ধরনের।

  1. নিরাপদ ধরণের (Tubotympanic disease/Safe type): এ ধরনের কানপাকা রোগে কান থেকে কানের পর্দা ছিদ্র থাকে। কান দিয়ে পুঁজ পড়ে। কানে ব্যথা হয়, কান চুলকায়, কানে কম শোনা যায়।
  2. মারাত্মক ধরণের (Tubotympanic disease/unsafe type): কান দিয়ে সব সময় একটু করে কষের মত ঝরে। কানের এই কষ পঁচা দূর্গন্ধযুক্ত হয়ে থাকে।

রোগের লক্ষণ ও উপসর্গ (Sign and Symptom):

  1. কান দিয়ে পানি বা পুঁজ আসা
  2. কানে প্রচন্ড ব্যথা
  3. অনেক সময় রক্ত আসতে পারে
  4. কানে কম শোনা

জটিলতা (Complication):
কান পাকা একটি সাধারণ রোগ। তবে দীর্ঘদিন ধরে যদি এ রোগে শিশু ভুগতে থাকে এবং যদি তার চিকিৎসা না করানো হয়, তাহলে পরবর্তী সময়ে শিশু বধির হয়ে যেতে পারে। তবে কান পাকলেই ভয় পাওয়ার কিছু নেই। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এ ধরনের জটিলতা হয় না।
আর কিছু শিশুর একবার কান পাকা ভালো হয়ে গেলেও বারবার কান পাকতে পারে, সেক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

প্রতিরোধ (Prevention):

  1. বারবার ময়লা কোনো কিছু দিয়ে কান পরিষ্কার করা যাবে না।
  2. বাইরে যত্রতত্র কান পরিষ্কার করা যাবে না।
  3. ডুব দিয়ে গোসল করা যাবে না।
  4. ঠান্ডা-সর্দি লাগলে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।

এগুলো করলে কান পাকা রোগ স্থায়ী হওয়ার আশঙ্কা নেই এবং জটিলতাও কম হবে।

ল্যাবরেটরি পরীক্ষা (Laboratory Test):
একটি বিশেষ যন্ত্র দিয়ে কান পরীক্ষা করা হয় যে, কানের পর্দাটা ঠিক আছে কি না। সাধারণত পর্দা সাদা চকচকে থাকে। যখনই সংক্রমণ হয়, পর্দা লাল হয়ে যায়। তারপর অনেক সময় পর্দায় ছিদ্র পাওয়া যায়। সেই ছিদ্র দিয়ে ক্রমাগত পুঁজ পড়তে থাকে। নিম্নোক্ত শ্রবণ শক্তি পরীক্ষা করা হয়-
1. Pure Tone Audiometry’ (PTA) test

চিকিৎসা (Treatment):
প্রথম কথা, কান পরিষ্কার করতে হবে। কানের ভেতরের পুঁজ সাকার দিয়ে অথবা অলিভ অয়েল দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। কান পরিষ্কার করার পর, কানে ড্রপ (এন্টিবায়োটিক ড্রপ অথবা এন্টিবায়োটিকের সঙ্গে স্টেরয়েড মিক্সড থাকে) ২ সপ্তাহের জন্য ব্যবহার করতে হবে। পাশাপাশি নাকের একটা ড্রপ এবং এন্টিহিস্টাসিন ট্যাবলেট খেতে হবে। ২ সপ্তাহ পর আবার রোগীকে আসতে বলা হয় এবং এর মধ্যে বেশির ভাগ রোগী ভালো হয়ে যায়।