শ্বেতী রোগ একসময় “সাদা কুষ্ঠ” নামে পরিচিত ছিল। কিন্ত চিকিৎসা বিজ্ঞানের ব্যাপক পরীক্ষা নিরীক্ষায় এটা প্রমানীত হয়েছে যে, কুষ্ঠ রোগের সাথে শ্বেতীর কোনো সম্পর্ক নেই। এটি সম্পূর্ন স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যযুক্ত এবং নিরাময়যোগ্য একটি রোগ। কিন্ত তা সত্ত্বেও এ রোগে আক্রান্ত লোকজন মারাত্নক মানসিক-সামাজিক সমস্যায় ভোগে। এমনকি পারিবারিক সম্প্রীতি বিনষ্ট ও দাম্পত্য জীবনে ব্যাঘাত সৃষ্টির ঘটনাও ঘটতে দেখা যায়।
পশ্চিমা দেশগুলোতে সুনির্দিষ্ট জাতীয় নীতিমালা ও পর‌্যাপ্ত চিকিৎসা সুবিধার মাধ্যমে এ সমস্যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে। এসব দেশে শ্বেতী রোগের আধুনিক চিকিৎসার পাশাপাশি রয়েছে অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা। কিন্ত আমাদের দেশে শ্বেতী রোগের ডায়াগনোসিস ও ব্যবস্থাপনায় একটি মারাত্নক বিশৃঙ্খলাপূর্ণ পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
বাংলাদেশ ১৫ কোটি মানুষের একটি দেশ। মোট জনসংখ্যার ৯০ শতাংশই গ্রামে এবং ১০ শতাংশ শহরে বাস করে। এখানে শ্বেতী রোগীদের অধিকাংশই প্রাথমিকভাবে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের দ্বারস্থ হয়ে থাকে। এই প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের মধ্যে রয়েছে ইমাম, কবিরাজ, গ্রাম্য ডাক্তার, ফার্মাসিস্ট, ফার্মেসী মালিক, প্যারামেডিকেল, মেডিকেল এসিস্টেন্ট প্রমুখ। খুব কম রোগীই ডিগ্রীধারী ডাক্তার ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে যান। শহরে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের যে সামান্য ব্যবস্থা রয়েছে গ্রামে তা একেবারেই আশা করা যায় না।
বাংলাদেশে বর্তমানে শ্বেতীর চিকিৎসা কয়েকভাবেই করা হয়ে থাকে। এগুলো হলো:-
১. স্বপ্নপ্রাপ্ত চিকিৎসা: আমাদের দেশের বেশিরভাগ রোগীই কুসংস্কারাচ্ছন্ন এবং এই চিকিৎসা গ্রহণে আগ্রহী। এ ব্যবস্থায় বিভিন্ন গাছ গাছড়ার উপাদানে তৈরী ঔষধ বা বিভিন্ন কেমিক্যালের মিশ্রন ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এর ফলে অবশ্য গায়ে ফোস্কা পড়া, আলসার সহ নানা উপসর্গ দেখা দিতে পারে। এমনকি কখনো কখনো স্থানটিতে পর্দা পড়ে আরো বেশি বিশ্রি আকার ধারণ করে।
২. কবিরাজী চিকিৎসা: আমাদের দেশে এই চিকিৎসা পদ্ধতি শ্বেতী রোগের দ্বিতীয় সর্বাধিক জনপ্রিয় পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত। বিভিন্ন ধরণের খাবার ও গায়ে লাগানো হারবারল ঔষধ এই চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কিন্ত এই চিকিৎসায় সাফল্য সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যায় না এবং প্রায়শই হতাশাব্যঞ্জক ফলাফল দেখা যায়।
৩. হোমিও চিকিৎসা: খুব সস্তা বা স্বল্প ব্যয়ে এই চিকিৎসাকে অত্যন্ত কার্যকর হিসেবে দাবি করা হলেও বাস্তবে এ ক্ষেত্রে সাফল্য এখনো ধারাবাহিকতাহীন।
৪. আধুনিক চিকিৎসা: বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ কোনো একক বা একাধিক ঔষধের সমন্বয়ে চিকিৎসা প্রদান করে থাকেন। কিন্ত এক্ষেত্রেও ফলাফল ধারাবাহিকতাহীন এবং ব্যর্থতার ভাগই বেশি। ফলে এই রোগ থেকে নিরাময়ের ব্যাপারে রোগীরা চূড়ান্তভাবে হতাশ হয়ে পড়ে। বর্তমানে চিকিৎসক, রোগী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে এমন ধারণা সৃষ্টি হয়েছে যে শ্বেতী রোগ নিরাময়যোগ্য কোনো রোগ নয়।
একজন মানুষের জন্মের পর কোনো জ্ঞাত কারণ ছাড়াই তার শরীরের বিভিন্ন স্থানের চামড়া সাদা হয়ে যাওয়াকেই শ্বেতী রোগ বলা হয়। শ্বেতী রোগের সাথে লিউকোডার্মার পার্থক্য রয়েছে। কারণ, লিউকোডার্মার চিকিৎসা পর‌্যায়ে এটি শতকরা ১০০ ভাগ নিরাময়যোগ্য। এখানে উদাহরণস্বরুপ বলা যায় যে, কারো শরীরের কোনো অংশ পুড়ে গিয়ে ঘা শুকানোর এক পর‌্যায়ে স্থানটি সাদা হয়ে যায়। এটিকে বলা হয় লিউকোডার্মা যা সহজে নিরাময়যোগ্য। এই রোগের কারণ জানা থাকায় সহজেই এর চিকিৎসা করা যায়। কিন্ত শ্বেতী রোগের নির্দিষ্ট কোনো কারণ জানা না থাকায় এর চিকিৎসাও খুব সহজ নয়।
শ্বেতী রোগের কারণ:
শ্বেতী রোগের প্রকৃত কারণ এখনো জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হয়ে থাকে যে, একাধিক কারণে এই রোগের সৃষ্টি হয়ে থাকে । অনেক বংশগত প্রবণতাও এ রোগের সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে বলে ধারণা করা হয়।