স্ক্যাবিস আমাদের ত্বকের একটি অতি সাধারণ সমস্যা। একটু সচেতনতার সাথে চিকিৎসা করলে এ রোগ সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যায়। আবার একটু অবহেলার কারণে কিডনী ও হৃদযন্ত্রের জটিলতা সহ বিভিন্ন ধরণের জটিলতা দেখা যায়। স্ক্যাবিস নতুন কোনো রোগ নয় বরং Sarcoptes scabei নামক মথ দ্বারা প্রায় ২৫০০০ বছর যাবত মানুষে বিস্তৃত হচ্ছে। চর্মরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে বিশ্বব্যাপী প্রায় ৩০ কোটি মানুষ প্রতি বছর এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ব্যক্তিগত পরিষ্কার পরিচ্চন্নতার তারতম্যের কারণে জাতি, ধর্ম,বর্ণ নির্বিশেষে যেকোন বয়সে স্ক্যাবিস হতে পারে। তবে সুসংবাদ হলো খুব সহজেই এ রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা সম্ভব।
কীভাবে স্ক্যাবিস হয়:
অনুবীক্ষনিক এ মথটি খালি চোখে দেখা যেতে পারে। আট পা বিশিষ্ট গোলাকার ক্ষুদ্র এ মথটি ত্বকে লুকিয়ে থাকে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বিশেষ ধরণের এলার্জিক ক্রিয়ার ফলে ত্বক চুলকায় যা অনেক সময় এত বেশি হতে পারে যে, চুলকানোর ফলে রোগী রাতে ঘুম হতে জেগে যেতে পারে। ঘনিষ্ঠ স্পর্শে মানুষের মধ্যে স্ক্যাবিস ছড়ায়। ছেলেমেয়ে, বন্ধু-বান্ধব অথবা পরিবারের অন্য যেকোন সদস্য স্ক্যাবিসের উৎস হতে পারে। ঘনবসতিপূর্ণ জায়গা যেমন, শিশুসদন, এতিমখানা, জেলখানা,হাসপাতালে স্ক্যাবিস সহজে ছড়াতে পারে। যাদের মধ্যে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভাব রয়েছে এবং যারা একই বিছানা, পরিধেয় বস্ত্র ভাগাভাগি করে ব্যবহার করে তাদের মধ্যে এ রোগের প্রকোপ বেশি দেখা যায়।
উষ্ণতা ও গন্ধের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে স্ত্রী মথ প্রথমত ত্বকে লুকিয়ে থাকে। পরে ডিম পাড়ে এবং বিষ নি:সৃত করে এলার্জিক বিক্রিয়া ঘটায়। লার্ভা বা নতুন মথ ত্বকের ওপর দিয়ে চলাফেরা শুরু করে এবং শরীরের গুপ্তস্থানে থেকে পরিণত হয়। নখের আঁচড়ে সৃষ্ট ত্বকের ভাঁজে মথটি ২৪ ঘন্টা বা এর চেয়ে বেশি দিন বাঁচতে পারে। যারা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকে বিশেষ করে যারা নিয়মিত গোসল করে তারা এক মাস পর প্রথম চুলকানি অনুভব করতে পারে।
রোগের উপসর্গ:

  1. স্ক্যাবিস এর প্রাথমিক এবং অতিপরিচিত উপসর্গ চুলকানি,বিশেষ করে রাতে চুলকানোর প্রকোপ বেড়ে যায়।
  2. লাল ক্ষুদ্র ফুসকুড়ি দেখা যেতে পারে।
  3. সময়মতো চিকিৎসা না হলে পরে ত্বক খসখসে বা মাছের আঁশের মতো হতে পারে। স্ক্যাবিস সৃষ্টিকারী আনুমানিক ০.৪ মিমি মথ যা খালি চোখে দৃশ্যমান।
  4. স্ক্যাবিস উষ্ণস্থান পছন্দ করে। এ কারণে নিম্নলিখিত জায়গায় স্ক্যাবিস বেশি দেখা যায়।-

  5. শরীরের গুপ্তস্থানে।
  6. আটসাঁট পোশাকের নিচে।
  7. দুই আঙ্গুলের ফাঁকে বা নখের নিচে।
  8. কনুই বা কব্জির উপরে।
  9. নিতম্ব বা কোমরের নিচে।
  10. স্তন বৃন্তের চারদিকে।
  11. পুংলিঙ্গের ওপরে।
  12. ঘড়ি,চুড়ি বা আংটির নিচে মথটি লুকিয়ে থাকতে পারে।
  13. শিশুদের ক্ষেত্রে হাত ও পায়ের তালু, মাথাসহ শরীরের যেকোন জায়গায় হতে পারে।
  14. চুলকানিজনিত কারণে রাতে ঘুম না হওয়ায় শিশুরা ক্লান্ত, খিটখিটে হয়ে যায়।
  15. আঁচড়ের কারণে স্ক্যাবিস আক্রান্ত ত্বক ব্যকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমিত হয়ে জটিল আকার ধারণ করতে পারে।

রোগ নির্ণয়:
চর্ম বিশেষজ্ঞ মাথা হতে পা পর‌্যন্ত অত্যন্ত সতর্কতার সাথে পর্যবেক্ষন করে রোগটি নির্ণয় করে থাকেন।
কারা স্ক্যাবিসের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ:
স্ক্যাবিসের জন্য তারা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ যারা অন্যদের সাথে শারীরিক সংস্পর্শে আসে। যেমন-

  1. শিশু
  2. শিশুদের মা।
  3. যৌনকার্য করতে সক্ষত পরিণত নর-নারী।
  4. আশ্রমে বসবাসকারী বৃদ্ধ-বৃদ্ধা।

স্ক্যাবিস থেকে মুক্তির উপায়:
ভালো করে সাবান দিয়ে গোসল করার পর শরীর ভালো করে মুছে শুকাতে হবে। এর পর ৫ শতাংশ পারমিথ্রিন ক্রিম হাতে ও পায়ের তালু , নখ, কুঁচকি সহ গলা থেকে পা পর্যন্ত শরীরের সব জায়গায় লাগাতে হবে। এরপর ৮-১২ ঘন্টা পর আবার সাবান দিয়ে গোসল করতে হবে। এক সপ্তাহ পর আবার একইভাবে চিকিৎসা করতে হবে।
পারমিথ্রিন ক্রিমের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে ত্বক সাময়িক জ্বালাপোড়া করতে পারে। আবার স্ক্যাবিস দ্বারা আক্রান্ত হলে চর্ম বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। স্ক্যাবিস চিকিৎসায় আইভারমেকটিন নামক মুখে খাবার ঔষধ পাওয়া যায়, যা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করা উচিত। শিশু ও গর্ভবতী নারীদের এ ঔষধ দেয়া হয় না।
চিকিৎসায় পরিপূর্ণ সুফল পেতে করনীয়:

  1. যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে চিকিৎসা গ্রহন।
  2. পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা।
  3. পরিবারে আক্রান্ত সবাই একই সাথে চিকিৎসা গ্রহন। আক্রান্ত সবাই একই সাথে চিকিৎসা গ্রহন না করলে কখনোই চিকিৎসা সম্পন্ন হবেনা।
  4. পরিধেয় বস্ত্র ধুয়ে ইস্ত্রি করে পরতে হবে।
  5. বিছানা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে আবার ব্যবহার করতে হবে।

স্ক্যাবিস প্রতিরোধের উপায়:

  1. পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে।
  2. নিয়মিত সাবান দিয়ে গোসল করতে হবে।
  3. স্ক্যাবিস আক্রান্ত ব্যক্তির শারীরিক স্পর্শ থেকে দুরে থাকতে হবে।
  4. স্ক্যাবিস আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত পোশাক বা বিছানা ব্যবহার না করা।